‘গ্রুপ টর্চারে’ মারা গেছে আনুশকা: দাবি পরিবারের

‘গ্রুপ টর্চারে’ মারা গেছে আনুশকা: দাবি পরিবারের

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলশিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহানের স্বীকারোক্তি নিয়ে সন্দিহান নিহতের পরিবার।  

আনুশকার পরিবার বলছেন, শুরু থেকেই আসল সত্য লুকানোর অপচেষ্টা করে আসছে দিহান। এ ঘটনায় শুধু দিহান নয়; তার আরও তিন বন্ধু জড়িত ছিল। 'গ্রুপ টর্চারে' মারা গেছে মাস্টারমাইন্ডের 'ও' লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা।

এখন দিহানের তিন বন্ধুকেও আসামি করতে চায় নিহতের পরিবার। পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সংশ্নিষ্টতার তথ্য না পেয়ে দিহানের তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আনুশকার মা শাহানুরী গতকাল বলেন, ঘটনার সময় দিহানসহ চারজন ছিল। ঘটনা শুনে হাসপাতালে যাওয়ার পর দিহানের কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, চার বন্ধু তার বাসায় ছিল।

দিহানকে আগে থেকে চিনতাম না। ওই দিন ফোন করে সে তার পরিচয় দিয়েছিল।

আনুশকা হত্যা: দারোয়ানের বর্ণনায় সেদিনের ঘটনা

গোসলের দৃশ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ

 

তিনি আরও বলেন, বন্ধুদের অপরাধ আড়াল করতে একাই দায় মাথায় নিয়েছে দিহান। হয়তো ওরা জোর করেই আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালায়। কিছু খাইয়ে ওকে অচেতন করা হতে পারে। ঘটনার পর আমার মেয়ের পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। প্রভাবশালী হওয়ায় তিন বন্ধু পার পাচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

স্কুলশিক্ষার্থীর মা আরও বলেন, ঘটনা শুনে হাসপাতালে যাওয়ার পরই দিহান আমার পা জড়িয়ে ধরে। সে বলতে থাকে- 'আমাকে বাঁচান। ' তিনি বলেন, পুলিশের পরামর্শে তারা মামলায় একজনকে আসামি করেছেন। এখন দিহানের আরও তিন বন্ধুকে আসামি করতে চান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার মেয়েকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। এখন উল্টো অনেকে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করছে।

এদিকে দিহানের বাসার নিরাপত্তারক্ষী দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণের পর ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে দুলাল আত্মগোপনে ছিল।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দারোয়ানকে হেফাজতে নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে পরে জানানো হবে।  

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দারোয়ান দুলাল জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা অথবা সাড়ে ১১টার দিকে একজন মেয়ে আসে পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টে। দিহান দোতালার ডি-২ ফ্ল্যাট থেকে নিজেই নেমে এসে ওই মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। তবে ওই মেয়ে প্রবেশের বিষয়ে তিনি রেজিস্ট্রার বইয়ে কোনো তথ্য লেখেননি বলে জানান দুলাল।  
 
দুলাল আরো জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১টা অথবা সোয়া ১টার দিকে দিহান ওই মেয়েটিকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির পিছনের সিটে তোলেন। এরপর দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ভয় পেয়ে যান। এ কারণে তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালিয়ে যান।  

নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আবুল হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ঘটনাস্থলে দিহানের তিন বন্ধু ছিল না।

বৃহস্পতিবার আনুশকাকে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ সময় তার বন্ধু দিহান, আলভী মাহমুদ, হেমায়েত মিল্ক্কীসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। কলাবাগান থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দিহান ছাড়া অন্য তিনজনকে ছেড়ে দেয়।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলছেন, 'মেয়েটি বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ যৌনাচারের শিকার হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। ' এর পরই স্বজনরা প্রশ্ন তুলছেন, চিকিৎসকের বিবরণ অনুযায়ী এমন বর্বরোচিত পাশবিকতা একজনের পক্ষে করা সম্ভব কিনা? পুলিশের কাছে অপরাধের দায় স্বীকারের পর আদালতে এরই মধ্যে জবানবন্দি দিয়েছে দিহান।

news24bd.tv/আলী