যেসব আমলে গোনাহ মাফ হয়

যেসব আমলে গোনাহ মাফ হয়

অনলাইন ডেস্ক

গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানি নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক রয়েছে। পাপের কারণে দ্বীনের ইলম পাপীর হৃদয়ে প্রবেশ করে না, পাপে জড়িত থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব হয় না, আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তার প্রতি থাকে না, পাপী দুনিয়াতেই লাঞ্ছনার স্বীকার হয় (এছাড়া আখেরাতে অবমাননাকর শাস্তি তো আছেই), লজ্জা-শরম দূর হয়ে যায়, গোনাহের পরিণতি জাহান্নাম, পাপের কারণে মানুষ হিংস্র ও পশু স্বভাবের হয়ে ওঠে, বরকত চলে যায় ও হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা শরীয়তে এমন কতিপয় আমল বাতলে দিয়েছেন যা সম্পাদন করলে গোনাহসমূহ মাফ হয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন,إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ  ‘তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হ’তে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’। (মুসনাদে আহমাদ; সহিহুল জামে‘ হা/২৬৮৭)।

এখানে কোরআন-হাদিসের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো-

গোনাহ মোচনকারী আমল সমূহ

মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করা। অর্থাৎ আমলে সালেহ সম্পাদন করা। ইসলামী শরী‘আতে এমন অনেক আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আলোচ্য নিবন্ধে পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো-

পরিপূর্ণভাবে ওজু করা ও মসজিদে গমন করা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ-

‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওজু করা, সালাতের জন্য অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক সালাতের পর আরেক সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)’।   (মুসলিম হা/৬০১; আহমাদ হা/৪৭৬; তিরমিযী হা/৫১; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন,

مَنْ تَوَضَّأَ هَكَذَا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَكَانَتْ صَلاَتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ نَافِلَةً

‘যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) ওজু করে, তার পূর্বেকার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার সালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়’। (মুসলিম হা/৫৬৬; ইবনু মাজাহ হা/২৮২)। তিনি আরো বলেন,

إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيْئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ.

‘কোনো মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওজুর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার মুখমন্ডলের গোনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত গোনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়। এভাবে সে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়’। (মুসলিম হা/২৪৪; আহমাদ হা/৮০২০)।


কেয়ামতের যত আলামত দৃশ্যমান

সূরা কাহাফ তিলাওয়াতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত

করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধা নেই ইসলামে

নামাজে মনোযোগী হওয়ার কৌশল


 

ওজুর পর সালাত আদায় করা
ওসমান বিন আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) পূর্ণাঙ্গরূপে ওজু করার পর বলেন,

مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِى هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، لاَ يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

‘যে ব্যক্তি আমার এ ওজুর ন্যায় ওজু করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোনো ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহলে তার পূর্বেকার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।   (বুখারি হা/১৫৯, ১৬৪; মুসলিম হা/২২৬; আহমাদ হা/৪১৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

لاَ يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيُصَلِّى صَلاَةً إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلاَةِ الَّتِى تَلِيْهَا-

‘কোনো মুসলিম উত্তম রূপে ওজু করে সালাত আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের সালাত পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’। (মুসলিম হা/২২৭)।

তিনি আরো বলেন,

مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ

‘যখন কোনো মুসলিমের নিকটে ফরজ সালাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি উত্তমরূপে ওজু করে এবং একান্ত বিনীতভাবে সালাতের রুকূ, সিজদাহ ইত্যাদি আদায় করে তাহলে সে পুনরায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হতে থাকে’। (মুসলিম হা/১৩৮; মিশকাত হা/২৮৬)।

আরাফার দিন ও আশূরার সিয়াম পালন করা
রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّى أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالَّتِى بَعْدَهُ.

‘আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট আরাফার দিনের সিয়াম সম্পর্কে আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেবেন’। (তিরমিযী, হা/৭৪৯, সহিহ ইবনু মাজাহ হা/১৭৩০; মিশকাত হা/২০৪৪)।

আশূরার সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ

‘আশূরা বা ১০ই মুহাররমের সিয়াম আমি আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (সগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে’। (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৪)।

খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে সালাত আদায় করা 
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلاَّهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ.

‘আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওজু করবে, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করবে এবং সালাতের রুকূ-সিজদাহ ও খুশূ-খুযূকে পরিপূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর উপর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে এরূপ করবে না, তার জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দেবেন’। (আবু দাউদ হা/৪২৫; সহিহ আত-তারগীব হা/৫৭২; মিশকাত হা/৫৭০, সনদ সহিহ)।   

তওবা করা
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহসমূহ পরিবর্তন করে দিবেন নেকি দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

উপরোক্ত আমলসমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পাপ মোচনের জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অধিক হারে নেকি অর্জনের তাওফিক দিন এবং জান্নাতুল ফেরদাউসের পথ সহজ করে দিন। আমিন!

 news24bd.tv/আলী