পতিতাদের গমনাগমনের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী

পতিতাদের গমনাগমনের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী

Other

কুমিল্লা শহরের প্রানকেন্দ্র ষ্টেডিয়াম এলাকা। টাউন হল জিলা স্কুল সার্কিট হাউজ প্রান্তর জুড়ে রাতের নির্জন রাস্তা। ষ্ট্রীট পতিতাদের গমনাগমনের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী সেই পথে হাঁটতে থাকা মানুষগুলো। কুমিল্লার সন্তান আমি, রাতজাগা আমাদের কিছু বন্ধুদের ছোটবেলার অভ্যাস।

 

ফুল ফল চুরি করার জন্য আমাদের গ্যাং ছিল। দেশের মহল্লায় মহল্লায় যুগে যুগে এধরনের ব্যাপার স্যাপার দেখে বহু জেনারেশন বড় হয়েছে। মাঝেমধ্যে শব-ই বরাত শব-ই কদর কিংবা মেরাজের রাতে হঠাৎ করেই পতিতা উচ্ছেদে লাঠি হাতে মাঠে নেমে পড়তাম। এখন খারাপ লাগে, ওরা আসলে পতিতা না, সমাজের অব্যবস্থাপনার ত্রুটিতে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এই পথে এসেছে।

 

এখনও শহরের মধ্যাংশে রাতের বেলায় তাদের অবাধ বিচরন। আমরা বন্ধুরা রাত জেগে আড্ডা দেই। মাঝে মাঝে শুনতে পাই তাদের হৈচৈ। কোন খদ্দের হয়তো টাকা দেয়নি তাই শায়েস্তা করার জন্য ষ্ট্রীট পতিতারা একজোট হয়ে দৌড়ানী দিচ্ছে, এসব ঘটনার স্বাক্ষী পথচারী কিংবা আমরা রাতজাগা বন্ধুরা। কুমিল্লার আড্ডা শেষে বাসায় যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে দেখা হয়। কোন একটা মেয়ের মোবাইলে হয়তো বাজছে আমার গাওয়া একাকী গভীর রাতে গানটি। ষ্টেডিয়াম আর এসপি’র বাংলোর সামনে তারা গভীর শীতের রাতে আগুন পোহায়।  

আড্ডা শেষে যাওয়ার পথে এখনো কথা হয় তাদের সাথে, মামা ডাকে। মেয়েদের অনুরোধে সেলফিও তুলেছি। একসাথে বসে রাস্তায় আগুন পোহানোও হয়েছে। যতটুকু সম্ভব তাদের সাহায্যে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এরা আসলে পরিস্থিতির স্বীকার, কেউ স্বেচ্ছায় নিশ্চয়ই এরকম পেশায় আসতে চায়না। বাস্তবতা যার যার কাছে সবসময়ই কঠিন কষ্টিপাথরের মত। কত হাজারো কোটি কষ্টের চেপে থাকা কান্না মরে যায় তাদের হাসির দমকে আর ঝলকে। লক্ষ্য একটাই, পরিবারের সদস্য আর সন্তানদের মুখে খাদ্য তুলে দেয়া।  


ইয়াবার টাকা না পেয়ে কাঁচি দিয়ে মাকে হত্যা

৯৯৯ এ ফোন এক ঘন্টায় চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা উধাও

আল্লাহর কাছে যে তিনটি কাজ বেশি প্রিয়


রুট লেভেল থেকে বড় হয়েছি, প্রাচূর্যও দেখেছি ভরপুর। ফেসবুক থেকে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন নেই। কাজ করতে এসেছি ঢাকা শহরে, ঢুকেছি রঙীন দুনিয়ায়। আমার চোখেও ঘোর লেগেছে সত্যি, এখনো যে লাগেনা সেটাও অস্বীকার করব না। সুযোগের অভাবে বেশ ধরে থাকা কোট টাই হ্যাট কিংবা ক্যাপওয়ালা ভদ্রলোকদেরও আমার চেনা আছে। আর কিছু আছে ভদ্রমহিলা পারফর্মার। তাদের কেউ কেউ অনেক গনিত সমাধান করে ইন্ডাষ্ট্রীতে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছে। নামডাক অর্জন শেষে হয়েছে সোসাইটি গার্ল। এদের আচার ব্যবহার শব্দচয়ন আর হাসিমুখের অন্তরালে খদ্দের কালেকশন চলে। শুধু গান গেয়ে অভিনয় করে ইনকামের রাস্তা তৈরী করা সহজ ব্যাপার নয়।  

সমাজে তাদের জন্ম দেয়া নামধারী বন্ধু ডিরেক্টর কিংবা স্বামীরাও নেমে যায় ব্যবসায়। মুখে কুলুপ এঁটে নিজের আর্টিষ্ট বৌ’কে বারবনিতা বানিয়ে ছেড়ে দেয় লোকালয়ে। সুযোগ পাওয়া কামাতুর বিত্তশালীরা সেই পতিতাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সমাজে একটা অবস্থান তৈরীতে সহযোগীতা করে। আমরা শো’বিজের লোকজন এদেরকে চিনি। আমার কুমিল্লা’র ভাগ্নী পতিতাদের চেয়ে এরা আরো ভয়ঙ্কর। এ সমস্ত কলগার্ল কিংবা সোসাইটি গার্লদের কিছু ফ্যানফলোয়ার থাকে মজা লুটার জন্য। আমিও তাদের কাউকে ভাগ্নী বোন ভাবী ভেবেছিলাম, এখনো হয়তো ভাবতে বাধ্য হই। আসলে এগুলা সব হাওয়াই মিঠাই। আমরা পতিতা বলতে যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে দেহ ব্যবসার আদিরুপ। আমাদের জগতে সেই সোসাইটি গার্লরা ফেসবুক ষ্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে আরো বেশী মার্কেটিং করে।  

বিত্তশালী হওয়ার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা, অবশ্য এতে সময় কম লাগে। টাকার অভাবে থাকা মেয়ে আর্টিষ্টটা আজ ফাইভ ষ্টার হোটেলে পার্টি করছে পয়সাওয়ালা ফূর্তিবাজদের সঙ্গে। আর দোষ হচ্ছে বাচ্চাকাচ্চাদের মুখের খাবারের জন্য দিনের পর দিন জীবনের আনন্দ মাটি করে বেঁচে থাকা সেই রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মেয়েদের। আমার আশেপাশেও এরা আছে, ফনা তুলে নেচে চলছে মনের আনন্দে। পার্থক্য শুধু ষ্ট্যাটাসে, কেউ রাস্তায়, কেউ গ্র্যান্ড সুলতান কিংবা  ইন্টারকন্টিনেন্টালের মত ফাইভষ্টার হোটেলে। নিজেকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিতেই হলো - শত্রুর বন্ধুই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। শত্রুর সাথে মেলামেশা করা কেউ কখনোই আমার বন্ধু হতে পারেনা। এদের বিষমাখা ফনাওয়ালা উদ্ধত শির পিষে ফেলতে হবে পায়ের তালুতে।  

ভালবাসা অবিরাম...

(ফেসবুক থেকে)

news24bd.tv / কামরুল