যার বন্ধু নেই সে দূর্ভাগা,যার সবাই বন্ধু তার কোনো বন্ধুই নেই,দেউলিয়া

যার বন্ধু নেই সে দূর্ভাগা,যার সবাই বন্ধু তার কোনো বন্ধুই নেই,দেউলিয়া

অনলাইন ডেস্ক

আমাকে অনেকে বলেন,আমার বন্ধু ভাগ্য ভালো। আমি নিজেও তা বিশ্বাস করি। আমার শৈশব থেকে পাড়া হয়ে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তিন স্তরে জীবনের শ্রেষ্ট সম্পদ বন্ধুত্ব লাভ করি। আর লাভ করি কর্মক্ষেত্রে একদম কম।

বন্ধুত্ব আসলে হয়না,এটা মাতৃগর্ভে  যেমন সন্তান জন্ম নেয় তেমনি একসঙ্গে বেড়ে ওঠাকালে আত্বার গভীর বন্ধনে হৃদয়ে জন্ম নেয়,যা আমৃত্যু গভীর বিশ্বাস ও আস্হায় থাকে।

আমি বিশ্বাস করি এ বন্ধুত্ব মতপথের উর্ধ্বে তৈরি হয়। আমি আরও বিশ্বাস করি তুমুল ঝগড়া,ছেলেবেলার মারপিটে ও এটা বিনাশ হয়না। বড় বেলায় তর্কেও গভীর হয়।

প্রাচীন প্রবাদ আছে,জ্বরে বেশি পুড়লে সম্পর্ক হয় ভালোবাসা,আর ভালোবাসা বেশি জ্বরে পুড়লে হয় বন্ধুত্ব।

বন্ধুই একমাত্র সম্পর্ক যেখানে জীবনের সকল আনন্দ বেদনা দহন স্বপ্ন এমনকি জীবনের ভুল ও অন্ধকার দিকগুলি অকপটে বলা যায়। কিন্তু এটা শুনে যে ফেরী করে সে কখনোই বন্ধুত্বের যোগ্যতা অর্জন করেনা। মানসিক দারিদ্রতা নিয়ে বন্ধুত্ব হয়না,বন্ধুর বিপদে ঝাপ দিতে হয়,উন্নতিতে খুশি হতে হয়। মা বাবা ভাইবোন স্বামী  স্ত্রী সন্তানকে মানুষ যা বলতে পারেনা তা অবলীলায় বন্ধুকে বলতে পারে। আমি আরও বিশ্বাস করি যে, যার বন্ধু নাই তার চেয়ে দূর্ভাগা ও নিঃস্ব মানুষ আর পৃথিবীতে নেই,তেমনি যার সবাই বন্ধু তার আসলে কোনো বন্ধুই নেই। স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে কর্মক্ষেত্রেও অনেকে অনেককে ঢালাও বন্ধু বলে,এ নিয়ে আমার পর্যবেক্ষন এটা স্রেফ কলিগ,হতে পারে গভীর হৃদ্যতা বিশ্বাস ও সখ্যতা, আস্হার জায়গা তবু সেটি বন্ধুত্ব নয়,একটা দেয়াল অজান্তেই থেকে যায়।


ম্যাচ ফিক্সিং : আইসিসির নজরদারিতে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটার

এক নজরে এবার আইপিএলে কে কোন দলে

দেশের ব্যাংকসহ ১৯ সংস্থার ডাটা চুরি হ্যাকার গ্রুফের

ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ শিরক


আরেকটি হলো,আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব হয়না,কারন এখানে বন্ধুত্বের যে আড্ডা গল্প সেন্সরবিহীন হয় সেটি গড়ে ওঠেনা,আড় থেকে যায়। এখানে হয় কেউ কারো প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, নয় বন্ধুত্ব নয় -হৃদ্যতা গড়ে ওঠে,কারন আড় রেখে আর যাই হোক বন্ধুত্ব হয়না। অনেকে বিয়ের পর স্ত্রীর বন্ধুকে বন্ধু,বা স্বামীর বন্ধুকে বন্ধু বলেন,এদেরকে আমার নির্বোধ দেউলিয়া ছাড়া আর কিছু মনে হয়না,এদের নিজস্ব স্বকীয়তা বলে কিছু থাকেনা। নিজের জগৎ হারানো ব্যক্তিত্বহীন নিঃস্ব মানুষ মনে হয়।

পেশাগত জীবনে বা কর্মক্ষেত্রে অনেকের পরষ্পরের মধ্যে গভীর মমত্বের সম্পর্ক হলেও বন্ধুত্ব নয়,মাথানির্ভর হিসেব ও স্বার্থে আর যাই হোক বন্ধুত্ব হয়না। বন্ধুত্ব জন্ম নেয় হৃদয় থেকে দীর্ঘ পথের যাত্রায় হিসেব বা স্বার্থ সেখানে থাকেইনা। হঠাৎ বন্ধুত্ব নিয়ে কেনো এমন লেখা?এ প্রশ্ন যে কেউ তুলতে পারেন,উত্তর হলো দীর্ঘ পেশাগত জীবন ও জটিল জগৎ সংসারের লড়াই শেষে হাপিয়ে ওঠা পথিককে যেনো কেউ বলছে,পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছো?তখন বড় বেশি হৃদয়ের গহীন থেকে বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে,বড় আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে। মন জানতে চায়,বন্ধু কি খবর বল?সুনামগন্জ সরকারি কলেজের ৭৫বছর পূর্তিতে গিয়েছিলাম অগ্রজ অনুজদের সাথে স্কুল কলেজের বন্ধুদের জড়ো করে তুমুল আড্ডায় ডুবে যাবো!নিয়তি বড়ই নির্মম,প্রকৃতি এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলো,ভাইরাল অ্যাটাকে শয্যাশায়ী হয়ে সুযোগ হাতছাড়া হলো!

বন্ধু এবং বন্ধুত্ব নিয়ে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন, “আমার ভালো বন্ধুদের কথা মনে করে আমি যতোটা সুখী হতে পারি, অন্য কোনোভাবে ততোটা সুখী হতে পারি না”।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগতের সবকিছুকেই তার বিচক্ষণ দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন। যা অত্যন্ত মনকাড়া এবং চিত্তকর্ষক। কবি গুরু বলেছেন,“গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ। আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই”।

বলা হয়ে থাকে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে রাষ্ট্রদার্শনিক এরিস্টটল বিচরণ করেননি। প্রচন্ড অনুধাবন এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাই তাকে অমর করে তুলেছে। তিনি বলেছেন,“দু’টি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব। দুর্ভাগ্যবান তারাই যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই। প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয়,ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়”।

বন্ধু নিয়ে হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “তুমি আমার কথা মেনে মূর্খের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। মূর্খের বন্ধুত্ব জ্ঞানীকে বরবাদ করে দেয়। মূর্খের সঙ্গে বন্ধুত্বের পরিণামস্বরূপ মানুষ তোমাকে মূর্খ বলে স্মরণ করবে। সেই তোমার সত্যিকার বন্ধু, যে তোমার সঙ্গে থাকে। তোমার কল্যাণের জন্য নিজের ক্ষতি করে। হঠাৎ করে তোমার অবস্থা শোচনীয় হলে সে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তোমাকে সুখ দান করে”।

দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন,“বন্ধুত্ব একমাত্র সিমেন্ট যা সবসময় পৃথিবীকে একত্র রাখতে পারবে। বন্ধুত্ব গড়তে ধীরগতির হও। কিন্তু বন্ধুত্ব হয়ে গেলে প্রতিনিয়তই তার পরিচর্যা করো”। প্লেটো বলেন,“বন্ধুদের মধ্যে সবকিছুতেই একতা থাকে”।

হেলেন কেলার বলেছেন,“অন্ধকারে একজন বন্ধুর সঙ্গে হাঁটা আলোতে একা হাঁটার চেয়ে ভালো”।

শিবরাম চক্রবর্তী বলেছেন, “বন্ধু পাওয়া যায় সেই ছেলেবেলায় স্কুল-কলেজেই। প্রাণের বন্ধু। তারপর আর না। আর না? সারা জীবনে আর না? জীবন জুড়ে যারা থাকে তারা কেউ কারো বন্ধু নয়। তারা দু’রকমের। এনিমি আর নন-এনিমি। নন-এনিমিদেরই বন্ধু বলে ধরতে হয়”।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন,“আমাদের রহস্যময়তার পরীক্ষণে প্রাপ্ত সবচেয়ে সৌন্দর্যময় জিনিসগুলো হলো শিল্প, বিজ্ঞান এবং বন্ধুত্ব”।

স্যামুয়েল জনস্টন বলেছেন,“বন্ধুদের সংখ্যার ওপর সত্যিকারের বন্ধুত্ব নির্ভর করে না। বরং এটি বন্ধুদের বিশ্বাস ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে”।

জর্জ ওয়াশিংটন বলেন,“সত্যিকারের বন্ধুত্ব গাছের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার মতো"।

হেনরি ডেভিড থিওরো“আমার বন্ধুর জন্যে সবচেয়ে বেশি যা করতে পারি তা হলে শুধু বন্ধু হয়ে থাকা। তাকে দেয়ার মতো কোন সম্পদ আমার নেই। সে যদি জানে যে আমি তাকে ভালবেসেই সুখী, সে আর কোন পুরস্কারই চাইবে না। এক্ষেত্রে বন্ধুত্ব কি স্বর্গীয় নয়?”।

চার্লি চ্যাপলিন বলেন,“আমার সব থেকে ভালো বন্ধু হল আয়না, কারন আমি যখন কাঁদি তখন সে হাঁসে না”। “আমার বন্ধুরা আমার সাম্রাজ্য"বলেছেন,এমিলি ডিকেনসন।

হেলেন কিলার বলেছেন,“আলোতে একাকী হাটার চেয়ে বন্ধুকে নিয়ে অন্ধকারে হাটা উত্তম”।

মার্টিন লুথার কিং বলেছেন,“সবকিছুর শেষে আমরা আমাদের শত্রুদের বাক্য মনে রাখবো না, কিন্তু
বন্ধুর নীরবতা মনে রাখবো"।

শেখ সাদি বলেছেন,“আগন্তুকের কোনো বন্ধু নেই, আরেকজন আগন্তুক ছাড়া "।

গ্রীক নাট্যকার ইউরিপিদিস বলেন,“একজন বিশ্বস্ত বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান“। এমারসনের ভাষায়,প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব"।

নিটসে বলেন,“বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে প্রাণরাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে একটি গুপ্তধন পেলো”।

বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)বলেন, যারা কোনো স্বার্থের বশবর্তী হয়ে তোমার কাছে আসে, পরীক্ষা না করে তাদের বন্ধুত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করো না। যাকে তুমি ঘৃণা করো, তাকে ভয় করে চলো”।

পীর হাবিবুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন (ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv/আলী

সম্পর্কিত খবর