সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কাজুও ইশিগুরো সম্পর্কে জানলে অনেকে অবাক হবেন। আমাদের কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই লজ্জা পাবেন। জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ইশিগুরোর বইয়ের সংখ্যা কত বলুন তো?
বছর চার আগে তিনি যখন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, তখন তার বয়স ছিল ৬২ বছর। বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র আটটি। বাষট্টি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি লিখেছেন মোটে আটটি বই। আমাদের অনেক মহান লেখক আছেন, কবি-সাহিত্যিক আছেন—যারা এক বইমেলাতেই প্রকাশ করেন ৮-১০টি বই। কেউ আবার এক ফেব্রুয়ারির বইমেলায়তেই হাফ সেঞ্চুরিও করেন। শুরুতেই কাজুও ইশিগুরোর কথা এ জন্য বলেছি যে, বইয়ের সংখ্যা নয়, আসলে রচনার গুণমানই প্রকৃত বিষয়!
আমার তো প্রায়ই মনে হয়, মানহীন বইয়ের মতো ‘আবর্জনা’ আর নেই।
প্রতিবছর বইমেলায় যে ৫ হাজার বই প্রকাশিত হয়, তার ৯০ শতাংশ মানহীন। মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা তেমন বেশি না। তার প্রকৃত কারণ এই যে, অনেকেই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করেন। আবেগের টানে কিংবা জনপ্রিয়তার মোহে অনেকে দেদার বই প্রকাশ করেন। বই প্রকাশের আগে নিজেকে, নিজের রচনাকে নির্মোহভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত। শিল্প-সাহিত্য, জীবন ও সমাজ-রাজনীতি নিয়ে সম্পর্কে সম্যক পাঠ-প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা নিয়েই বই প্রকাশ করা উচিত। বই প্রকাশে তাড়াহুড়ো যারা করেন, মাত্রাতিরিক্ত খ্যাতি ও টাকার মোহে যারা বই প্রকাশ করেন, তাদের রচনায় উপলব্ধির গভীরতা থাকে কম, আবেগের তারল্যই থাকে বেশি। জীবন ও জগত নিয়ে চিন্তা ও মননের গভীরতা যাদের রচনায় কম, শেষত তাদের রচনা আবর্জনাতে পরিণতই হয়।
সামাজিক মাধ্যমের সহজলভ্যতায় বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউব ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবাই কমবেশি লেখালেখি করেন। নিজেদের মতো করে অভিমত প্রকাশ করেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নিজের মতামত ব্যক্ত করার দিকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, বই প্রকাশ করা ও লেখক হওয়া এক নয়।
একজন জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পীর কথা দিয়ে শেষ করি। রন্ধনশিল্পী প্রায় নিয়মিত ইউটিউবে রান্নার রেসিপি ও ভিডিও প্রকাশ করেন। তার রান্নার ভিডিও দেখেন লাখো মানুষ। ভিডিও নিচে হাজার হাজার কমেন্টস। একদিন তিনি হন্তদন্ত হয়ে ফোন করে বললেন, ‘আমাকে একটু সহযোগিতা করতে পারবেন? রান্নার রেসিপি দিয়ে বই প্রকাশ করব। আপনি আমার লেখাগুলো দেখে দেবেন। '
আমি তাকে উৎসাহ দিয়ে বলি, ‘আপনি তো চমৎকার রান্না করেন। রান্নাবান্না নিয়ে বই লিখতেই পারেন। পাণ্ডুলিপি পাঠান, পড়বো। মতামত জানাব। '
মিয়ানমারে গাড়ি নষ্টের অজুহাতে সড়ক অবরোধ
অবশেষে জনসম্মুখে কিম জং উনের স্ত্রী
শূকর ব্যবসায় অর্জিত অর্থ খেয়ে গেল উইপোকায়!
কয়েক দিন পর কুরিয়ারে পেলাম তার রান্নাবিষয়ক বইয়ের পাণ্ডুলিপি। আমি পাণ্ডুলিপি পড়ে ব্যক্তিগতভাবে খুব লজ্জায় পড়ে গেলাম। রন্ধনশিল্পীর লেখা খুবই কাঁচা, অপরিণত ও অপরিপক্ব। বাক্যগঠন ঠিক নেই। শব্দের ভেতর কোনো দ্যোতনা নেই। তার রান্না সুস্বাদু হলেও বাক্য ও শব্দের ভেতর স্বাদ নেই। মাধুর্য নেই। আসলে রান্না করা রন্ধনশিল্পীর জন্য সহজ, বই লেখা তত সহজ নয়। বই প্রকাশ করতে হলে চাল, ডাল, তেল-নুন ছাড়াই খিচুড়ি রান্না করতে হয়। বইয়ের পৃষ্ঠায় সমুদ্রের ঢেউ তুলতে হয়। কালো শব্দ ও অক্ষরের ভেতর জোছনা রাতের মায়াবী আলোর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হয়। বইয়ের পৃষ্ঠাকে সজীব ও সতেজ করা চাট্টিখানি কথা নয়।
news24bd.tv / নকিব