বিয়ে গোপন করে একাধিক সম্পর্ক, খুনের ৯ বছর পর ধরা প্রেমিকা

বিয়ে গোপন করে একাধিক সম্পর্ক, খুনের ৯ বছর পর ধরা প্রেমিকা

অনলাইন ডেস্ক

মরদেহটা পড়েছিল রাস্তার পাশে। প্রথমে মনে হয়েছিল দুর্ঘটনা। পরে তদন্তে জানা গেল গুলি করে হত্যা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধা খুনের সেই ঘটনার নয় বছর পর সোমবার (৪ জানুয়ারি) গ্রেফতার করা হলো তারই বান্ধবী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে।

এরপরই সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালে ফেসবুকে জুনিয়রের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর। মডেল বলে নিজের পরিচয় দেন প্রিয়াঙ্কা। তবে, টলিউডের সিনেমা বা সিরিয়াল কোনো ক্ষেত্রেই প্রিয়াঙ্কার কোনো পরিচয় নেই।

কিন্তু অনেক টলি পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

ফেসবুকে পরিচয় গভীর হওয়ার পরই জুনিয়রের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা। অংশ নিতে থাকেন জুনিয়রের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও। পুলিশের দাবি, জুনিয়রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়েই আরও একাধিক সম্পর্কে জড়ান প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়াঙ্কা তখন মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন এক কর্মকর্তা অর্থাৎ শিল্পপতির পুত্রবধূ। কিন্তু জুনিয়র বা তার পরিবারের কাছে নিজের বিবাহিত পরিচয় পুরোপুরি গোপন করেন তিনি।

প্রিয়াঙ্কা এবং জুনিয়রের সম্পর্ককে বিয়েতে পরিণত করে দিতে আপত্তি ছিল না জুনিয়রের পরিবারের। দুজনের বিয়ের পরিকল্পনাও প্রায় শেষ করে ফেলেছিলেন জুনিয়রের অভিভাবকরা। কিন্তু মোবাইলের কল রেকর্ড দেখে এবং প্রিয়াঙ্কার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল টলিপাড়ার বেশ কয়েক জনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। জুনিয়রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন এবং তার খুনের পরও সে সম্পর্ক ছিল।

জুনিয়রের পরিবারের দাবি, বিয়ের পরিকল্পনার সময়ই টলিউডের এক উঠতি প্রযোজকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি গোপন রেখেই জুনিয়রের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতেন। তবে পরে বিষয়টি জানাজানি হয়।

জুনিয়র খুন হওয়ার কয়েক মাস আগে হঠাৎ প্রিয়াঙ্কার বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন জুনিয়রের পরিবার। একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শোতে শাঁখা-সিঁদুর পরা প্রিয়াঙ্কাকে দেখে অবাক হয়ে যান তারা। ওই অনুষ্ঠানে নিজের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে কথা বলছিলেন প্রিয়াঙ্কা। ওই ঘটনার পর জুনিয়রের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা।

তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, ২০১১ সালের ১২ জুলাই জুনিয়রের মৃতদেহ উদ্ধারের দিন তার সঙ্গে ২১ বার কথা হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার। কথা হয়েছিল খুন হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও। আবার ওই দিনই টালিগঞ্জের একাধিক প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার প্রায় ২০০ বার কথা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে জুনিয়র হত্যার তদন্তভার নেয় সিবিআই। প্রিয়াঙ্কার কল রেকর্ড পরীক্ষা করে এই মামলায় বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে বলে জানান তদন্তকারীরা। খুনের দিন এত বার ফোনের বিষয়টা সন্দেহ বাড়িয়ে দেয় তদন্তকারীদের মনে।

পরে, প্রিয়াঙ্কাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। তবে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। গত রোববার তৃতীয়বার সিবিআই অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কলকাতার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে জুনিয়রের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেই খুনে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আরও দুই বা তিনজন জড়িত থাকতে পারে বলেও মনে করছে তদন্তকারীরা। এখন প্রিয়াঙ্কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই সন্দেহের জট খুলতে চাইছে সিবিআই।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

news24bd.tv তৌহিদ