সাতক্ষীরায় শীতে দুর্ভোগ চরমে, বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

সাতক্ষীরায় শীতে দুর্ভোগ চরমে, বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

Other

সাতক্ষীরায় গত কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশ।

জেলার আম্ফান আক্রান্ত নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবন কাটছে বড়ই দুর্ভোগে। বিশেষ করে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার আম্ফান কবলিত কয়েকটি ইউনিয়নের এখনো অধিকাংশ পরিবার বাস করছে বেড়ি বাঁধের উপর। কোন রকম পলিথিন ও চটের বস্তা টানিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছে তারা।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের  চাকলা,রুহিয়ার বিল,কুড়িকাউনিয়া,কল্যানপুর এলাকার ৩৫০টির বেশি পরিবারের প্রায় ২৫ হাজারের মতো লোক বাস করছে ভেড়ি বাঁধের উপর।

আর অধিকাংশ পরিবার আম্ফান পরবর্তী সময়ে ভিটে বাড়ি ছেড়ে সাতক্ষীরা শহরে এসে কোনরকমে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে জীবন নির্বাহ করছে। এসকল এলাকায় যেয়ে সর্বত্র  চোখে পড়ে মানুষের জীবন যাত্রার এমন দূর্দশার চিত্র। এ যেন দেখার কেউ নেই। সবচেয়ে বেশি অসহায় শিশু ও বয়স্করা।

প্রতাপনগর গ্রামের শাহেব আলীর (৬০) পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঝে মাঝে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও কিছু  জনপ্রতিনিধিরা হঠাৎ হঠাৎ এসে কোন রকম একটা কম্বল বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তির গায়ে পেচিয়ে দিয়ে অথবা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ফটো তুলে নিয়ে তারা চলে যায়। ঘরে ফেরা ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা জিজ্ঞেস করলেই শুধু একটায় উত্তর খুব শিগগিরিই কাজ হবে।  

কুড়িকাউনি গ্রামের ইয়াকুব আলী (৪৫) বলেন বর্ষা গেল পানিবন্দি জীবন পার করলাম শীতেও বেড়ি বাঁধে বসবাস করছি। গৃহপালিত পশু, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের সবকিছু পানিতে তলিয়ে আছে। স্থায়ী বেড়ি বাঁধ নির্মাণের জন্য আর কত অপেক্ষা করে কষ্ট সহ্য করতে হবে আমাদের। ভিটে বাড়ি ছেড়ে আর কত দিন এ ভাবেই ভেড়ি বাধের উপর কষ্টে থাকতে হবে ? শীতে মানবেতর ভাবে কষ্ট ভোগ করছে সাতক্ষীরার আম্ফান কবলিত উপকুলীয় আশাশুনি ও  শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।   

প্রচণ্ড ঠান্ডায় ভিড় বাড়ছে হাসপাতাল গুলোতে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ কুদরত ই খুদা বলেন ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু রোগীর সংখ্যা  যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। শ্বাসকষ্ট, কোল্ড ডাইরিয়া,সাথে দেখা দিচ্ছে ত্বকের সমস্যা। গত ২০ ডিসেম্বর  ভর্তিকৃত শিশু রোগীর ৪০ জনের মধ্যে ১৫ জন, বয়স্ক রোগীর ১৩০জনের মধ্যে ৩০জন শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন। এছাড়া প্রতিদিনই  শীতের তীব্রতায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গরম কাপড়ের অভাবে ছিন্নমূল, গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষরা কাজে বের হতে পারছে না। অনেকেই টুপি, মাফলার ওচাদর মুড়ি দিয়ে বাইরে বের হচ্ছে। কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তায় হেড লাইট জালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। শীত জনিত রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকাতেও  তাছাড়া গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি ও অন্যান্যরা।


আরও পড়ুন: দুর্নীতির কারণেই ২ ডলারের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সাড়ে ৪ ডলার: ডা. জাফরুল্লাহ


ভিড় বেড়েছে শহরের হকার্স মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে। স্বল্প দামে শীতের কাপড় কেনার জন্য  নিম্নআয়ের মানুষরা এসব দোকানেই বেশী ভিড় করছেন।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলি বলেন বিকাল থেকে শুরু হয়ে বেলা উঠার আগ পর্যন্ত হালকা থেকে  মাঝারি কুয়াশাসহ আগামী ৩ দিন তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও হিমেল হওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশী।

সাতক্ষীরা বিনেরপোতা গুচ্ছ গ্রামের বৃদ্ধা সেলিনা বেগম বলেন, শীতের কারণে টিনের ঝুপড়ির ঘরে থাকতে পারছি না। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছি।

news24bd.tv আহমেদ