ধর্ষককে বিয়ে না করে  ইতিহাস গড়েছিলেন যে নারী

ছবির বামে ফ্রাঙ্কা ভিওলা ছবির ডানে শুনানী চলাকালে মেলোদিয়া

ধর্ষককে বিয়ে না করে ইতিহাস গড়েছিলেন যে নারী

অনলাইন ডেস্ক

ইতালির ফ্রাঙ্কা ভিওলা ইতিহাসের অন্যতম এক সাহসী নারী যার কথা আজও অনেকের কাছে অজানা। সেই সময়কার ইতালির আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিবাদের সুচনা করেছিলেন ফ্রাঙ্কা ভিওলা। ইতালিতে একসময় আইন ছিল যে ধর্ষক যদি তার হাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করে নেয়, তাহলে তার অপরাধ মাফ হয়ে যাবে! ফ্রাঙ্কা ভিওলা নিজে এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জঘন্য এই আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একাই, যার ফলে একসময় পরিবর্তন ঘটে এই আইনের।  

ইতালির সিসিলি দ্বীপের আলকামো শহরে ফ্রাঙ্কা ভিওলার জন্ম ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে।

তার বয়স যখন ১৫ বছর (১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ), তখন ফিলিপ্পো মেলোদিয়া নামে স্থানীয় এক মাফিয়া সদস্যের সাথে বাগদান হয় তার। তবে সেটা বিয়েতে রুপ নেবার আগেই চুরির দায়ে জেলে যায় মেলোদিয়া।

এরপর মেলোদিয়া চলে যায় জার্মানিতে। আর দু’বছর পর আরেক তরুণের সাথে ফ্রাঙ্কার বাগদান সম্পন্ন হয়।

কিন্তু এটা মেনে নিতে পারেনি তার সাবেক বর। অনেক চেষ্টা করেও যখন সাবেক বর ফ্রাঙ্কাকে  পুর্বের সম্পর্কে ফিরিয়ে  আনাতে  পারে নি। তখনই নিজের আসল রূপটা দেখিয়ে দিল মেলোদিয়া। অস্ত্রশস্ত্রসহ এক ডজন সঙ্গী নিয়ে ১৯৬৫-র ২৬ ডিসেম্বর মেয়েটিকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সে।  

টানা আট দিন ধরে মেয়েটির উপর চলে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, চলে ক্রমাগত ধর্ষণও। এই দিনগুলোতে মেলোদিয়া মাঝে মাঝেই খুব তৃপ্তি নিয়ে ফ্রাঙ্কাকে বলতো, তাকে বিয়ে করা ছাড়া ফ্রাঙ্কার আর কোনো উপায়ও নেই এখন, কারণ নাহলে লোকে তাকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলে ডাকবে। যতবার সে এই কথা বলতো, ততবারই ফ্রাঙ্কা প্রতিবাদ করেছে, জানিয়েছে মুক্তি পেলেই তাকে অপহরণ আর ধর্ষণের দায়ে জেলে পুরবার প্রতিজ্ঞার কথা, যার ফলস্বরুপ অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছিল।

অবশেষে ৩১ ডিসেম্বর ফ্রাঙ্কার বাবাকে ফোন করে মেলোদিয়া, উদ্দেশ্য দুই পক্ষ সমঝোতায় এসে ফ্রাঙ্কার সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করা। ফ্রাঙ্কার বাবা বার্নার্দো ভিওলা সামনাসামনি বিয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকলেও আড়ালে তিনি ঠিকই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন, যাতে মেলোদিয়ার একটা ব্যবস্থা করা যায়। ২ জানুয়ারি সাঙ্গোপাঙ্গোসহ ধরা পড়ে মেলোদিয়া, মুক্ত হয় ফ্রাঙ্কা। বাবা তাকে কেবল জিজ্ঞাসাই করেছিলেন সে মেলোদিয়াকে বিয়ে করতে চায় কি না।  

ফ্রাঙ্কা যখন দৃঢ়চিত্তে “না” বলে উঠল, তখন তিনিও বললেন, মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ও তার জন্য ন্যায্যবিচার আদায়ে তিনি কোনো কিছু করতেই বাকি রাখবেন না।


হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি ‘গোল্ডেন আওয়ার’রে

খাল দখলদার কেউ ছাড় পাবে না : মেয়র আতিকুল

জাহ্নবী-কার্তিক ছুটি কাটাচ্ছেন গোয়ায়


সে সময়ে ইতালির আইনেরও ঘুরিয়ে-পেচিয়ে দণ্ডবিধিতে এই বিষয়টিকে সমর্থন করেছিল,। দেশটির দণ্ডবিধির ৫৪৪ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণকে তখন ‘ব্যক্তির প্রতি অপরাধ’ হিসেবে না দেখে কেবল ‘নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ’ হিসেবেই দেখা হত। সেই সাথে ধর্ষক যদি ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করত, তাহলে বিধি অনুসারে তার ধর্ষণের অপরাধই মাফ হয়ে যেত!

গোটা ইতালির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় তখন ফ্রাঙ্কার এই কাহিনী, তার রুখে দাঁড়ানোর গল্প। মেলোদিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা তো নির্লজ্জভাবে দাবি করে বসে, ফ্রাঙ্কা আসলে অপহৃতই হয়নি, বরং সে আর মেলোদিয়া মিলে পরিকল্পনা করেই পালিয়েছিল, যাতে গোপনে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলা যায়!

ভাগ্য ভাল ছিল ফ্রাঙ্কার। এই কঠিন সময়ের পুরোটা জুড়ে পরিবারকে পাশে পেয়েছিল সে। তাই তো সব সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাইবাছাই শেষে আদালতের রায় যায় ফ্রাঙ্কার পক্ষেই। রায়ে মেলোদিয়াকে ১১ বছর আর তার সাত সহযোগীর প্রত্যেককে ৪ বছর করে সাজা দেয়া হয়। মেলোদিয়ার এই সাজা পরে অবশ্য ১ বছর কমিয়ে আনা হয়।

পুরো সাজা খেটে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় মেলোদিয়া। এরপর অবশ্য আর বেশিদিন বাঁচতে পারেনি সে। নিজের কৃতকর্মের ফলস্বরূপই যেন মুক্তি পাবার মাত্র দু’বছরের মাথায় গুলি খেয়ে মডেনার রাস্তায় কুকুরের মতো পড়ে থাকে সে।

ফ্রাঙ্কার জয় হলো, মেলোদিয়া মারা পড়লো, কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করলে ধর্ষকের মাফ পেয়ে যাবার আইন কিন্তু বাতিল হলো না। সেজন্য অপেক্ষা করা লেগেছিল ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। ওদিকে ধর্ষণকে ‘নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ’ বলেই পার পেয়ে যাবার যে বিধান, তারও বদল আসলো ১৯৯৬ সালে। ধর্ষণকে উল্লেখ করা হলো ‘ব্যক্তির প্রতি অপরাধ’ হিসেবেই।

news24bd.tv/আলী