এক স্বপ্নবাজ

এক স্বপ্নবাজ

Other

এই সময়টা সবচেয়ে হতাশার আমার কাছে। কানাডার স্নোবার্ডরা চলে যায় উষ্ণ কোথাও। বেশিরভাগই ফ্লোরিডা চলে যায়। তীব্র ঠান্ডা, স্নো, উইন্ড, প্যাকপ্যাকে ওয়েদার, মন খারাপ করা চারিদিক।

তার উপর কোভিড অভিশাপ। কোথাও যাওয়া নাই। গত আঠারো বছরে প্রায় প্রতিবছর এই সময়টা আমি দেশে কাটিয়েছি। এই সময়টায় আমাকে সবাই দেখে বলে অনেকে জানেই না আমি বিদেশ থাকি।
বিদেশে থাকি বলে আত্মশ্লাঘায় ভোগার কিছু নাই। গৌরবের কিছু নাই। কোনো কৃতিত্ব নাই। কেউ কেউ বিদেশে এসে দ্বিগজ্জ হয়েছে, এইটুকুই যা প্রাপ্তি। নিজে নিজে তৃপ্তি খুঁজে নেওয়া।  

বিদেশ হচ্ছে একধরণের পলায়নপরনতা, বাগড়ম্বর করার জায়গা। বিদেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বার্থপর, কৃত্তিম, মায়া মমতাহীন, মিথ্যার বেসাতি, সরকারকে এবিউজ করা। প্রতিদিন একই রকম। কোনো উত্তাপ নাই। বৈচিত্র্য নাই। একদল প্রনান্ত কষ্ট করে জীবন যাপন করে, একদল আরামে থাকে। লুটেরা আর খুনীদের অভয়ারন্য।

আরও পড়ুন:


স্বামীকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া, প্রেমিক ধরা

পরকীয়া প্রেমিকের হারিয়ে যাওয়া ফোনে স্বামী হত্যার রহস্য ফাঁস

পরকীয়া প্রেমিকাসহ ধরা যুবদল নেতা

পরকীয়া প্রেম: রাতভর আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ 


কানাডা আবার বৈচিত্র্যময় মাল্টিকালচারের দেশও বটে। নতুন প্রজন্ম ও নারীদের জন্য স্বর্গ। হিউম্যান রাইটস, বাক স্বাধীনতা, উন্নত চিকিৎসা এবং এডুকেশনের জন্য কানাডা ভাল দেশ। তা সত্বেও আমার মন কখনোই এই দেশে প্রোথিত হতে পারেনি। শেঁকড় শক্ত হয়নি। মন পড়ে থাকে বরিশালের পথে ঘাটে। মল্লিক বাড়ির আনাচে কানাচে। বনে জঙ্গলে, ধুলোয়, খালে বিলে মন ঘুরে বেড়ায়। ছোটবেলার স্মৃতিগুলো কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না। শৈশবের আনন্দময় দিনগুলো সামনে এসে হামলে পড়ে।  

অনেকে আছে বিদেশে আসার পর দেশকে ভুলে যায়। কতজনকে চিনি আসার পর আর দেশে যায়নি। বিশ, পঁচিশ, তিরিশ বছরেও যায়নি। কখনো যাবেও না। দেশের মাটির প্রতি মায়াটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, দেশে যেতে ইচ্ছে করে না! সে বলল, মন টানে না। হ্যাঁ অনেকদিন না গেলে মায়াটা চলে যায়। অভ্যাস নষ্ট হয়ে যায়।  

লেখালেখির মানুষদের আরো দেশ ছাড়া উচিত নয়। তাতে বিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়। মুলস্রোত থাকে ছিটকে যায়। লেখার পরিধি ছোট হয়ে যায়। এটা একজন লেখকের জন্য বিরাট বড় ক্ষতি। বিদেশে যারা থাকে অন্যেরা তাদের পর ভাবে। ভিনগ্রহের এলিয়েন ভাবে। আচরনও এমনই করে। দেখলে মনে করে ভুত দেখেছে। আমি প্রতিদিন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আমি কেনো বিদেশে থাকি! উত্তর খুঁজে পাই না। স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা এসবের জন্য? আমিতো দেশে খারাপ ছিলাম না! যারা বিদেশে থাকে না তারা কি স্বাচ্ছন্দে নেই! দেশে থাকাটাই বিরাট গৌরবের।

বিদেশে থাকি বলে দেশের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আপনজনদের কাছ থেকে দূরের হয়ে গেছি। মৃত্যুর সময় মায়ের পাশে থাকতে পারিনি। অনেক চেনা মানুষ অচেনা হয়ে গেছে। অনেক প্রিয়জন হারিয়েছি। যাদের সাথে একসময় সুখ দুঃখ শেয়ার করেছি, কষ্টের দিনে পাশে ছিল যারা তাদের সাথে বিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়েছে। এমনকি বাড়ির নতুন প্রজন্ম আমাকে দেখলে চিনতে পারে না। পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বিদেশ একাকীত্ব, নির্জনতা আর বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আর কিছুই দেয় না। দেশে ফেরার জন্য এখন আমি ব্যাকুল হয়ে আছি। আমার অসামাপ্ত লাইব্রেরির কাজ সমাপ্ত করার স্বপ্ন বুনে চলছি। ওটাই আমার ঠিকানা হোক। শেষ আশ্রয়। স্বপ্নবাজ আমি।

লেখক, জসিম মল্লিক, সাংবাদিক, কানাডা

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর