প্রচারণা ও একটি দেশের অস্তিত্ব

প্রচারণা ও একটি দেশের অস্তিত্ব

Other

ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা শুনে আসছি। বুঝেছি এই দেশটি নিম্নমেধার মানুষদের পচে গলে মরার জন্য তৈরি হয়েছে। যেহেতু খুবই সাধারণ মেধার মানুষ ছিলাম, তাই বিদেশ যাওয়ার সাহস করিনি। ফলে ৪ দশক কাটিয়ে দিলাম নৈরাশ্যবাদীদের ‘ভাগাড়ে’।

না, কথাটা একটু অন্যভাবে বলি। বিদেশের প্রতি মোহ কেটে গিয়েছিল হুমায়ুন আহমেদ ‘যশোহা বৃক্ষের দেশ’ পড়ার পর। সেখানে যেভাবে নগ্ন হয়ে মেয়েদের ঘুরে বেড়ানোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে, অপরাধপ্রবণতার কথা লেখা হয়েছে- তাতে আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে যাই।

সেই কৈশোরে আমি অবাক হয়ে ভেবেছি, কিসের মোহে লোকজন ওই দেশে যায়।

মাত্র ৭০ পৃষ্ঠার একটা বই একজন কিশোরের মনে এমন গভীর রেখাপাত করতে পারে, এখন ভাবলে অবাক হই।

আমার পিতামাতা সিলেটের মানুষ। তাই লন্ডনী বা প্রবাসীদের দেখা আমি শৈশব থেকে পেয়েছি। শুনেছি তাদের রবটের মতো জীবনযাপন। অনেককে দেখতাম দেশে এলে বিভিন্ন চিকিৎসা করাতে।

এতে নাকি খরচ সাশ্রয় হয়। অনেকে যাওয়ার সময় লাগেজ ভর্তি কাপড় জুতো নিয়ে যায়। তখন ভাবী কিসের মোহে ওরা বিদেশ বিভুঁই পড়ে আছে?

তখন পরিবারের মানুষজনই বলে, নিরাপত্তা রে নিরাপত্তা।

কিন্তু আজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে দেখা যাবে ক্রাইম রেট বাংলাদেশে কম। এতো জনঘনত্বের দেশে অপরাধপ্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে কম।
 
আগে দু’দিন পর পর পত্রিকায় লেখা হত বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ। এখন আর লিখে না তেমন। বাংলাদেশ ঋণগ্রস্ত দেশের তালিকায় ৬৯ তম। আর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শুনবেন, এক!

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সবই ভালো লাগে আমাদের। আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ি সে দেশে যেতে। সামাজিক ‘অনাচার’ নিয়ে যতই শূচিবায়ু থাকুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে কোন দ্বিধা নেই। এটাই বাস্তবতা।

এই মোহ’র জন্ম হলো কি করে একটু ভাবুন। এই মোহ মূলত সাংস্কৃতিক। হলিউডের ভোগবাদী জীবন আমাদের আকৃষ্ট করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের যে ঝা তকতকে দৃশ্য দেখা যায়, তা আমাদের আকৃষ্ট করছে।


কাশ্মীরে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, ভারতীয় পাইলট নিহত

জ্যাক মা’র প্রতি মিনিটের দাম কত জানেন?


অথচ আমরা ভাবি না, এই ঝা তকতকে দেশটা আমাদের কোন কালই হবে না। সেদেশে আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকব। যে ভোগের ছড়াছড়ি দেখানো হয়, সেও আমাদের জন্য নয়।  

একটি দেশকে যত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়, তার উপর নির্ভর করে সেদেশটির প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ। যত নেতিবাচক কথা বলবেন, সেদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তত হতাশ হবে।

নিজের দেশকে নিয়ে আর কোন স্বপ্ন দেখবে না। স্বপ্নহীনতার মতো ভয়াবহ বিপর্যয় আর কিছু হতে পারে না।

দলে দলে মেধাবী ও অবস্থাপন্নরা দেশ ছেড়ে পালাবে। আজ মেধাপাচার আর অর্থপাচারের মূল ভিত্তি কিন্তু এই নেতিবাচক প্রচার আর নৈরাশ্যবাদ। এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে কাজ করি তো, তাই পজেটিভ চিন্তার আবশ্যকতা টের পাই। তাই আমি পজেটিভ বাংলাদেশের কথা বলি।

জয়দীপ দে শাপলু

news24bd.tv আয়শা