সামিয়া রহমান ও মারজানের লেখায় চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ মেলেনি, ট্রাইব্যুনালের প্রতিবেদন (ভিডিও)

Other

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানকে শাস্তি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু  অভিযোগ তদন্তে যে ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছিলো তারা বলছেন, চৌর্যবৃত্তি হয়নি। লেখাটির বড় দুর্বলতা ছিলো, উদ্ধৃতি দেয়া পদ্ধতি নিয়ম বর্হিভুত হয়েছে।

এ বিষয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার্যের অভিমত, দুর্বল লেখার জন্য, মূল্যায়নকারী এবং সম্পাদকেরও দায়ভার আছে।

  তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।  

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি অর্থাৎ প্লেজারিজমের অভিযোগ, সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শাস্তি দিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, এই দুই শিক্ষক, সেই প্রবন্ধে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো এবং ফিলিস্তিনি বংশদ্ভুত বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের লেখা চুরি করেছেন।

২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরে, আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত  ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে প্লেজারিজম বিষয়ক একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

ট্রাইবুনাল সিন্ডিকেটে পাঠানো সুপারিশে জানায়, সামিয়া রহমানরা প্লেজারিজম অর্থাৎ চৌর্যবৃত্তি করেননি।

সিন্ডিকেট এবং তদন্ত কমিটি বলছে চৌযবৃত্তি, কিন্তু ট্রাইবুনাল বলছে অন্যকথা। এর কারণ কি? কিসের ভিত্তিতে এই দ্বিমত, তার ব্যখ্যা দিয়েছেন, ট্রাইবুনালের সদস্য অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, সামিয়া রহমান ও মারজানের  যে লেখাটি নিয়ে অভিযোগ তোল হয়েছে। তারা সেই লেখাতে মিসেল ফুকো ও এডওয়ার্ড সাঈদের রেফারেন্স তুলে ধরেছেন।

ট্রাইবুনালের বক্তব্যের নিরিখে লেখাটি যাচাই করে দেখা যায়, ৮ পৃষ্ঠার প্রবন্ধে, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদ এবং দার্শনিক মিশেল ফুকোর নাম এবং বইয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি রেফারেন্সে যেসব বই ও প্রবন্ধ থেকে লেখাটিতে উদ্ধৃতি নেয়া হয়েছে, তার একটি বিবরণও দেয়া হয়েছে।

ট্রাইবুনাল সদস্যরা বলছেন, এই উদ্ধৃতি দেয়ার পদ্ধতিটি নিয়মবর্হিভূত হয়েছে। তাদের গবেষণা পদ্ধতি ঠিক নয়। এটি বিবেচনায় নিয়ে, তাদের ব্যাপারে লঘু শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিলো।

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা আরও বলেন, যেহেতু তাদের এটা চৌর্যবৃত্তি নয়। তাই তাদের একবছর পদোন্নতি স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছিল। যদিও সেটা পরে শোনা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে সামিয়া রহমান দাবি করেন লেখাটির সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকা যাচ্ছিলাম এয়ারপোর্টে প্রথমবারের মতো আমার কাছে ডিন অফিস থেকে ফোন আসে। সেখানে বলা হয় আপনার এবং মারজানের একটি লেখার কপি আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমি খুবই অবাক হই কারণ সেই সময়ে আমি কোন লেখা ডিন অফিসে জমা দেয়নি। পরে মারজানকে ফোন করা হলে মারজান বলে আপনার দেয়া বিষয়ের উপর ভিত্তি করে লেখাটি আমি জমা দিয়েছি। মারজানকে বলি আমি আমেরিকা থেকে না আসা পর্যন্ত তুমি গবেষণা জমা দিও না। কিন্তু আমি আমেরিকা থাকতেই সেটি সে জমা দেয়। এবং রিভিউয়ারও সেটি একসেপ্ট করে। ’

আরও পড়ুন:


শাকিবের দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে যা বললেন রুনা লায়লা

একদিনের মধ্যে নায়িকাকে বিয়ে, প্রেগনেন্ট হতেই ডিভোর্স

ওজন ৩০২ কেজি, নেওয়া গেল না জরুরী বিভাগে অবশেষে মৃত্যু

চাকরি দেবে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর


সার্বিক বিষয় নিয়ে, শিক্ষাছুটিতে আমেরিকা থাকা সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বক্তব্য জানতে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। উত্তরে তিনি জানান, নো কমেন্টস।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এবং ট্রাইবুনালের সুপারিশের মধ্যে চৌর্যবৃত্তিসহ নানা বিষয়ে দ্বিমেতের কারণ জানতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুজন উপ-উপাচার্যের এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ডিন এবং উপ-উপাচার্যদ্বয়ের আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতকার পাওয়া যায়নি। সবশেষ, উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের কাছে মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হয়।

এসময় উপাচার্য বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এনিয়ে মন্তব্য বক্তব্য কিছু নেই।

তাঁর আমন্ত্রণে কাগজপত্র নিয়ে, চা পান করতে ভিসি অফিসে গেলে তিনি সেখানেও জানান, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তবে, আদালতে যাবার সুযোগ আছে, অভিযুক্তের।

এই প্রেক্ষাপটে, সামিয়া রহমানের পক্ষ থেকে ট্রাইবুনালে অংশ নেয়া আইনজীবী জানান, উচ্চ আদালতে যাবার প্রস্তুতি চলছে।  

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রবন্ধটির রিভিউয়ার অর্থাৎ মূল্যায়নকারী এবং সম্পাদকও এই দুর্বল লেখাটি ছাপার জন্য সমভাবে দায়ী।

news24bd.tv আহমেদ