যে কারণে হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিলেন মাসিলিয়া

যে কারণে হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিলেন মাসিলিয়া

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

আমার বোন প্রথম যখন হিজাব পরিধান করে, তখন তার স্কুলের ভাল বন্ধুটি তিন বছর তার সঙ্গে কথা বলেনি।

দুই সপ্তাহ পর, বাসে একজন মহিলা আমার এক মুসলিম বন্ধুর কাছে এসে চিৎকার করে দাবি করল তাকে তার হিজাব খুলে ফেলতে হবে নতুবা তিনি যেখান থেকে এসেছেন তাকে সেখানে ফিরে যেতে হবে।

এক মাস পরে, আমার আরেক বন্ধুকে হিজাবের কারণে তাকে একটি চাকরির সাক্ষাত্কার থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। যদিও চাকরি দাতার ইমেইলে বলা হয় তারা ‘তার যোগ্যতায় খুবই প্রভাবিত’ হয়েছিল।

তারও কয়েক মাস পর মসজিদে একজন ভদ্রমহিলা আমাকে জানায়, তিনি অফিস শেষ করে বাড়ির দিকে হাঁটতে ভয় পান কারণ প্রতিটি রাতে এক দল যুবক বাসস্টপ থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করে। তারা হিজাব খুলে ফেলার হুমকি দেয়।

তাই যখন আমি হিজাব পরিধান করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন তুমি এটা পরার সিদ্ধান্ত নিলে, মাসিলিয়া?’

এই জিজ্ঞাসার জবাবে আমার মাথায় খুবই স্বতন্ত্র একটি উত্তর ছিল আর তা হচ্ছে-‘আল্লাহ’।

হিজাব পরিধান- মূর্তি পূজা করা এবং বাবা-মাকে সম্মান করার মতো নয়, এটা হচ্ছে ইসলামের বিধান।

এটি হয়ত আপনাকে অবাক করতে পারে যে, হিজাব কেবল মুসলিম নারীরাই পরিধান করেন না, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মের নারীরাও এটি ব্যাপকভাবে পরছেন।

হিজাব ছাড়া নারীদের সম্পর্কে
এখন আমি জানি, আপনার মনের মধ্যে সম্ভবত অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন- তবে কেন লাখ লাখ মুসলমান নারী মাথায় হিজাব পরেন না? কিংবা নারীরা সম্পূর্ণভাবে আচ্ছাদিত হওয়া কতটা ন্যায্য যখন তার স্বামী সাধারণ পোশাক পরছে?

কেন একজন মুসলিম নারী হিজাব পরেন না, বা কেন অন্য মুসলিম নারীদের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। তা বুঝতে হলে তাকে স্বতন্ত্রভাবে জিজ্ঞাসা করতে হবে। কারণ এই প্রশ্নের জবাব এক একজন নারীর কাছে একেক রকম।

কারো কাছে এর জবাব হতে পারে- তারা এখনো এটি পরার জন্য প্রস্তুত নয় কিংবা হিজাব ছাড়াই তারা ইতিমধ্য আল্লাহর সঙ্গে গভীর সংযোগ অনুভব করেন অথবা হতে পারে একজন মুসলিম হিসাবে নিজেকে প্রকাশ্যে জাহির করতে ভয় পান।

যদি আল্লাহ ধর্মের নির্দেশিকাগুলো বহন করেন, তবে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সঠিক ও ভুলের সমালোচনা করতে পারেন। যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে ধর্মের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত ঐতিহ্যকে আলাদা করে, তাহলে একে অপরকে তুলনা করা বৃথা হবে।

কেন পুরুষদের আবরণ বা পর্দা করতে হবে না?
পুরুষদের এবং মহিলাদের জন্য বিভিন্ন পোশাকের বিধান সম্পর্কে আমি বিশ্বাস করি যে পিতৃতান্ত্রিকতা হচ্ছে সাংস্কৃতিক, আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় নয়।

নারীদের মতো পুরুষদেরও ইসলামি পোশাক ও আচরণগত বিধান রয়েছে। পুরুষদেরও তাদের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ডেকে রাখার বিধান আছে। কিন্তু অমুসলিমদের জন্য অথবা যারা ধর্মের সঙ্গে পরিচিত নয়, তাদের মনে হতে পারে পুরুষের জন্য কোনো পোশাক কোড নেই। কারণ তারা মনে করে মুসলিম নারীদের ছাড়া বাকী কারোই পোশাক কোড নেই।

কিছু মুসলিম পুরুষ হিজাব পরা নিয়ে চাপ দিতে নারীদের ওপর ধর্মীয় মতবাদ ব্যবহার করেন। প্রত্যেক সমাজে, এমনকি পশ্চিমা সমাজেও, পিতৃতান্ত্রিকতা নারীদের পছন্দকে প্রভাবিত করার ভূমিকা পালন করে থাকে।

মুসলিম নারীরা ভিন্ন নয়। সম্ভবত কিছু কিছু নারী পুরুষদের চাপের কারণে হিজাব পরেন। এটা বলা যাবে না যে অধিকাংশ লোকই এটা করে না, কারণ পুরুষরা এটা চায়। বলতে গেলে, জীবনের অন্যান্য দিকের পিতৃতন্ত্রও তার গতিপথেই চলছে।

লেখক: মাসিলিয়া অ্যালি সাংবাদিকতা ও আইনের একজন ছাত্রী।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর