দুদক সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষের ভিডিও হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ
আগে ভাষা, তারপর আশা!
প্রবীর বিকাশ সরকার
অনেক বিদেশিই অভিযোগ-অনুযোগ করেন যে, জাপানকে তারা বুঝতে পারেন না। জাপানিদেরকে বুঝে ওঠা কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, যারা এমন কথা বলেন তারা তাদের দেশ বা জাতিকে বুঝতে পারেন কিনা সন্দেহ থেকেই যায়।
যে-কোনো সমাজ, যে-কোনো জাতিকে বুঝতে হলে সে-দেশে অন্ততপক্ষে দশটি বছর অবস্থান করতে হবে। সে-দেশের মানুষের ভাষাটা ভালো করে আয়ত্ব করতে হবে। কারণ ভাষাটা হচ্ছে ব্যারোমিটার, সেখানে সেই ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ, উষ্ণতা, কম্পন, রাগ-অনুরাগ, রুচিবোধ ইত্যাদি ধরা পড়ে। সেসব সচেতনভাবে পড়ে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ভাষা হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির ভেতরে প্রবেশের সদর দরজা। দরজার প্রধান প্রহরী হচ্ছে ভাষা। ভাষার পর সে দেশ বা জাতির চিরাচরিত স্বভাব, অভ্যেস, রীতিনীতি, আদর্শ, আচার-আচরণ এবং ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে বোঝা, অনুধাবন এবং সমীহ করার মধ্য দিয়ে সমঝোতা অর্জন করা যা পরোক্ষভাবে বসবাসের অনুমোদন পাওয়ার শর্ত।
আপনি ভাষা জানবেন না, জানার চেষ্টা করবেন না, সংস্কৃতি, আইন-কানুন মানবেন না তাহলে আপনি কীভাবে ভিন্ন একটি জাতির নাড়ির স্পন্দন বুঝতে সক্ষম হবেন! পৃথিবীর কোনো জাতিই শতভাগ নিষ্কলুষ নয়, নিখুঁত নয়, অবশ্যই দোষযুক্ত অপূর্ণতা বিদ্যমান। এবার সে যত উন্নত জাতিই হোক। এইজন্য জাতিগত তারতম্য ও ভেদাভেদ থাকবেই এবং সেটাই স্বাভাবিক। এক দেশের ভদ্রভাষা অন্য দেশে অভদ্রতার শামিল। এই বিষয়টি উদারভাবে গ্রহণ করতে হবে। কোনো-কোনো দেশ আবার একটু বেশিই ব্যতিক্রম। যেমন, জাপান, চীন, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম উল্লেখযোগ্য।
এইসব দেশগুলোর ভাষা ও সংস্কৃতি অন্যান্য বহু জাতির চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। রীতিনীতি ও আইন-কানুন অত্যন্ত কঠোর। ভাষার ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত রক্ষণশীল। ইংরেজিসহ প্রধান বিদেশি ভাষাগুলোকে আমলে নেয় না। যে-কারণে তারা উন্নতি করেছে অতিদ্রুত এবং খুবই পরিবর্তনশীল মনমানসিকতার অধিকারী। বাঙালির মতো না ঘরকা না ঘাটকা নয়। বাঙালি না জানে মাতৃভাষা, না জানে ইংরেজি। যার কারণে তার উন্নতি ঘটেনি বিগত শত বছরেও।
আমার সৌভাগ্য যে, জাপানি ভাষাটা আমি যতখানি আয়ত্ব করতে পেরেছি ততখানিই আমি সুফল অর্জন করতে পেরেছি। জাপানি ভাষা পৃথিবীর কঠিন ভাষাগুলোর অন্যতম প্রধান। জাপানি ভাষার উচ্চারণ সবচেয়ে দুরূহ। এই ভাষায় প্রতিশব্দের আধিক্যও বাংলা ভাষার মতোই। অঞ্চলগত কারণে ভাষার কথ্যরূপও বিভিন্ন। তবে প্রমিত জাপানি ভাষা জানা থাকলে সর্বত্রই অবাধে বিচরণ সম্ভব। জাপানিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কোনো বেগ পেতে হবে না। নিজের অধিকারও খাটানো সহজ।
আরও পড়ুন: সৈয়দ আশরাফ প্রসঙ্গ: আওয়ামী লীগের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়
জাপানে আমার বাঙালি বন্ধুর চেয়ে জাপানি বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীই অধিক। ভাষাটি জানার কারণে এমন কোনো জায়গা নেই আমি প্রবেশ করতে পারি না। সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি আমার জন্য হয়েছে, সেটা হলো তিন দশকের বেশি আমি সাধারণ জাপানিদের সঙ্গে মেলামেশা ও কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ফলে দেশটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে পেরেছি। জাপানের সাধারণ মানুষই জাপানের ইউনিক বা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জনক, ধারক ও বাহক। উচ্চকোটি সমাজ সেসব শখ হিসেবে চর্চা করে থাকে।
জাপানি সমাজ এই একুশ শতকেও নানা ক্ষেত্রে রক্ষণশীল। কিন্তু এই রক্ষণশীল মনোভাব ক্ষতিকারক কিছু নয়, বরং স্বজাতির প্রতি প্রেম, অনন্য সংস্কৃতি ও বংশপরম্পরাগত রীতিনীতি-ঐতিহ্য, জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমকে শ্রদ্ধাশীল, মর্যাদাসম্পন্ন এবং গতিশীল রাখার একটি প্যাশন মাত্র। যেকারণে জাপানিরা একাধারে যেমন অত্যাধুনিক তেমনি ঐতিহ্যপ্রেমী। এই স্বতন্ত্র ঐতিহ্যপ্রেমই জাপানিদেরকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে শতশত বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগের মধ্যেও। এটাই শিক্ষণীয় বাঙালির জন্য।
কিন্তু শেখাবে কে? কাকে শেখাবে? কীভাবে শেখাবে সেটাই প্রশ্ন।
লেখক: প্রবীর বিকাশ সরকার, ছড়াকার, উপন্যাসিক, গবেষক ও সম্পাদক।
news24bd.tv আহমেদ
পরবর্তী খবর
মন্তব্য