আপনারা যারা আজ মাঘের শেষ দিনে বসন্ত উদযাপন করেছেন তাদের শুভেচ্ছা। কাল পহেলা ফাগুন। এই দেশের অসংখ্য মানুষ কাল বসন্ত উদযাপন করবেন। আর এর চেয়েও বেশি মানুষ বিশেষত তরুণ-তরুণীরা কাল ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করবেন।
ফাগুন বা ভালোবাসা কোনটাতেই সমস্যা নেই, শুধু স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসটার কথা ভুইলেন না। চলুন ফিরিয়ে নিয়ে যাই সেই ইতিহাসে।সালটা ১৯৮২। স্বৈরাচারী সামরিক প্রেসিডেন্ট মরহুম সেইন মুহাম্মদ এরশাদ তখন ক্ষমতায়।
কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান যে নীতি ঘোষণা করেন, সেখানে বাণিজ্যিকীকরণ আর ধর্মীয় প্রতিফলন ঘটেছে। তাই শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার পূর্বঘোষিত একটি কর্মসূচি ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওইদিন সমাবেশও ডাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সেদিন নানা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয়। মিছিলের সামনেই ছিলেন মেয়েরা। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি যখন কার্জন হলের সামনে পৌঁছায়, তখন পুলিশ-বিডিআর মিলে ব্যারিকেড দেয়। তোপখানা রোডে ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। 'হ তখন শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে বক্তৃতা দিতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশ কোনরকম উস্কানি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।
প্রথমে টিয়ারগ্যাস আর জল কামান ছোড়ে। ছাত্ররাও হাতের কাছে যা পেল, উল্টো ছুড়ে মারতে শুরু করলো। পুলিশের লাঠিচার্জের পর ছাত্ররা ব্যারিকেড ভেঙ্গে যাবার চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ গুলিবর্ষণ আর বেয়নেট চার্জ শুরু করে। সেদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫০জন নিহত হন। কিন্তু জয়নাল ও মোজাম্মেল ছাড়া আর কারও মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিহত ও আহতদের এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। বরং কিছু না ঘটা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, এমন অপপ্রচার চালিয়ে সামরিক সরকার উস্কে দেয় পুলিশকে। সরকারী মতেই সেদিন গ্রেফতার করা হয় ১,৩৩১ জন ছাত্র-জনতাকে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহা নামের একটি ছোট বাচ্চাসহ অনেকে সেদিন নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের পরে আর কোন খোঁজ মেলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই মৃতদেহগুলো গুম করে ফেলে। তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বজনরা কোন খোঁজ আর পাননি। তবে কিছুদিন পরে সরকার একটি ঘোষণা দিয়ে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করে।
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বাংলাদেশি নিহত
ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং এ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন
গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিএনপি কৃত্রিম বাধা তৈরি করছে: কাদের
আফসোস হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসটা যেভাবে পালন হওয়ার বদলে এরশাদ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভালোবাসা দিবস পালন হতে শুরু করে। স্বৈরাচার আন্দোলন থেকে ক্ষমতায় আসা দলগুলোও দিনটাকে পালন করেনি। ফলে এখন ভালবাসা দিবস স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের গুরুত্বকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছে।
না ফাগুন বা ভালোবাসা দিবস কোনটা পালনের বিরুদ্ধেই বলতে চাই না। শুধু বলি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসটার কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। ভুলে না যায় ইতিহাসকে।
শরিফুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী
news24bd.tv নাজিম