ঝি ঝি কেন ধরে?

ঝি ঝি কেন ধরে?

অনলাইন ডেস্ক

হাতে বা পায়ে 'ঝি ঝি ধরা' বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারণত পা বা হাতের ওপর লম্বা সময় চাপ পড়লে সাময়িক যে অসাড় অনুভূতি তৈরি হয় সেটিকেই আমরা ঝি ঝি ধরা বলে থাকি। এই উপসর্গটির কেতাবি নাম 'টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া', ইংরেজিতে এটিকে 'পিনস অ্যান্ড নিডলস'ও বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু কেন হয় এমন
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমন পিনপিন কাঁটা কাঁটা হওয়াকে বলে Paraesthesia।

ঝি ঝি ধরার অনুভূতিটা আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা রহস্যজনক মনে হলেও এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কিন্তু খুবই সহজ। আমাদের দেহের সবখানেই অসংখ্য স্নায়ু রয়েছে যেগুলো মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকে। শরীরে রক্ত সরবরাহের জন্য সারা দেহে জালের মতো আছে রক্তনালি। এ রক্তনালি দুই ধরনের।
ধমনি এবং শিরা।

 শরীরের কোথাও কিছুক্ষণ একনাগাড়ে চেপে বসলে সেখানকার নার্ভ এবং রক্তনালিতে বাধা পড়ে। একদিকে রক্তনালিগুলো ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না, অন্যদিকে রক্তনালিতে থাকা নার্ভ কিংবা ওই অংশে থাকা নার্ভগুলো তাদের সংবেদনগুলো পাঠাতে বাধা পায়। কিছুক্ষণ পর সেই চাপ সরে গেলে হঠাৎ সেই অংশের রক্তনালিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়, নার্ভ তার সংবেদন বাধা থেকে বেরিয়ে ব্রেইনকে সংকেত পাঠায়। ব্রেইন হঠাৎ করে এমন থেমে গিয়ে আবার হঠাৎ ফিরে আসা সংবেদনকে ভুল করে পিনপিনের মতো ফিলিংস দেয়। আর তাতেই আমরা যা অনুভব করি-সেটাই pins and needles।


গুপ্তচরবৃত্তির ইসরাইলি জাহাজে ইরানের হামলা!

ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ডাবল ব্লকবাস্টার দৃশ্যম টু!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে পাক-ভারত!

অপো নতুন ফোনে থাকছে ১২ জিবি র‌্যাম


এটি কিছুক্ষণের জন্য থাকে, আবার নিজে নিজেই চলে যায়। তাই অনেকে একে temporary paraesthesia বলে। এটি বার বার এবং বেশি ঘটতে থাকলে তা শরীরের মধ্যে কোনো সমস্যার লক্ষণ। অনেক সমস্যার কারণে এমন পিনস অ্যান্ড নিডলস হতে পারে। তিনটি প্রধান কারণ আলোচনা করব, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত।

Pins and needles সচরাচর হাতে পায়ে বেশি হয়। ঘাড়, মুখ, পিঠ, পশ্চাৎদেশ, এসব জায়গাতেও দেখা দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞএস এম সিয়াম হাসান বলেন, "বসা বা শোয়ার সময় সেসব স্নায়ুর কোনো একটিতে চাপ পড়লে দেহের ঐ অংশে রক্ত চলাচলকারী শিরার ওপরও চাপ পড়ে। ফলে শরীরের ঐ অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে ঝি ঝি ধরতে পারে। "

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের শরীরে সুগার বেড়ে গেলে পায়ে এমন pins and needles অনুভব আসে। ট্রিটমেন্ট না করে এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পায়ের বিভিন্ন জায়গায় সংবেদন ক্ষমতা কমে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পায়ের সেনসেশন কার্যক্ষমতা কমে যায়, পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, পায়ের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। সমস্যাটিকে বলে ডায়াবেটিস ফুট।

Carpal tunnel syndrome হাতের কব্জির মধ্যে এক ধরনের ঝিনঝিন, পিনপিন কিংবা অবশ ভাব চলে আসে অনেকের। এটি মূলত বেশি হয় যারা অনেকক্ষণ কম্পিউটারের কিবোর্ডে কাজ করেন। এমনকি যারা অনেকক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে টেপাটিপি করেন, তাদেরও এমন কব্জিতে ব্যথা করতে পারে। কব্জির মধ্যে মিডিয়ান নার্ভ নামের একটি নার্ভ আছে, এটিতে চাপ পড়ার কারণে এমন হয়। বেশিক্ষণ এমন কাজ না করে এবং এমন পিনপিন অনুভব এলে হাতকে কয়েকবার ঝাড়া দিলে অস্বস্তিটি চলে যাবে।

Tight jeans syndrome বিশেষ করে মেয়েরা টাইট জিনস পরে বেশি। দীর্ঘক্ষণ এমন পরে থাকলে উরু, কোমর এবং পশ্চাৎদেশে অবশ অবশ অস্বস্তি ভাব লাগে। আবার এমন টাইট প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন অনেকক্ষণ রাখলে সেটাও অনেক চাপ দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমন সমস্যাকে বলে mergalgia paresthetica।

দীর্ঘসময় ঝি ঝি ধরার মত উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ঝি ঝি ধরার মত উপসর্গ যদি দীর্ঘসময় ধরে হতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কোনো অঙ্গে নিয়মিত ঝি ঝি ধরার ঘটনা ঘটলে বা বারবার ঝি ঝি ধরার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

news24bd.tv/আলী