যে নামাজ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বিশ্বনবী

যে নামাজ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বিশ্বনবী

অনলাইন ডেস্ক

প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর জন্য নামাজ ফরজ ইবাদত। ফরজ নামাজ ছাড়াও মুমিন মুসলমান সুন্নাত নামাজ আদায় করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে এ নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তবে ফজরের ফরজ নামাজের আগে সুন্নাত নামাজ পড়ার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।

এ সুন্নাত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

ফজরের সুন্নাত নামাজ

ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে হাদিসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ ফজিলত। বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) নামাজে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, অন্য কোনো নফল (সুন্নাত) নামাজে তা দেননি।

 

হাদিসে আরও এসেছে - হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এ দুই রাকাআত (সুন্নাত) কখনো ত্যাগ করো না, যদিও শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করে। ’ (আবু দাউদ)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। ’ (মুসলিম)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তোমরা ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত)-এর ব্যাপারে পুরোপুরি যত্নবান হও। কারণ তা ফজিলতপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। ' (মুসনাদে আহমাদ)

এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িগণ ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেছেন। এমনকি অনেক বুজুর্গানে দ্বীন ফজরের জামাআত শুরু হওয়ার পরও আগে সুন্নাত আদায় করেছেন তারপর ফজরের জামাআতে অংশগ্রহণ করেছেন।  

হাদিসে এসেছে - হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, (কূফার গভর্নর) সায়িদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ফজরের নামাজের আগে ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন। (শরহু মাআনিল আসার)

হজরত আবু উবায়দুল্লাহ হতে বর্ণিত, হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো মসজিদে এসে দেখতেন, ফজরের জামাআত চলছে। তিনি মসজিদের এক কোণায় (ফজরের) দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। (শরহু মাআনিল আসার)

ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে পাকে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত ফজর নামাজের আগেই সুন্নাত যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তা আদায় করা। তবে ফরজ নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়ার আগে নিজ ঘরে এ সুন্নাত পড়াই উত্তম। আবার জামাআত শুরু হোক কিংবা না হোক সুন্নাত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মসজিদের বাহিরের অংশে পড়া কিংবা জামাআতের কাতার থেকে দূরে পড়া উত্তম। তা হতে পারে বারান্দা কিংবা খুঁটির আড়ালে।


আরও পড়ুন: সূরা আল-মূলকের গুরুত্ব ও ফজিলত


কোনো কারণে যদি এমন হয় যে-

ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে কিংবা জামাআত শুরু হয়ে গেছে; সে ক্ষেত্রে ফজরের সুন্নাত নামাজ ছাড়া অন্য সুন্নাত হলে তা না পড়ে জামাআতে শরিক হওয়া জরুরি। আর যদি ফজরের সুন্নাত নামাজ হয় তখন দেখতে হবে, সুন্নাত পড়ে জামাআত পাওয়া যাবে কিনা। যদি মনে হয় যে সুন্নাত পড়েও জামাআত পাওয়া যাবে তবে ফজরে সুন্নাত নামাজ পড়ে নেয়া উত্তম।

তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে-

জামাআতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো এবং তাকবিরে উলা তথা প্রথম তাকবিরসহ জামাআতে অংশগ্রহণের ফজিলতও অনেক বেশি। তাই ফজরের সুন্নাত নামাজ ধীরস্থিরভাবে আদায়ের জন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। অথবা বাসা কিংবা ঘর থেকে সুন্নাত পড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়াই উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের সুন্নাত নামাজ যথাযথভাবে নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। ফজরের সুন্নাত আদায়ের পর তাকবিরা উলার সঙ্গে ফজরের জামাআতে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv আহমেদ