সূরা মুহাম্মদের বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

সূরা মুহাম্মদের বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

অনলাইন ডেস্ক

সূরা মুহাম্মদ পবিত্র কুরআনের ৪৭তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩৮। সূরাটি হিজরতের পরে মদীনায় নাযিল হয়েছিল। সূরা মুহাম্মদের ২ নম্বর আয়াতের অংশ থেকে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান নামটি উল্লেখিত হয়েছে। এ ছাড়া এ সূরার আরো একটি বিখ্যাত নাম “কিতাল”। এ নামটি ২০নং আয়াত থেকে গৃহীত হয়েছে।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

সূরাটি নাযিল করা হয়েছিল ঈমানদারদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার জন্য।

এ বিষয়ে প্রাথমিক পথনির্দেশনা দেয়াই এর আলোচ্য ও বক্তব্য। এ দিকটি বিচার করে এর নাম “সূরা কিতাল”ও রাখা হয়েছে।

সূরার প্রথমেই বলা হয়েছে যে, এখন দুটি দলের মধ্যে মোকাবিলা হচ্ছে। এ দুটি দলের মধ্যে একটি দলের অবস্থান এই যে, তারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অপর দলটির অবস্থান হলো, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থকে তাঁর বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যে সত্য নাযিল হয়েছিল তা তারা মেনে নিয়েছে। এখন আল্লাহ তা’আলার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলো, প্রথমোক্ত দলটির সমস্ত চেষ্টা-সাধনা ও কাজ-কর্ম তিনি নিষ্ফল করে দিয়েছেন এবং শেষোক্ত দলটির অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন।

এরপর মুসলমানদের সামরিক বিষয়ে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পথে কুরবানী পেশ করার জন্য তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদের এ বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, ন্যায় ও সত্যের পথে তাদের প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। বরং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই তারা ক্রমান্বয়ে এর অধিক ভাল ফল লাভ করবে।

তারপর কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রচেষ্টাই কার্যকর হবে না। তারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত খারাপ পরিণামের সুম্মুখীন হবে। তারা আল্লাহর নবীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়ে মনে করেছিলো, যে, তারা বড় রকমের সফলতা লাভ করেছে। অথচ এ কাজ করে তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেরা নিজেদের জন্য বড় রকমের ধ্বংস ডেকে এনেছে।

এরপর মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বে এসব মুনাফিক নিজেদেরকে বড় মুসলমান বলে জাহির করতো। কিন্তু এ নির্দেশ আসার পরে তারা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ চিন্তায় কাফেরদের সাথে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেছিল যাতে তারা নিজেদেরকে যুদ্ধের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাদেরকে স্পষ্টভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহ এবং তাঁর দীনের সাথে মুনাফিকীর আচরণ করে তাদেরকে কোন আমলই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। এখানে যে মৌলিক প্রশ্নে ঈমানের দাবীদার প্রতিটি ব্যক্তির পরীক্ষা হচ্ছে তা হলো, সে ন্যায় ও সত্যের সাথে আছে না বাতিলের সাথে আছে? তার সমবেদনা ও সহানুভূতি মুসলমান ও ইসলামের প্রতি না কাফের ও কুফরীর প্রতি। সে নিজের ব্যক্তি সত্তা ও স্বার্থকেই বেশী ভালবাসে না কি যে ন্যায় ও সত্যের প্রতি ঈমান আনার দাবী সে করে তাকেই বেশী ভালবাসে? এ পরীক্ষায় যে ব্যক্তি মেকী প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে তার নামায, রোযা এবং যাকাত কোন প্রতিদান লাভের উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া তো দূরের কথা সে আদৌ ঈমানদারই নয়।

আরও পড়ুন:


আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

একদিন পরই সুর পাল্টালেন এমপি একরাম

প্রথমবারের মতো ৭ ই মার্চ উদযাপিত হবে জাতীয় দিবস হিসাবে

ভাসানচর পুরোপুরি নিরাপদ ও বাসযোগ্য এক দ্বীপ


অতপর মুসলমানদের উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন নিজেদের সংখ্যাল্পতা ও সহায় সম্বলহীনতা এবং কাফেরদের সংখ্যাধিক্য ও সহায় সম্বলের প্রাচুর্য দেখে সাহস না হারায় এবং তাদের সাছে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ না করে। এতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের দুঃসাহস আরো বেড়ে যাবে। বরং তারা যেন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে বাতিলকে রুখে দাঁড়ায় এবং কুফরের এ অগ্রাসী শক্তির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আল্লাহ মুসলমানদের সাথে আছেন। তারাই বিজয়ী হবে এবং তাদের সাথে সংঘাতে কুফরী শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।

সর্বশেষে মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার আহবান জানানো হয়েছে। যদিও সে সময় মুসলমানদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। কিন্তু সামনে প্রশ্ন ছিল এই যে, আরবে ইসলাম এবং মুসলমানরা টিকে থাকবে কি থাকবে না। এ প্রশ্নের গুরুত্ব ও নাজুকতার দাবী ছিল এই যে, মুসলমানরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের দীনকে কুফরের আধিপত্যের হাত থেকে রক্ষা করার এবং আল্লাহর দীনের বিজয়ী করার জন্য তাদের জীবন কুরবানী করবে এবং যুদ্ধ প্রস্তুতিতে নিজেদের সমস্ত সহায় সম্পদ যথা সম্ভব অকৃপণভাবে কাজে লাগাবে। সুতরাং মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, এ মুহুর্তে যে ব্যক্তি কৃপণতা দেখাবে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না , বরং নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ মানুষের মুখাপেক্ষী নন। কোন একটি দল বা গোষ্ঠী যদি তার দীনের জন্য কুরবানী পেশ করতে টালবাহানা করে তাহলে আল্লাহ তাদের অপসারণ করে অপর কোন দল বা গোষ্ঠীকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।

news24bd.tv আহমেদ