সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই বাংলাদেশের অসাধারণ একজন রাজনীতিবিদ। সততা, আদর্শ, বিনয় সব দিক থেকেই অসাধারণ। ক্ষমতায় গেলে অন্য প্রায় সবার সম্পদ যখন হু হু করে বাড়ে, তখন আপনারটাই শুধু কমেছে।
যেটুকু ছিল তাও বিলিয়ে দিয়ে সব সময় ডুবে থাকতেন বইয়ের মধ্যে।প্রিয় আশরাফ ভাই, বাংলাদেশের প্রথম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আপনি। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রায় এক দশক। পাঁচবারের এমপি আপনি, তিনবারের মন্ত্রী।
আশরাফ ভাই, মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আপনি যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। আজীবন মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা লালন করেছেন। সততা ও আদর্শের সাথে কোনরকম আপোষ করেননি। প্রতিক্রিয়াশীলতাকে কোন স্থান দেননি। অসাধারণ এক রাজনৈতিক আদর্শের পুরোপুরি চর্চা করে গেছেন। কিন্তু কোনদিন কাউকে অসম্মান করে কথা বলেননি। এমনকি বিরোধী দলকেও না।
প্রিয় আশরাফ ভাই, আপনি তখন জনপ্রশাসন মন্ত্রী। বিসিএস সংক্রান্ত একটা নিউজে আপনার বক্তব্য নেয়ার জন্য আপনার বেইলি রোডের বাসার সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম। সম্পাতক মতি ভাই সেদিন বলেছিলেন আপনার বক্তব্য নিতে হবে। সবাই জানে আপনার বক্তব্য পাওয়া কঠিন কাজ। এই জায়গা ওই জায়গা ঘুরে না পেয়ে অফিসার্স ক্লাবে গিয়েছিলাম। কারণ ময়মনসিংহ সমিতির একটা অনুষ্ঠানে আপনার সেখানে যাওয়ার কথা। অনুষ্ঠান শেষে আপনার কাছে প্রশ্নটা করেছিলাম। আপনি সেদিন আমার প্রশ্ন শুনলেও উত্তর না দিয়ে হেসে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি খুব অবাক হয়েছিলাম আপনি উত্তর না দিলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এই না হলে নেতা!
আশরাফ ভাই, আপনার সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশি শুনেছি প্রয়াত শাকিল ভাইয়ের কাছে। তিনি আপনার কথা বলতেন বলতেন অনেক বেশি। এ ছাড়াও আপনার অনেক গল্প শুনেছি সাবেক সহকর্মী প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি প্রিয় Jahangir Alam ভাইয়ের মুখে। গল্প শুনেছি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ভৈরবের Imranভাই ও সাংবাদিক Hasan Jahid Tusher তুষার ভাইয়ের কাছে যিনি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব। সবার কাছে গল্প শুনে প্রায়ই মনে হতো, যদি আপনার সঙ্গে কোন একদিন গল্প করে যদি কাটিয়ে দিতে পারতাম!
অাশরাফ ভাই, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর আপনাকে নিয়ে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম। তাতে বলেছিলাম, আমাদের রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মচারী, উন্নয়ন কর্মী, ব্যবসায়ী সব পেশার মানুষেরই সততা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, পেশাদারিত্ত্ব দিনকে দিন নামছে। কমতে কমতে এমন অবস্থা যে এখন আর অনুসরণ করার মতো খুব বেশি কাউকে পাওয়া যায় না। তবে এই নষ্ট সমাজেও আপনি সৈয়দ আশরাফের মতো মানুষ ছিলেন। কিন্তু খারাপ মানুষের চাপে আপনারা পিষ্ট। সমাজের চোখে আপনারা কখনো মাতাল, কখনো বোকা, কখনো ব্যর্থ কখনো আবেগি। তবে আপনাদের মতো বোকা আবেগিরা আছে বলেই এখনো এই দেশটা টিকে আছে। আমি চাই এই দেশে আরো দুই একজন সৈয়দ আশরাফের সংখ্যা বাড়ুক।
আশরাফ ভাই শুনে খুব ভালো লেগেছিল, আমার ফেসবুকের সেই লেখাটা আপনাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন আপনার বড় বোনের এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বন্ধু পলি আপা। সেই লেখা পড়ে হয়তো মুচকি হেসেছিলেন আপনি। কিন্তু সত্যি বলছি, এই দেশে আপনার মতো নেতা বিরল।
আশরাফ ভাই, ২০১৬ সালের কাউন্সিলের আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আপনাকে সরিয়ে দেয়া, এরপর দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে কোনটাই আমার ভালো লাগেনি। আমি বলবো আপনি কষ্ট পেয়েছিলেন ভীষণ কিন্তু হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছিলেন। তবে ভীষণ নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর স্ত্রীর মৃত্যু আপনাকে আরো নিঃসঙ্গ করল। সেই নিঃসঙ্গতা নিয়েই সবার অগোচরে চলে গেলেন দুই বছরে আগে আজকের দিনে।
আরও পড়ুন: সরকার কারা ডুবায় কীভাবে ডুবায়
মরদেহ পোড়ানোকালে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ল ছাদ, নিহত ১৯
আরও পড়ুন: ধর্ষকের গোপনাঙ্গ কাটার আইন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি
ওরা আমার বুক, গোপনাঙ্গ পুড়িয়ে দিয়েছে : সৌদি ফেরত তরুণী
আশরাফ ভাই, আজ আপনার মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু আপনি তো পঙ্গপালের মতো কর্মী রাখতেন না। তারাই আপনার কাছে থাকতেন যারা দলটাকে ভালোবাসতো। এই যে দেখেন আজকে আপনার মৃত্যুবার্ষিকী অথচ আপনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে না। আপনার স্মরণে বড় কোন অনুষ্ঠান চোখে পড়েনি। শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগের কোন কেন্দ্রীয় নেতা কবরে যাননি। অবশ্য কারও থাকা না থাকায় সৈয়দ আশরাফের কিছু যায় আসে না। বেঁচে থাকতেই তিনি এসব করেননি, দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর আর তার দরকার কী?
আশরাফ ভাই বনানী কবরস্থানে ফুল দিয়ে আজ সকালে শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনার বোন ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর বলেছেন, আগামী প্রজন্মের কাছে আমার এটাই আবেদন থাকবে যে, আমার ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই যেন সৎ ও আদর্শের রাজনীতি করে। এটাই আসলে জরুরী।
কিন্তু আপনার আদর্শ ছড়াবে কী করে? আপনাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোন আলোচনা অনুষ্ঠান আজ আছে কী না জানি না। আপনার আদর্শের চর্চার জন্য কী কী হয়েছে জানি না। অথচ আওয়ামী লীগটাকে দারুণভাবে অনুভব করতেন তিনি। আপনার আদর্শের চর্চা যে আসলেই জরুরী।
আশরাফ ভাই, আওয়ামী লীগের ২০১৬ সালের কাউন্সিলে আপনার বলা কথা গুলো আজও আমার কানে বাজে। আপনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ঘরে আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমারও কিন্তু হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একটা কর্মী যদি ব্যথা পায় সেই ব্যথা আমিও পাই। আপনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়। হাজারো শহীদের রক্ত, জাতির পিতার রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ। আওয়ামী লীগ একটা অনুভূতি।
প্রিয় আশরাফ ভাই, বুকের মধ্যে কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন ভাবে কথা বলা যায় সেটা অনেকেই বুঝবে না। আশরাফ ভাই, দোয়া করি ভালো থাকুন পরপারে। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ সবাইকে আল্লাহ ভালো রাখুন। আজকে দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আপনার মত রাজনীতিবিদকে স্যালুট।
news24bd.tv আয়শা