‘তিন বোতল ওষুধ খেয়ে বউ আর বাপের বাড়ি যায়নি’

‘তিন বোতল ওষুধ খেয়ে বউ আর বাপের বাড়ি যায়নি’

Other

কুমিল্লার রানীর দিঘীর পাড়ে জিলা স্কুলের হোস্টেলে থাকার সময় প্রায় বিকেলেই আমি টাউন হল মাঠে চলে যেতাম। সেখানে লিটন মিয়া নামক একজন ক্যানভাসার এতো মোহনীয়ভাবে তার রক্তশোধন ঔষধালয়ের ওষুধ বিক্রির ক্যানভাস করতো যে তা বারবারই শুনতে ইচ্ছা করতো।

তার একটা টেকনিক ছিল সে নিজের কিছু এজেন্ট শ্রোতাদের মধ্যে মিশিয়ে রাখতো। প্রায়ই সে বলতো  আগে যারা ওষুধ খেয়ে উপকার পেয়েছেন তারা হাত তুলেন।

যারা হাত তুলতো তাদের মধ্যে থেকে  দুতিনজনকে ডেকে মাইকের কাছে নিয়ে যেতো আর তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে বলতো।


আরও পড়ুন: সরকার কারা ডুবায় কীভাবে ডুবায়

মরদেহ পোড়ানোকালে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ল ছাদ, নিহত ১৯

আরও পড়ুন: ধর্ষকের গোপনাঙ্গ কাটার আইন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি

ওরা আমার বুক, গোপনাঙ্গ পুড়িয়ে দিয়েছে : সৌদি ফেরত তরুণী


কেউ বলতো সংসারটা ভেঙ্গেই যাচ্ছিলো, তিন বোতল এই ওষুধ খাবার কারণে বউ আর বাপের বাড়ি চলে যায়নি। কেউ বলতো দীর্ঘদিনের পেটব্যাথা, দুই বোতলেই শেষ, কেউ বলতো কত ডাক্তার যে দেখিয়েছি হাঁপানি ভালো করতে পারেনি, এক বোতল রক্তশোধন ওষুধ খেয়ে শ্বাসকষ্ট যে ছিল সেটাই ভুলে গেছি। ঠিক তারপরেই শুরু হতো ওষুধ বিক্রির ধুম।

আমারে দুই বোতল, আমারে তিন বোতল কাড়াকাড়ি লেগে যেতো। পুরো খেলাটাই হতো পাতানো ছকে।

ঠিক একই টেকনিক এখন অনেক ক্যানভাসার ব্যাবহার করছে। পার্থক্যটা শুধু ওরা মাঠে লেকচার দিতো, আর এরা দেয় ইউটিউবে। ওরা ছিল ময়লা জামা পরা মহল্লার টাউট টাইপের লোকজন, এরাও টাউট তবে ফিটফাট শিক্ষিত। ওদের ওষুধ ক্রেতারা ছিল আশেপাশের রিক্সা/ভ্যান/ঠেলা চালক আর এদের খদ্দেররা হলো ইন্টারনেট চালাতে পারা লোকজন। ওদের এজেন্টরা ছিল লুঙ্গি পড়া নিম্নবিত্তের লোকজন, এদের এজেন্টরা ব্যবসায়ী, ভুমিপতি, প্রিন্সিপাল এসব উচ্চমার্গীয় পরিচয়ে পরিচিত।

ওরা তাদের এজেন্টদের মাইকের সামনে নিয়ে যেত, আর এরা তাদের এজেন্টদের নিয়ে আসে ভিডিও ক্যামেরার সামনে।

আগে ওদের এজেন্টরা শ্রোতাদের মধ্যেই মিশে থাকতো ওষুধ খেয়ে উপকৃত হয়েছে ভান ধরে, আর এখনকার এজেন্টরা প্রশংসার ফুলঝুড়ি নিয়ে ফেসবুকে লুকিয়ে আছে নানা আইডি নিয়ে।

সেই রক্তশোধনের ক্রেতারা ভাবতো ‘দেখিনা এক বোতল খেয়ে’, আর এদের রোগীরা ভাবে ‘দেখিনা একবার গিয়ে’

news24bd.tv তৌহিদ