আল-কুরআনের বাণীকে মেনে নিচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান

আল-কুরআনের বাণীকে মেনে নিচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র কুরআন এমন একটা গ্রন্থ যার মধ্যে সংক্ষিপ্ত বাক্যে অনেক কিছু বলা হয়। আর এটা কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়। এটা ধর্ম গ্রন্থ, কিন্তু পবিত্র কুরআনে বিজ্ঞানের অনেক কিছুর সমাধান পাওয়া যায়, যা বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে এবং কুরআনের কোন আয়াত আজও কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারেনি।   এই মহাবিশ্ব যিনি সৃষ্টি করেছেন তার কাছেই রয়েছে সব কিছুর সঠিক সমাধান।

দিনে দিনে বিজ্ঞানও কুরআনের বাণীকে মেনে নিচ্ছে।  

চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনার আগে বলে রাখা ভাল যে, আল-কুরআনে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দিকনির্দেশনা থাকলেও এটাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের বই হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই বলেছেন, ‘কুরআন হচ্ছে মানুষের জন্য সরল ও সঠিক পথের নির্দেশক এবং তা পারলৌকিক ও পার্থিব জীবনের কল্যাণ নিশ্চিতকারী গ্রন্থ।

আল-কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক দিকগুলোর একটি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, যা বিশ্বের গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

আমরা যদি মনোযোগের সাথে কোরআনের আয়াতগুলো লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই, আসমানী এ গ্রন্থে মানুষের দৈহিক ও মানসিক রোগ নিরাময়ের বিষয়টি একইসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।  

সুরা আর রা'দের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘জেনে রাখুন, কেবলমাত্র আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে’।


টাইম ট্রাভেল কুরআনের পথেই হাটছে বিজ্ঞান

মহানবী (সা.) এর বাণীকে সত্য প্রমাণ করল বিজ্ঞান

চৌদ্দশ বছর পুর্বের নবী (সা.) এর বাণীকে মেনে নিল বিজ্ঞান
পবিত্র কোরআন, মানসিক ও আত্মিক সমস্যার সমাধানসূত্রের পাশাপাশি দেহের নানা রোগ নিরাময়ের পথও বাতলে দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম রোগ প্রতিরোধের ওপরই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।

 কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসে এমন সব দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। যেমন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ক্ষুধার্ত না হলে খেতে বসবে না এবং পেট পরিপূর্ণ হবার আগেই খাওয়া শেষ কর।

রাসূল (সাঃ) ও ইমামগণ এমন সব খাদ্যদ্রব্যের নাম উল্লেখ করেছেন, যা ব্যাথা উপশমসহ নানা রোগ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখে। একই সাথে কুরআনে এমন অনেক খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানুষের মন-মানসিকতার ওপর খাদ্যের প্রভাবের কথাও কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

সূরা আল-বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মানব-জাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্য আছে, তা হতে তোমরা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ ।  

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে কিছু কিছু খাদ্য ও পানীয়কে হারাম বা অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এসব খাদ্য ও পাণীয় মানুষের শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে মদ, শুকরের গুশত ও মৃত প্রাণীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কুরআনে রোগ নিরাময়কারী কিছু খাদ্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালার শক্তি ও সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশও বটে। এছাড়া পবিত্র কুরআনে কিছু ওষুধের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে।  

পবিত্র কোরআনের একটি সূরার নাম আন- নাহল বা মৌমাছি। ফুলের মধু আহরণ ও মৌচাক তৈরীসহ মৌমাছির বিভিন্ন কর্মপ্রণালী সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরে সূরা আন- নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ওদের উদর হতে বিবিধ বর্ণ-বিশিষ্ট পানীয় নির্গত হয়ে থাকে, এতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগ-ব্যাধির প্রতিকার’। অর্থাৎ এই আয়াতে মধুর গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

news24bd.tv

আমরা আগে জানতাম মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফুল থেকে অতঃপর তা মৌচাকে মজুদ করে রাখে সরাসরি। আসলে তা নয়, বিজ্ঞান কিছুদিন আগে প্রমাণ করেছে মৌমাছির শরীর থেকে মধু বের হয়। অথচ পবিত্র কোরআন প্রায় সাড়ে ১৪ শ’ বছর আগেই বলে দিয়েছে মধু মৌমাছির শরীর থেকে বের হয়।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
  
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ
অর্থ: ‘আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেন: পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি কর। (সূরা: নাহল, আয়াত: ৬৮)।   

ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلاً يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থ: এরপর সব প্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। ’ (সূরা: নাহল, আয়াত: ৬৯)।

মৌমাছি আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট মধু আহরণ করে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ১২১)।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে মধুর মতো এত বেশী কার্যকর আর কোন উপাদান নেই’। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মধুর নানা বিশেষত্ব রয়েছে এবং তা রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর।

পবিত্র কুরআনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরেকটি দিক সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। অঅর তা হলো, শুক্রানু থেকে ভ্রুণ গঠন ও ভ্রুণের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়। কুরআনে বর্ণিত এ বিষয়গুলো আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

চৌদ্দ'শ বছরেরও বেশি সময় আগে যখন তৎকালীন সমাজে এ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা বিরাজ করছিল, তখন পবিত্র কুরআন স্পষ্ট ভাবেই ঘোষণা করে যে, শুক্রাণু জরায়ুতে স্থাপিত হয়। সূরা আল-মু'মিনুনের ১২ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে মৃত্তিকার উপাদান হতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি।

news24bd.tv

 পরে আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংস পিণ্ডে পরিণত করি এবং মাংস পিণ্ডকে অস্থি-পঞ্জরে, অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে মাংস দ্বারা ঢেকে দেই। অবশেষে আমি তাকে চরম সৃষ্টিতে পরিণত করি, অতএব আল্লাহ মহান, যিনিই মহান সৃষ্টিকর্তা’।

এছাড়া পবিত্র কুরআনে মানুষের সুস্থতার প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রোজা তথা সিয়ামের বিধান অন্যতম। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘রোজা রাখুন তাহলে সুস্থ্য থাকবেন’।  

আল্লাহর অহি ব্যতীত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) দ্বীন বিষয়ে কোন কথা বলেন না (নাজম ৩-৪)। তার যবান দিয়ে কোন মিথ্যা কথা বের হয় না। অতএব হে মানুষ! সব ছেড়ে ইসলাম মুখী হও। কুরআন ও হাদীছ মেনে নাও। দুনিয়া ও আখেরাতে সুখী হও।

news24bd.tv/আলী