সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে চলছে মহোৎসব

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে চলছে মহোৎসব

Other

বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যার পাশাপাশি মহোৎসব চলছে খালে বিষ দিয়ে মাছসহ জলজপ্রাণী নিধনে। গত ৬ মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ কালে ১০জন বিষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে বন বিভাগ।

পালিয়ে গেছে ২৮জন বিষ সন্ত্রাসী। এসময়ে জব্দ করা হয়েছে ২৫ বোতল বিষ, বিভিন্ন প্রকারের ৭টি জাল, ২টি খালপাটা ও ১০টি নৌকাসহ বিষ দিয়ে আহরিত প্রায় ৭৭ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িসহ সাদা মাছ।

বন বিভাগের দেয়া এতথ্য সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে শুধুমাত্র চাঁদপাই রেঞ্জের।

সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জে মাত্র ৬ মাসে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ভয়াবহ চিত্রই বলে দিচ্ছে ম্যানগ্রোভ এই বনের মাছসহ জলজ প্রানীকুলের বর্তমান অবস্থা। খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ফলে সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার মাছশূন্য হয়ে পড়ার পাশাপশি খালে পানির বিষ বনের যেসব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে সেসব বন এলাকার জীববৈচিত্র্যের উপরও মারাত্বক প্রভাব পড়ছে।  

ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ মারা য়ািওয়ার পাশাপাশি মারা পড়ছে রপ্তানী পন্য বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ অন্যসব জলজপ্রাণী।


বাংলাদেশের অক্সিজেনের ভান্ডার আমাদের ফুঁসফুঁস সুন্দরবন হচ্ছে জীববেচিত্র্যের বৃহত্তম আধার ও ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বা বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এরমধ্যে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহতম জলাভূমিও। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
 
এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। এই জল ভাগে ছোট বড় ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার। সুন্দরবনের এই বিশাল জলভাগের মধ্যে ৩টি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ছাড়াও ৩টি ডলফিনের অভয়রণ্য ও ১৮টি খাল মৎস্য ও মৎস্য প্রজাতির অবাধ প্রজনন এবং সংরক্ষণের জন্য মাছসহ জলজপ্রানী শিকার নিষিদ্ধ। এখন এসব নিষিদ্ধ এলাকা থেকেও মাছ আহরনের খবর মিলছে।

সুন্দরবন নিয়ে নিরান্তর গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাইন্ডেশনের চেয়ারপাসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের শুধু চাঁদপাই রেঞ্জেই নয়-অন্য ৩টি রেঞ্জেও অবাধে খালে বিষ দিয়ে মাছ অহরণ করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে দিনকে দিন সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রানী হত্যার পাশাপাশি চলছে খালে বিষ দিয়ে মাছসহ জলজপ্রানী নিধনের মহোৎসব। দূর্বল বন ব্যবস্থাপনাসহ বন আইনে এসব অপরাধ জামিনযোগ্য হবার পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তা অতি লোভের কারনে সুন্দরবন এখন অস্তিস্থ সংকটে পড়েছে।

আরও পড়ুন:


সিংড়ায় ৬০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান

আইপিএলে শচীনের ছেলের ভিত্তিমূল্য কত?

প্রিয়াঙ্কার ৭ কোটির বাড়ি এখন জ্যাকুলিনের

অফিসার পদে নিয়োগ দেবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক


ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই ম্যানগ্রোভ বনসহ রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি বিশ্বের বৃহতম জলাভূমির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখন সময় এসেছে বন ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো। বাড়াতে হবে কর্মকর্তা-বনরক্ষীর সংখ্যা। বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রানী হত্যার পাশাপাশি মাছসহ জলজপ্রাণী নিধনে বিষ সন্ত্রাস-সহ পরিকল্পিত ভাবে বনে আগুল লাগানো দস্যুদের রুখকে জামিন অযোগ কঠোর বন আইন করে তা বাস্ত বায়ন করতে হবে। সুন্দরবনের পরিবেশ সংকটাপণ্য এলাকা থেকে শিল্প-কলকারখানা সরিয়ে নেয়াসহ অসাধু বন কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি কারা গেলেই সুন্দরবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, প্রতি বছর সুন্দরবনের এই বিশাল জলভাগ থেকে আহরিত হয় ৪ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বন বিভাগের দূর্বল নজরদারীর ফলে এক শ্রেণির জেলে বৈধ-অবৈধ পথে সুন্দরবনে ঢুকে অধিক লাভের আশায় ম্যানগ্রোভ এই বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে আসছে। ১২ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ইসাকের খাল, অফিস খাল, হুলার খাল, খালেকের খাল, মৃগামারী খাল, নলবুনিয়া খাল, চাড়াখালী খাল, শেলা সাইট খাল ও ঝাপসী খাল থেকে বিষ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ কালে ১০জন ‘বিষ সন্ত্রাসী’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময়ে পালিয়ে গেছে ২৮জন বিষ সন্ত্রাসী। এসময়ে ২৫ বোতল বিষ, বিভিন্ন প্রকারের ৭টি জাল, ২টি খালপাটা ও ১০টি নৌকাসহ বিষ দিয়ে আহরিত প্রায় ৭৭ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িসহ সাদা মাছ জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবনে বিষ সন্ত্রাস রুখতে বন বিভাগ তৎপর রয়েছে।

news24bd.tv আহমেদ