স্মার্টফোনের নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ

স্মার্টফোনের নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ

অনলাইন ডেস্ক

আমাদের স্মার্টফোনে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ভাইবারের মতো মেসেজিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে পাঠানো বার্তা কিংবা ফোন কলে গোপনীয়তা কতটুকু রক্ষা হয়? তা নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে শঙ্খা ছিলোই।   হোয়াটসঅ্যাপের গোপনীয়তা নীতিমালায় পরিবর্তনের ঘোষণার মধ্যে দিয়েই সেই শঙ্খা আরও বাড়ল। হোয়াটসঅ্যাপের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসার পর বিশ্বজুড়ে বিকল্প নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপের অনুসন্ধান বেড়েছে। অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে টেলিগ্রাম ও সিগন্যাল অ্যাপ ব্যবহার শুরু করেছেন।

নিরাপত্তা গবেষকদের ভাষ্যে, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালুর পর থেকে গোপনীয়তা ইস্যুতে বেশির ভাগ মেসেজিং অ্যাপকে নিরাপদ মনে করা হয়। এনক্রিপশন প্রযুক্তি সংবলিত অ্যাপের মাধ্যমে বার্তা বা কল করার অর্থ হলো যে বার্তা পাঠাচ্ছেন এবং যাকে পাঠানো হচ্ছে, সে ছাড়া অন্য কেউ পাঠানো বার্তার পূর্ণরূপ দেখতে পারবেন না। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এনক্রিপশন প্রযুক্তি সংযোজনের পরও এর আগে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

এনক্রিপ্টেড হওয়ার পরও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোন অপারেটিং সিস্টেম প্লাটফর্মের স্মার্টফোনে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে।

এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপগুলো অ্যাপলের আইওএস প্লাটফর্মের ডিভাইসে তুলনামূলক বেশি নিরাপদ। কারণ হলো অ্যাপলের আইওএস প্লাটফর্মের বিল্টইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। আইফোন বা অন্য কোনো আইওএস ডিভাইসে কৌশলে ক্ষতিকর অ্যাপ প্রবেশ করিয়ে ব্যবহারকারীর মেসেজ বা ফোন কলের তথ্য হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না।

অন্যদিকে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের বিল্টইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। যে কারণে এনক্রিপ্টেড হলেও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম কিংবা সিগন্যাল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়।

এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির মোবাইল থ্রেট গবেষক ভিক্টর চেবিশেভ বলেন, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম প্লাটফর্ম। বিশেষত, নিরাপত্তা ইস্যুতে এ দুই প্লাটফর্মে সম্পূর্ণ পৃথক স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়। যে কারণে এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তি সংবলিত হলেও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহূত অ্যাপের তথ্য বেহাত হতে পারে। কিন্তু আইওএসের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

ইন্টারনেটভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারে কীভাবে নিরাপদ থাকা যেতে পারে? ক্যাসপারস্কি বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো অফিশিয়াল মার্কেটপ্লেস ব্যাতীত তৃতীয় পক্ষের কোনো সোর্স থেকে মেসেঞ্জার কিংবা অন্যান্য অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। যদি সম্ভব হয় কাঙ্ক্ষিত অ্যাপের ইউজার অ্যাগ্রিমেন্ট ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। যেখানে স্পষ্ট হওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত অ্যাপ তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে ব্যবহারকারীর তথ্য বিনিময় করে কিংবা ভবিষ্যতে করবে কিনা। পরিচিত কোনো বন্ধ পাঠালেও সন্দেহজনক লিংক ওপেন করা এড়িয়ে চলতে হবে। পার্সোনাল কম্পিউটারের (পিসি) মতো মোবাইল ডিভাইসেও নিরাপত্তা সলিউশন ব্যবহার করতে হবে। ডাউনলোডের আগে ভালোভাবে খেয়াল করুন কোন ধরনের তথ্যে কাঙ্ক্ষিত অ্যাপ প্রবেশাধিকার চাচ্ছে। যদি কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই অ্যাপ ডাউনলোডের সুযোগ দেয়, তবে বুঝতে হবে কোনো ঝামেলা আছে।

এদিকে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে তুর্কি বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপ বিআইপি (BiP) তে যোগদানের হিড়িক চলছে। হোয়াটসঅ্যাপ নিজেদের প্রাইভেসি পলিসিতে বিতর্কিত পরিবর্তন আনার পর থেকেই তুরস্কের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপীই নতুন নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে তুর্কি বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপ বিআইপি (BiP) অ্যাপটির। বিশেষত মুসলিম বিশ্বের ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বিআইপি।

নিরাপদভাবে বার্তা আদান-প্রদানকারী অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তুরস্কের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় টেলিকম সংস্থা ‘তুর্কসেল’। বিআইপি ২০১৩ সালে চালু হয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে ১৯২টি দেশে বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

news24bd.tv /আলী