মেয়র আইভীর পরিবারের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণসমাবেশ

মেয়র আইভীর পরিবারের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণসমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবার শহরের লক্ষীনারায়ণ আখড়া সংলগ্ন জিউস পুকুরটি জাল দলিল বানিয়ে দখল করেছে এমন অভিযোগ তুলে আবারও প্রতিবাদী গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

শত কোটি টাকা মূল্যের একটি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি ‘জিউস পুকুর’ রক্ষার দাবিতে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে জীবন দিয়ে হলেও মেয়র ও তার পরিবারের কবল থেকে ওই মন্দিরের সম্পত্তি উদ্ধারে কঠোর শপথ নেন প্রতিবাদকারীরা।

আজ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে জিউস পুকুর এলাকায় মানববন্ধন ও গণসমাবেশের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদায়।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক।

প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যাটার্জী।

গণসমাবেশে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল বলেন, আপনাকে ভোট দেওয়া হয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য নয়। যদি আপনি গ্রাস না করেন তাহলে আসেন এখানে। শ্মশানের জমি যেভাবে দখল করেছেন সেভাবে এই সম্পত্তি দখল করেছেন।

এটি উদ্ধার হবে, আমরা প্রস্তুত। শেষ বয়সে এসে আমরা এই সম্পদ উদ্ধার করব। যদি এই সম্পত্তি ফিরিয়ে না দেন তাহলে এই নারায়ণগঞ্জের মানুষ আপনি ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা করবে না। যদি আমাদের ফাঁসির কাষ্ঠেও দিয়ে দেওয়া হয় তবুও আমরা এই সম্পত্তি উদ্ধার করব।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর মেয়র আমাকে বলেছেন-আপনি দীর্ঘদিন এই পদে আছেন, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবেন। মেয়র বলেছেন ওনার বাবার ওয়ারিশ সূত্রে ওনারা মালিক হয়েছেন। আমি প্রমাণ করে দেব যে, ওনারা সত্য বলছেন না আমরা সত্য বলছি।

এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা জিউস পুকুর সংশ্লিষ্ট কিছু দলিলপত্র দেখিয়ে বলেন, আপনার কোনো মামলায় আমি জামিন নেব না। বিএনপি এরশাদের সময় মোট ৪১টি মামলা দিয়েছে। ৪০টিতে বেকসুর খালাস পেয়েছি, মাত্র একটিতে রিমান্ড দেওয়া হয়েছিল। আমার ভাতিজারা ভেবেছিল, মামলা দিলে খোকন সাহা পালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এই ছয়টি দলিলে পর্দার অন্তরালে কে আছে? যেকোনো সময় আমার সূর্য ডুবে যেতে পারে। আমি বলে দেব, এই দলিলের মাস্টারমাইন্ড কে। মুখ খোলার চেষ্টা করবেন না। এই শহরের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস আমি জানি। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে কিছু লোক লুটপাট করে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের বদনাম করেছিল। নারায়ণগঞ্জ তার ব্যতিক্রম নয়। এখনও সময় আছে ওয়াকফ সম্পত্তি ছেড়ে দেন।

খোকন সাহা আরও বলেন, রাস্তায় ছবি দেখলাম কালী মাকে প্রণাম করছেন। মায়ের দোহাই দিয়ে ভোট নেবেন আর দেবোত্তর সম্পত্তি খাবেন—তা হবে না। ওয়াকফের সম্পত্তি খাবেন, মসজিদের সম্পত্তি খাবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ভূমিদস্যুদের দায়িত্ব নেবেন না। আপনি যখন এসেছিলেন তখন আপনার যবু চাচা আপনার জন্য পদ চাইলেন শামীম ওসমানের কাছে। আপনাকে স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছিল।


নারায়ণগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি অসাম্প্রদায়িক জেলা। এখানে হিন্দুদের সমস্যায় মুসলমানরা ছুটে যায়, আবার মুসলমানরা কোনো বিপদে পড়লে হিন্দুরা ছুটে যায়—নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয়। আমরা গত ১১ নভেম্বর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিলাম। সেদিন আমরা কিছু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলাম। এরপর ২ ডিসেম্বর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাসহ আমরা চাষাঢ়া শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন করেছিলাম। সেদিন নারায়ণগঞ্জের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম—ভুল মানুষেরই হয়, ভুল স্বীকার করে নেন, ক্ষমা চেয়ে নেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আবারও আপনাকে মেয়র নির্বাচিত করবে। আপনি কথা শোনেননি। রক্ত পূর্বপুরুষদের কথা বলবেই। দখলবাজ, দস্যুতা, লুটপাটের ধারাবাহিকতায় আপনার রক্তও তাদের মতো কথা বলছে।   হামলা-মামলা দিয়ে আমাদের থামাতে পারবেন না। শুধু জিউস পুকুর না, যে যে সম্পত্তি আপনি দখল করেছেন এবং দখলের চেষ্টা করেছেন। সমস্ত তথ্য জোগাড় করব এবং প্রত্যেকটা সম্পত্তি উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করব।

এর আগেও জিউস পুকুর উদ্ধারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ কর্মসূচি, প্রতীকী অনশন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।


ব্যাডমিন্টন কোর্টে ঝড় তুললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার

পরিত্রাতা যীশু: বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে চলছে মহোৎসব

আইপিএলে শচীনের ছেলের ভিত্তিমূল্য কত?


মানববন্ধন ও গণসমাবেশে অংশ নেন লক্ষ্মীনারায়ণগঞ্জ মন্দির কমিটির সভাপতি নিরঞ্জন সাহা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নির্মল চ্যাটার্জী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শী‌ল, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, মহানগর সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল ও সাধারণ সম্পাদক নিমাই দে প্রমুখ।

কর্মসূচির এক পর্যায়ে এতে সংহতি প্রকাশ করে মিছিল নিয়ে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল হক নিপু, জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, সাধারণ সম্পাদক রাফেল, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, ডা. বিধান পোদ্দারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জ নগরী স্থাপনের সময়কালে শ্রী ভিকন লাল ঠাকুর শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় দেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের নামে ‘শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। শত বছর ধরে এই মন্দির নারায়ণগঞ্জের লাখো হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে পবিত্রতা ও শুদ্ধতার কেন্দ্র। ভিকন লাল পাণ্ডে মন্দিরটির পাশে পূজা-অর্চনা ও আশপাশের অধিবাসীদের সুবিধায় ৩৬৭ শতাংশ জমির ওপর একটি পুকুর খনন করান, যা স্থানীয়দের কাছে জিউস পুকুর নামে পরিচিত। ভূমি জরিপের সিএস (ব্রিটিশ) পর্চায় এই বিশাল সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে দেবোত্তর এই সম্পত্তি দখল করতে উঠেপড়ে লাগে মেয়র আইভীর পরিবার। যে নকল দলিল করে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে মেয়র আইভীর মা, দুই ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে। ’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষায় আমরা কখনো প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতাম না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দেশে এখন আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত। আমরা এ দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অবিচল আস্থা রেখে তার দ্বারস্থ হয়েছি। দেবোত্তর এই সম্পত্তিটির বর্তমান মূল্য ১০০ কোটি টাকার উপরে। মেয়র আইভী ও তার পরিবারের দখলদারির কাছে আমরা অসহায়। ’

news24bd.tv নাজিম