আবুধাবিতে নির্মিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির

আবুধাবিতে নির্মিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির

Other

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিল্লির শ্রী অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম খোদাই পাথরের তৈরি বৃহত্তম ও পূর্ণাঙ্গ হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি আবুধাবিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার হাওয়া বইছে। এতোদিন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অমুসলিম ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর কোনো আইনি বৈধতা ছিলো না। প্রথা ভেঙে অমুসলিম ধর্মস্থানগুলোকে স্বীকৃতি দিতে দেশটির সরকার সেখানে মন্দির, গুরুদ্বার ও চার্চসহ বিভিন্ন ধর্মের ১৮টি প্রার্থনালয়কে লাইসেন্স দিয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংখ্যালঘু ধর্মস্থানগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে আবুধাবিতে শান্তি সহিষ্ণুতা এবং সহাবস্থানের পরিবেশ আরো জোরদার হবে বলে আশা করছেন তারা।

বন্দুকের ট্রিগারে ইরানি সেনাদের আঙুল : ইরান

বন্ধ হচ্ছে যুক্তরাজ্যে অ্যাপল বিক্রয়কেন্দ্র

একি করলেন তাসকিন

এলো ‘কেজিএফ : চ্যাপ্টার টু’র নতুন লুক

আগামী পাঁচ বছরে ইলিশ রপ্তানি যৌক্তিক হবে না : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

জানা যায়, আমিরাতে প্রায় ৩০ লাখ ভারতীয় বাস করেন। যা সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ।

দেশটির অর্থনীতিতে এই জনসংখ্যার বিরাট অবদান রয়েছে। বিশাল জনসংখ্যা সত্ত্বেও রাজধানী আবুধাবিতে কোনো হিন্দু মন্দির ছিলো না। অবশ্য দুবাইতে দুটি মন্দির ও একটি গুরুদ্বার রয়েছে। দুবাইয়ের প্রথম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। খুব ছোট পরিসরে। কিন্তু আবুধাবির স্থানীয় হিন্দুদের পূজা বা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে দুবাই যেতে হয়। এ জন্য তাদের প্রায় তিন ঘণ্টা দীর্ঘ ভ্রমণ করতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার এই মন্দিরের জন্য জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাঁর দ্বিতীয় সফরকালে দুবাই অপেরা হাউস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মন্দিরের শিলান্যাস বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় মন্দির ভবনের নকশাও উন্মোচন করেন তিনি। পরে এক সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এই মন্দির মধ্যপ্রাচ্যে মানবতা, সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিএপিএস স্বামী নারায়ণ সংস্থা এই মন্দিরের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে। নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবুধাবিতে বসবাসরত একজন প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যবসায়ী বিআর শেঠি। তিনি ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত এক্সচেঞ্জ’নামে একটি সংস্থার এমডি ও সিইও। ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই এই মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্দিরটি নির্মিত হচ্ছে ১৩.৫ একর বা ৫৫ হাজার বর্গমিটার জমিতে। আবুধাবি থেকে ৩০ মিনিট দূরে আবু মুরেইখা নামক স্থানে। দুবাই-আবুধাবি সড়কের পাশে। এর নির্মাণে ব্যবহৃত বেলে পাথরগুলো ভারতের মন্দির শিল্পীদের দিয়ে খোদাই করে আমিরাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই মন্দিরে থাকবে শিব, কৃষ্ণ ও আইয়াপ্পার মূর্তি। আইয়াপ্পাকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয়। কেরালায় তাঁর পূজা করা হয়। এছাড়া মন্দিরে স্থাপন করা হবে ২ হাজারেরও বেশি শিল্পকর্ম।

মন্দিরটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতিটি প্রদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সাতটি সূচাগ্র চুড়া বা স্পায়ার থাকবে। থাকবে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ছয়টি অলংকৃত গম্বুজ। এছাড়া এই মন্দির কমপ্লেক্সটির সামনে একটি সুন্দর উদ্যান ও একটি মনোমুগ্ধকর জলের ফুয়ারা থাকবে। এই মন্দির কমপ্লেক্সে থাকবে পর্যটন কেন্দ্র. প্রার্থনা হল, প্রদর্শনী ও শিশুদের খেলার ক্ষেত্র, সুপরিসর উদ্যান, পাঠাগার, নিরামিষ খাবার কোর্ট, বই ও উপহার সামগ্রীর দোকান ইত্যাদি।

ভারতের চিরাচরিত মন্দির নির্মাণের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্য বজায় রেখে ভারী পাথর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ মন্দিরটি। নির্মাণে ইস্পাত বা লোহা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে ভিত্তি শক্তিশালী করতে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্লাই অ্যাশ কংক্রিটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বাড়ায়। মন্দিরে ভিতের জন্য প্রায় ৩০০০ ঘনমিটার ফ্লাই অ্যাশ কংক্রিট ঢালা হয়।
ভারতে ৩ হাজার কারিগর ৫ হাজার টন ইতালিয়ান মার্বেলের মধ্যে মন্দিরটি তৈরির জন্য রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। রাজস্থান ও গুজরাট থেকে আনা পাথর খোদাই করে নকশা করছেন কারিগররা। মন্দিরের বাইরের অংশে ১২,২৫০ টন গালাপী বেলেপাথরের কারুকার্য থাকবে।

ভারতীয় হিন্দুদের কাছে প্রার্থনার বিশেষ শক্তি রয়েছে, যার গল্প বেশ পুরনো। এই গল্পই আঁকা হচ্ছে কঠিন পাথরের বুকে খোদাই করে। কারিগররা মহাভারত, রামায়ণ ও পুরাণের বিভিন্ন ইতিহাস সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলছেন। এছাড়া, ভারতীয় সংস্কৃতিও তাদের নকশায় উঠে আসছে। খিলান ও গম্বুজগুলোতে খোদাই করা ময়ূর, হাতি, উট, গাছপালা, ফুলসহ ঐতিহাসিক নকশাগুলো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে।

হারুন আল নাসিফ: কবি, ছাড়াকার, সাংবাদিক।

news24bd.tv/আলী