দুঃখ

দুঃখ

Other

ছোট দুই ভাইয়ের কাছে ও হাসপাতালে খোঁজ রাখতাম। সম্ভাব্য দুঃসংবাদটা প্রাণপণে মনের বাইরে ঠেলে দিতে চাইতাম। কিন্তু জানতেই হলো সন্ধ্যায় আনিসুলের পোস্টে। সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান নেই।

করোনা মহামারির আরেক মরণঘাতী ছোবল।

মিজানের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় ১৬ বছর আগে দৈনিক সমকাল প্রকাশের প্রস্তুতিপর্বে। আমরা দুজনই উপ-সম্পাদক। ভাগাভাগি করে বিভিন্ন বিভাগের প্রস্তুতির অনেক কাজ একসঙ্গে করেছি।

কাগজ বের হলে মিজান নিজের লেখা নিজে টাইপ না করে কিছুটা তারস্বরে ডিকটেশন দিতেন একজন অপারেটরকে ডেস্কটপে পাশে বসিয়ে। পাশের ঘর থেকেও শোনা যেতো। আমরা একটু বিরক্তও হতাম। কিন্তু মিজান ছিলেন কর্মনিষ্ঠ।
দু' বছরের মাথায় মিজান সমকাল ছেড়ে প্রথম আলোয় যোগ দিলেন। আমি আগে ছিলাম প্রথম আলোয় উপ-সম্পাদক। আরও বছর দুয়েক পরে আমিও সমকাল ছেড়ে গেলাম। প্রথম আলোয় মিজানের প্রতিভা অনেক স্ফূরিত হলো, বিশেষত সংবিধান, আইন, আদালত সংক্রান্ত তথ্যবহুল বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্টিং, উপসম্পাদকীয় লেখা, অনুসন্ধান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পররাষ্ট্র দফতরের আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নিয়ে গবেষণা প্রভৃতিতে। উঠেছিলেন যুগ্মসম্পাদক পদমর্যাদায়। আমাদের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কখনও ক্ষুণ্ণ হয়নি। আমরা ফোনে কথা বলতাম তথ্য নিয়ে, ঘটনা নিয়ে, ব্যাখ্যা নিয়ে। দেখা হতো খুব কম। কর্মস্থল ভিন্ন হওয়ার অনেকগুলো বছর পরে একবার তিনি আদালত অবমাননার মামলায় সমন পেলেন। আমি হাইকোর্টে গিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে শুনানি শুনলাম। আমাকে দেখেছিলেন। কাঠগড়া থেকে নেমে আমায়িক হাসিতে বিগলিত হয়ে এগিয়ে এসে হাত ধরে বিস্ময়মাখা সুরে বললেন, আপনি এসেছেন!

যে ক'জন সহকর্মীকে গভীরভাবে মনে রাখবো তাদের মধ্যে মিজান অন্যতম।

মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু: সিনিয়র সাংবাদিক

news24bd.tv তৌহিদ