১
খাবার নিয়ে আমার বিভিন্ন রকম বায়নাক্কা আছে। এটা খেতে চাই না ওটা খেতে চাই না এর রকম ব্যাপার। অনেকে আছে যা পায় তাই হাপুস নয়নে খেয়ে ফেলে। খেতে কেমন লাগল, মসলা ঠিক হয়েছে, ঝাল ঠিক হয়েছে কিনা, তেলের পরিমাণ সঠিক ছিল কিনা, লবন ঠিক আছে কিনা এসব নিয়ে ভাবে না।
দুনিয়াতে তারাই সুখী যারা সব খেতে পারে।মানুষতো খাওয়ার জন্য পৃথিবীতে আসেনি, বাঁচার জন্য খেতে হয় তাই মানুষ খায়। খাওয়া নিয়ে পেরেসানি আমার আগে ছিল না। আজকাল অনেক খুদ ধরি আমি।
মনে আছে তখন মাত্র বিয়ে করেছি। সংসার শুরু হয়েছে। জেসমিন রাঁধতে চেষ্টা করছে। কঠিন চেষ্টা। দুটো ঘটনা বলি। রান্নার গল্প। তখনও সংসার গুছিয়ে উঠতে পারিনি। আর্থিক টাানাপোড়েন দূর হয়নি। আমার জন্য তা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু জেসমিনের জন্য ছিল কঠিন পরীক্ষা। আমার সাথে সংসার করার পরীক্ষা।
আমি হল জীবন ছেড়ে সংসার জীবনে প্রমোশন পেয়েছি। হল জীবনে আমি অনেক কষ্ট করেছি খাওয়া নিয়ে। তাই খাওয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই। কোনোকিছু গায়ে মাখি না। কিন্তু জেসমিন বাবা মায়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয় থেকে এসেছে মাত্র।
২
আমরা থাকি বনানীতে। ছায়া ঘেরা সুন্দর একটা বাসা। প্রায় ফ্রী থাকি বলতে গেলে। চারিদিকে গাছ গাছালি। অনেক ফল, ফুল। পাখিরা কিচির মিচির করে দিনভর।
সেটা ১৯৯০ সাল। আমাদের এ্ই বাসায় এখনকার অনেক বিখ্যাত সাংবাদিক বন্ধুরা এসেছেন তখন। মঈনুল আহসান সাবের, খায়রুল আনোয়ার মুকুল, কাজী জাওয়াদ, রেজোয়ানুল হক রাজা, আবদাল আহমেদ, মিনার মাহমুদ, আসিফ নজরুল, মোস্তাক হোসেন, লিটন, লিটু সহ আরো অনেকে এসেছেন।
যাইহোক। আমি বাজার করে নিয়ে আসলাম। টিবি গেট বাজার থেকে চিংরি মাছ আর টিএন্ডটি এলাকা থেকে কলমি শাক কিনলাম। সস্তার জিনিস। জেসমিন রান্না করল। বেশ ঘ্রাণ ছুটছে। খেতে বসেছি।
জেসমিন অধীর আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন হয়েছে! আমি মুখে খাবার নিয়ে দু’আঙ্গুল তুলে বললাম অসাধারণ! সেদিন অবশ্য জেসমিন তরকারিতে লবন দিতে ভুলে গিয়েছিল, তাও খারাপ লাগেনি!
তারপর প্রথম পোলাও রান্না। পোলাও রান্নার মনে হয় কিছু কায়দা কানুন আছে। প্রথম দিন পোলাও একেবারে ভর্তা হয়ে গিয়েছিল! সেই ভর্তা পোলাও খেয়ে নিয়েছি মজা করে। চিবুতে হয়নি। এখন জেসমিন একসাথে তিরিশ জনের রান্না করতে পারে, ষোল পদের আইটেম।
৩
মানুষের অনেক অভ্যাসই বদলে যায়। কোনো একটা জায়গায় স্থির থাকে না। পরিবেশ, অবস্থান মানুষকে বদলে দেয়। পরিস্থিতির কারনেও মানুষ বদলায়।
খাওয়া নিয়ে বায়নাক্কা আমার আগে ছিল না। টেবিল ভরা খাবার দেখতে আমার ভাল লাগে। কিন্তু সব খাবার আমি খেতে পারি না।
অরিত্রি বলেছে, বাবা অনেক খাবার অপচয় করে। যেদিন থেকে খাওয়া নিয়ে রেষ্ট্রিকশন আরোপ শুরু হলো সেইদিন থেকে ঝামেলার শুরু।
মেপে মেপে খাওয়া, ক্যালরি মেপে খাওয়ার কথা আমরা জানতাম না। পেটভরে খেতে পারলেই খুশী ছিলাম। হল জীবনেতো অনেকদিন না খেয়েও রাতে ঘুমিয়ে থেকেছি। কারো বাসায় গেলে হাভাতের মতো হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
মনে মনে ভাবতাম কম পরবেনাতো আমার! পেট না ভরলেও চাইতে লজ্জা পেতাম। আধাপেটে খাওয়া শেষ করেছি। পেট ভরেছে কিনা বুঝতাম না। এখনও আমার এমন হয়। এখনও একটু রাত জাগলেই খিদা পেয়ে যায়। মা বলতেন আমার নাকি চোখের খিদা। জেসমিনও তাই বলে।
৪
মামা বাড়ির দিনগুলোর কথা মনে আছে। অজ গ্রাম। অভাব অনটন। কেরোসিন সেভ করার জন্য সন্ধ্যা নামলেই কুপি নিবিয়ে শুয়ে পড়তে হতো। শীতের রাতে ধানের মাচানে ঘুমাতাম। ওম ওম গরম থাকত সিদ্ধ ধান। চাষের জমি থেকে গ্রাম দেশে সামান্য আয় রোজাগারে সংসার চলে। এক পয়সা দুই পয়সার হিসাব প্রতিনিয়ত।
কলস কাঠির হাট থেকে মেঝ মামা লেবেন্চুশ কিনে দিত বা মুড়ির মোয়া। পুকুর সেচ দিয়ে মাছ মারা হতো, সেই মাছ দিয়ে চলে যেতো ছয় মাস। একেবারে ফর্মালিন মুক্ত তাজা মাছ। শীতের সকালে ভাত খেতাম পেটপুরে। জিয়ল মাছের তরকারি জমে থাকত ঠান্ডায়।
বড় মামি আমার জন্য একটা সুন্দর বড় পিঁড়ি আর কাসার থালা রেখেছিলেন। যখনই যেতাম ও দুটো আমার হতো। আমি পাত পেড়ে খেতে বসতাম। খেতের তরকারি আর পকুর বা ডোবার মাছ।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ২০ বছর কারাদণ্ডের হুঁশিয়ারি
প্রেমিক হতে হলে বিশ্বস্ত হতে হবে: প্রভা
৯ মাসে বিমানের লোকসান ৩ হাজার কোটি টাকা
সালমান খানের ঘোড়ার ছবি দেখে প্রতারিত হলেন এক নারী
তখনকার দিনে খাবার গরম করার বিলাসিতা ছিল না। ম্যাচের একটা কাঠি খরচ করত হিসাব করে। সেইসব খাবার মনের মধ্যে আজও গেঁথে আছে।
বাড়িতে মা যা রাঁধতেন তাই ছিল অমৃত সমান। মা সিদ্দীকা কবির পড়তে জানতেন না বা ইউটিউবও ছিল না। তবু মা অনন্য ছিলেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১,টরন্টো
news24bd.tv / নকিব