পাঙ্গিয়ার বিলে পলো উৎসব

পাঙ্গিয়ার বিলে পলো উৎসব

নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

পলো দিয়ে এক সঙ্গে শত শত মানুষের মাছ শিকার আবহমান বাংলার এক অনন্য ঐতিহ্যবাহী উৎসব। নির্মল এই বিনোদনের জন্য গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় থাকেন পুরো একটি বছর। প্রহর গুণতে থাকেন, কখন সেই দিনটি আসবে।  

অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে নাটোরবাসীর।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পলো উৎসব শুরু হয়েছে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পাঙ্গিয়ার বিলে।

রোববার থেকে শুরু হওয়া এই মাছ ধরা উৎসব শেষ হচ্ছে আজ। মঙ্গলবার উৎসবের অন্তিম দিনে আনন্দে মেতে উঠেছেন হাজার পাঁচেক মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

সারাদিন হাজার হাজার মানুষ পলো, চাকপলো, নেটপলো, ঠেলা জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম দিয়ে মাছ শিকার করেছেন। বিলপাড়ে সমবেত হয়ে এ উৎসব উপভোগ করেছে স্থানীয় জনগণ। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে পেরে সবাই মহাখুশি। বিগত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে সবাইকে মাছ ধরার পলো উৎসবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।  

সরেজমিনে দেখা যায়- শোল, রুই, বোয়াল, কাতলাসহ নানা প্রজাতির মাছ পলোতে আটকা পড়েছে। উৎসবে অংশ নেওয়া অনেকেই রুই-কাতলা ধরতে পেরে আনন্দে আত্মহারা। আবার কেউ কেউ মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন।  

পাশ্ববর্তী উপজেলা গুরুদাসপুর থেকে আসা আবুল কাশেম বলেন, ‘লোকমুখে পলো উৎসবের কথা শুনে সাত-সকালেই পলো নিয়ে এসেছি। একটি বড় কাতলা মাছ ধরতে পেরে খুব ভালো লাগছে’।

নাটোর শহরের আলাইপুর থেকে আবু কাসেম ও আব্দুর রহমান  রহমান এসেছেন । তারা বলেন, ‘শখের বশে পলো বাইতে এসে রুই, কাতলা আর বোয়াল মাছ পাইছি। ’ 

পাঙ্গিয়ার বিল এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, ‘এটি আমাদের পুরনো ঐতিহ্য। প্রতি বছর উৎসবের মাধ্যমে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এর মধ্যে আলাদা আনন্দ রয়েছে। এবারের উৎসবে অংশ নেওয়া অনেকেই কোনো না কোনো মাছ পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ’

এলাকার প্রবীণরা জানান, এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে মা, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দিন দিন খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-পুকুর ভরাট হচ্ছে। ফসল ও বাড়ি রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। জমির পোকা-মাকড় নিধনের নামে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিষাক্ত পানিতে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে।  

 নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ এই ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর নগর ইউনিয়নের পাঙ্গিয়ার বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব হয়। আগামীতেও এই উৎসবের আয়োজন করা হবে। ’

নাসিম/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর
 

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর