সবসময় রবীন্দ্রনাথের কথা শুনতে নেই

জিয়াউল হক

সবসময় রবীন্দ্রনাথের কথা শুনতে নেই

Other

করোনা বিভিন্ন সময়ে প্রতিনিয়ত আমাদের শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা নিচ্ছে। শরীরে  ভিটামিন সি এবং ডি ঠিক আছে কিনা, জিঙ্ক আছে কিনা ইত্যাদি মাথায় রাখতে হয়। মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে আছে ভীতি এবং শংকা। সর্দি, কাশি হলেই ভয়, জ্বর হল তো কথাই নেই।

 

একবার আমার সর্দি, কাশি হলে আমার স্ত্রী বললেন, তুমি কোত্থেকে করোনা বাধিয়ে এসেছ, আল্লাহ মালুম; গতকাল থেকে আমারো কাশি শুরু হয়েছে। দু দিন পর আমার কাশি ভাল হয়ে গেল; তার ও হল। কিছুদিন পর তাঁর কাশি শুরু হল ভয়ানক ভাবে। আমার ও শুরু হল।

 

আমি আর ভয়ে বলতেই পারলাম না তোমার কাছ থেকে আমার কাশি শুরু হয়ে গেছে যদিও বা দুজনেরই ছিল নরমাল কাশি। যাই হোক,  শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার পাশাপাশি করোনা অত্যন্ত মহা গুরুতপুর্ন আরেকটা পরীক্ষা নিয়েছে, সেটা হল দাম্পত্য পরীক্ষা।  

প্রথম আলোর রিপোর্ট ও বলছে করোনার সময়ে বিচ্ছেদ বেড়ে গেছে। যাদের বিয়ের বয়স এক বছর বা তার কম তারা বেশ ভাল সময় কাটিয়েছেন। যারা ঠিকে গছেন, তাদের দাম্পত্য নিয়ে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবার সম্ভাবনা কম।  

দুজনেই ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন, তাদের ফাস্ট ইন কমান্ড কে আর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড কে। বেড়াল যা মরার ইতিমধ্যে মরেছে। যাদের বিয়ের বয়স এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, তারাও মোটামুটি এই সময়ের মধ্যে লকডাউনে থেকে পারস্পরিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠেছেন। তারা বুঝেছেন ফাস্ট ইন কমান্ড যাই কিছু বলুক, নীরবে সয়ে যেতে হবে।  

যদি পুরুষ ফাস্ট ইন কমান্ড হয় (সম্ভাবনা ক্ষীন!) সেক্ষেত্রে অযৌক্তিক কিছু বললেও স্ত্রীকে মেনে নিতে হয়েছে কারণ বাপের বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই; দরজা বন্ধ। আবার স্ত্রী যদি ফাস্ট ইন কমান্ড হয়, সে ক্ষেত্রে তিনি কিছু বললে পুরুষকে মেনে নিতে হয়েছে; রাগ দেখিয়ে বের হওয়ার উপায় নেই আর কষ্টেসৃষ্টে বের হলেও বাইরে হোটেল বন্ধ।  

যাদের বিয়ের বয়েস দশ বছরের বা বিশ বছরেরও বেশি তাদের পরীক্ষা ছিল সবচেয়ে কঠিন; যদিওবা কেউ কেউ বলেন, স্বামী-স্ত্রী বিশ বছর সংসার করলে তাদের সম্পর্ক টা অনেকটা ভাই বোনের মত হয়ে যায়।  

যাই হোক, তারা সত্যিকার অর্থে করোনার মধ্যে খুব কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন। নরমাল রুটিন হল, স্ত্রী মশারি টাঙ্গাবে বা স্বামী সারাদিন চাকরি করেন তাই স্ত্রী বাসায় রান্না করে। করোনার সময় দেখা গেল রুটিন পাল্টে গেল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী বেচারা মশারি টাঙ্গিয়েছেন অথবা বাসায় রান্না করেছেন। এর বাইরে আরও কাজ আছে, যেমন ঘর ঝাড়ু দেয়া, ঘর মোছা ইত্যাদি। অর্থাৎ বহু দিনের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ভেঙ্গে গেল।  

আবার স্ত্রী কে কাটতে হয়েছে চুল। আমার কাছে মনে হয় এটা ছিল, স্বামীর বা স্ত্রীর অনেকটা মানোন্নয়ন পরীক্ষার মতো বা প্রমোশনের ইন্টারভিউ এর মত। প্রশ্নকর্তার খুব বেশি আগ্রহ নেই প্রশ্ন করার প্রতি আর উত্তর দাতার ও আগ্রহ কম উত্তর দেয়ার দিকে। বিশ বছরের দম্পতি রবীন্দ্রনাথ এর কথা কে ফলো করেছেন।  

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “লোকে ভুলে যায়, দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই”। বিশ বছরের দম্পতি্র পক্ষে তো আর প্রতিদিন দাম্পত্য সৃষ্টি করা সম্ভব না; করলেও মহা সমস্যা হয়ে যাবে। একটা কৌতুক বলি। স্ত্রী স্বামীকে বলছে, 
“কাল থেকে তোমার অফিস খুলবে, তাই আমার খুব  মন খারাপ। “
স্বামী জিজ্ঞেস করল “কেন”? স্ত্রী বলল, “তোমার হাতের কাজ আমাদের বাসার বুয়ার চেয়ে বহুগুণ ভালো”।   

এসময় একটা জিনিসের দারুন চর্চা হয়েছে। সেটা হলো রান্না। যারা পারেন তারা তো করেছেন। যারা পারেন না, তারা  তাদের বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করেছেন। রমজানের ইফতারির মধ্যে জিলাপি খুব প্রিয় একটা আইটেম। রমজানের মধ্যে ইফতারির জন্য জিলাপির বানানোর দারুন চর্চা হয়েছে। নতুন নতুন জিলাপি উদ্ভাবিত হয়েছে।  

আমরা  জানি, জিলাপি আড়াই প্যাঁচ দিয়ে হয়। কেউ কেউ আবার সাড়ে তিন প্যাঁচ দিয়ে  জিলাপি বানিয়েছে। তারা হয়তো ভেবেছে, প্যাঁচ তো লাগানোর জিনিস, আস্তে আস্তে লাগাতে হয় তাই একটু বেশি করে দিলেই ভালো। এরমধ্যে আবার এসেছে পুরুষ জিলাপি। পুরুষ জিলাপি বুঝলেন না তো? পুরুষ জিলাপি হলো একদম সোজা, কোন প্যাঁচ থাকবে না।  

এখানেও একটা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যিনি রান্না পারেন না, তার বানানো জিলিপি বা অন্য কোন কিছু খেতে গেলেই যিনি খাবেন, তিনি বুঝতে পারবেন দুর্গতি টা কি! খাওয়ার সময় কিছুই বলা যাবে না; কোন বদনাম করা যাবেনা শুধু আলতো করে মুখে একটা মিষ্টি হাসি ধরে রেখে বলতে হবে, “তুমি কেমন করে গান কর হে গুনি, আমি অবাক হয়ে শুনি”!   

করোনার মধ্যে আবার সিনেমা বিশারদদের দেখলাম বেশ কদর রয়েছে। সিনেমা তো কমবেশি সবাই দেখি। কেউ ক্লাসিক পছন্দ করেন, কেউ একশন ধর্মী, কেউ আবার রোমান্টিক ঘরানার। অথবা কেউ পছন্দ করেন এডভেঞ্চারাস। ফেসবুকে দেখলাম, অনেককে সিনেমার লিস্ট জিজ্ঞেস করছে, কোন কোন সিনেমা দেখা দরকার। তখন সিনেমা বিশারদ যারা আছেন, তারা দেখলাম লিস্ট দিয়েছে।  

লিষ্টের মধ্যে আবার ভাগ আছে; আর্জেন্ট, সেমি  আর্জেন্ট, অডিনারি ইত্যাদি। লিস্ট এর মধ্যে সিনেমার নামের পাশে লেখা থাকে এটা কি রোমান্টিকধর্মী সিনেমা নাকি একশনধর্মী। রোমান্টিক সিনেমার ক্ষেত্রে আবার পাশে ডট ডট আছে। মানে, এই সিনেমাতে ডট ডট  আছে সুতরাং এটা একা একা দেখতে হবে।  


পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ বানানো হয়, প্রশ্ন আইজিপির

আমাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে: সামিয়া রহমান

বিমা খাতে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরও প্রচার প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

পোশাক খাতে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেললো বাংলাদেশ


তবে অনেকের কমেন্ট পড়ে এবং সিনেমার লিস্ট থেকে মনে হয়েছে, ডট ডট ঘরানার সিনেমা গুলো একটু বেশি জনপ্রিয়! একটা কৌতুক বলি। মাননীয় প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের বক্তৃতা থেকে শুনেছি। তাঁর এক বন্ধু একবার সিনেমা হলে গিয়ে একটা ছবি ৪/৫ বার দেখেছেন। ওই সিনেমায় একটা দৃশ্য ছিল, নায়িকা গোসল করছে আর সেই সময় একটা মেইল ট্রেন চলে যায়। তাঁর বন্ধু সিনেমাটা দেখেছিলেন ৫/৬ বার এই আশায় যে যদি একবার মেইল ট্রেন একটু লেট করে আসে!!

পুনশ্চঃ করোনার সময় সবাই সবাইকে সাবধান করেছে, এখন করোনা, ঘর থেকে খবরদার বের হবে না; তবে বের না হয়ে আবার জনসংখ্যা বাডিয়োনা। আল্লাহর রহমতে এখন করোনা কিছুটা কমেছে, তাই উপদেশ দেয়ার মত কেউ নেই। সে সুযোগে যদি কেউ দারুন উৎসাহে কাজে নেমে পড়েন আর গাইতে থাকেন, " আজ খেলা ভাংগার খেলা, খেলবি আয়, আয়, আয় আজ......" তাহলেই বিপদ। সবসময় রবীন্দ্রনাথের কথা শুনতে নেই।

news24bd.tv নাজিম