মাদারীপুরের শিবচরে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ দুই শতাধিক পরিবার

মাদারীপুরের শিবচরে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ দুই শতাধিক পরিবার

Other

মাদারীপুরের শিবচরে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই দুই শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে আরো শতাধিক পরিবার।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার আহম্মদ হাওলাদারে ছেলে সিরাজ হাওলাদার। বছর পাঁচেক আগে নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয় পরিবারটি।

পরিবার নিয়ে ঘর তুলেছিল কুতুবপুর গ্রামে। সেই মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে আবার নিঃস্ব পরিবারটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তার বসত ভিটা।

তিনি বলেন, এতো জুলুম আল্লায় সইবো না।

আল্লাহ এইগুলো চোখে দেহে না। আল্লাহ গরীব মাইনষেরে বাঁচাই রাখে। কি লাইগ্যা আমরা ঘরডা ভাঙল? এহন কোথায় থাকমু? ষাটোর্ধ্ব কৃষক মো. শাহ্ আলম মৃধা। পাঁচ বছর আগে ১০ শতাংশ জমিতে দুই ভাই মিলে দুটি ঘর আর কিছু গাছপালা লাগান। নিজের ফসলী জমি নেই, তাই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেই চলে তাঁর সংসার। হঠাৎ তার এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন:


বড় বোনকে বিয়ে না দেওয়ায় ছোট বোনকে ধর্ষণ

সঙ্গমে রাজি নয় ষষ্ঠ স্ত্রী, সপ্তম বিয়ের জন্য কনে খোঁজছে ৬৩ বছরের বৃদ্ধ

এমপি পাপুলের চার বছরের সাজা কুয়েতের আদালতে

সাতক্ষীরায় দুই মামলায় রিজেন্ট সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন


 

শাহ্আ লম মৃধা বলেন, ‘আমাগো মাগুরখন্ড ইউনিয়নে হাজরা এলাকায় বাড়ি ছিল। পদ্মা সব ভাইঙ্গা লইয়া গেলে কুতুবপুরে জমি কিইনা দুই ভাই বাড়ি করছি। কিছু গাছ-গাছালি লাগাইছি। চেয়ারম্যানের লোকজন আইয়া হঠাৎ কইরা এগুলো ভাইঙ্গা নিতে কইছে। সাতকুলে আর তো থাকোনের জায়গা নাই। বাড়িঘর ভাইঙ্গা নিয়ে আমরা কোথায় ঠুঁই লমু?

দুই মাইয়া, বৌ লইয়া পথেপথে থাকোন ছাড়া আর কোন উপায় নাই। এই শীতের মইধ্যে এহন কোথায় যামু। ’

পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে আইসিটি মন্ত্রণালয় শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ও কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৭০ দশমিক ৩৪ একর জমি নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। গত ১৮ জানুয়ারি ওই এলাকায় সম্ভাব্য ক্ষতিপ্রস্তদের নিয়ে সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সভায় জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন এক সপ্তাহের মধ্যে সকল স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দেয় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের। পরে গত বুধবার থেকে কাঁঠালাবড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল বেপারী ও কুতুবপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর মাতুব্বর নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ
অভিযান শুরু হয়।

এদিকে প্রকল্পটি নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই স্থাপনা ও গাছপালা উচ্ছেদের প্রতিকার চেয়ে বুধবার বিকেলে শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ অংশ নেন। এ সময় তারা জানায়, প্রথমে ৪ ধারা নোটিশ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ ও নোটিশ না দিয়েই গত ১৮ জানুয়ারি এক সপ্তাহের মধ্যে স্থাপনা ভেঙ্গে  ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম। প্রশাসন তাদের ক্ষমতা বলে ইচ্ছেখুশি মত কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কথা প্রশাসন কিছুই শুনছে না। তবে প্রশাসন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রকল্প এলাকায় নোটিশ
পাঠানো হয়েছে। নিয়ম মেনেই উচ্ছেদ চালানো হচ্ছে। ’

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে প্রকল্পটির নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটা যন্ত্র দিয়ে নতুন-পুরানো সব ধরণের দুই শতাধিক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। দুটি ইউনিয়নের কোথায় প্রশাসন আবার কোথায় ইউপি চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে হচ্ছে এ উচ্ছেদ অভিযান। গড়ে উচ্ছেদ চলায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কেশবপুর এলাকার সিরাজ মুনশি বলেন, ‘আমার থাকনের ঘর বাদে গরুর ঘর, খামার সব ভাইঙ্গা দিছে। আমি ক্ষতিপূরণ পাইলাম নাই। নোটিশও পাইলাম নাই। হঠাৎ তারা আমার এমন ক্ষতি কইরা কী পাইলো?’

স্থানীয় সাইদুর ব্যাপারী নামে একজন জানান, হাতে গোনা কিছু অসাধু লোক অতিরিক্ত বিল নিতে নতুন নতুন ঘর বাড়ি তুলেছে। যা দেখলেই বোঝা যায়। প্রশাসন থেকে যাচাই-বাছাই করে উচ্ছেদ চালানো উচিৎ ছিল। আমরা চাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায়।

জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘৪ ধারা নোটিশ প্রদান করার পরে আমরা দেখলাম কিছু নতুন ঘর ও স্থাপনা করা হয়েছে। আমরা অবৈধ স্থানপা উচ্ছেদে কাজ শুরু করেছি। এই অভিযান চলমান থাকবে। তবে, পুরানো ঘরবাড়ি ও গাছপালা উচ্ছেদ করা হবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ বিষয় আমাদের নজর আছে। ’

news24bd.tv তৌহিদ