এমপি মানবপাচারকারী -এটা দেশের জন্য ভালো না

এমপি মানবপাচারকারী -এটা দেশের জন্য ভালো না

Other

শিক্ষাগত যোগ্যতা, চারিত্রিক শুদ্ধতা, জন সংশ্লিষ্টতা, জনগণের জন্য তাদের টান বিবেচনা করে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া বাঞ্ছনীয়। দীর্ঘকাল ধরে দেখেছি, যারা জনসংশ্লিষ্ট, পড়াশোনা জানেন, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাদেরকে নমিনেশন দেওয়া হয়, তারাই নির্বাচিত হন এবং দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ড করেন। এখন অনেক দিন ধরেই দেশের ভেতরে অবক্ষয়  চলছে  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, বিচারবিভাগে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজনীতিতে দুবৃত্তায়ন দেখছি, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোতে দুবৃত্তায়ণ হচ্ছে।

সংসদেও দৃবৃত্তায়ণ ও বাণিজিকীকরণ দেখা যাচ্ছে। সংসদে এখন শতকরা ৬৫ ভাগ এমপি ব্যবসায়ী। ব্যবসা হচ্ছে তাদের মূল পেশা, রাজনীতি হচ্ছে তাদের মুখোশ। নানারকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য তারা রাজনীতিতে চলে এসেছেন এবং তাদের ব্যবসায় মুনাফা আরো বৃদ্ধি করার জন্য রাজনীতিকে ব্যবহার করছেন।

এত করে আসলে রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। যারা নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদ, যারা সমাজ ও মানুষের ভালো করতে চান, তারা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ২০১৭ সালে হতাশার সঙ্গে বলেছিলেন, রাজনীতিটা ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মনে করতে পারি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেছিলেন, যারা আইনে স্নাতক তাদের সংসদ সদস্য হওয়া উচিত। কেননা সংসদের মূল কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা। আইনপ্রণয়ন করতে হলে এর অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হয়, আইনটা সম্পর্কে ভালো জানতে হবে, যাতে আইনটা্ও ভালো হয়। এমন আইন করতে হয় যা একই সঙ্গে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করবে, আবার আদালত বা বিচার বিভাগের, বা আইন প্রয়োগকারীদের কাজ করতে সমস্যা না হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলছিলেন মানসম্মত আইন হচ্ছে না। যখন আদালত আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন তখন নানা রকম সমস্যায় পড়ছেন।  

এখন আমরা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শুনি। কিছু কিছু অভিযোগ শুনি যার কোনো ভিত্তি থাকে না। কিন্তু আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ সদস্যরা খুব বেশি সময় দেন না- এই অভিযোগ অমুলক নয়। অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি জমি দখল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ার মতো আর্থিক সুবিধা দেয় এমন কাজে বেশি সময় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক এমপি তো জাতীয় সংসদে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন এবং আইন প্রণয়নের মুল কাজে সময় কম দেন।  

এখন আমরা দেখলাম একজন সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে কুয়েতের আদালত। মানব পাচার ও আরো কিছু অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি এই সাজা পেয়েছেন। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে,সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে,দেশের বাইরে একটা খারাপ বার্তাও দিয়েছে এই ঘটনা। যারা মানব পাচার করে তারা একটা দেশের সংসদ সদস্য হন, এটা ভালো বার্তা নয়।  

ফলে, নৈতিকস্খলন ও অপরাধ আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তাকে সংসদ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার। সেটার বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ উপ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি


(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অনূ্যন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।

কারা সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দাখিল করতে পারবেন সেই যোগ্যতা এই অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। জনাব পাপুল বর্তমান সংসদের সদস্য, এরিমধ্যে তিনি বিদেশি আদালতে দোষি সাব্যস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন, তিনি তো আপীল করার সুযোগ পাবেন, ফলে আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবে না। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে যে সব তথ্য উপাত্ত পেয়েছি এবং কুয়েতে যে রায় হয়েছে তাতে আমরা একটা ধারণা পেয়েছি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় দ্রুততার সঙ্গে আইন, নৈতিকতা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ করাটা যৌক্তিক।

শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

news24bd.tv তৌহিদ