সারাবছর গালি খাওয়া নারীরা আজ কিছুটা ছাড় পাবেন

সারাবছর গালি খাওয়া নারীরা আজ কিছুটা ছাড় পাবেন

Other

সারাবছর গালি খাওয়া, ঘৃণার শিকার হওয়া নারীবাদীরা আজ কিছুটা ছাড় পাবেন। “নারী হলো মায়ের জাত” বলা  ঘরে নির্ভরতার স্ত্রী টি না থাকলে পুরুষেরা কি কি সমস্যায় পড়তে পারতো তার আবেগপ্রবন কিছু কিছু বর্ণনা আসবে পুরুষদের দিক থেকে। ওদিকে পার্পল বা ল্যাভেন্ডার কালারে ছেয়ে যাওয়া কিছু লীন ইন ধরনের কর্পোরেট নারীবাদ আমরা দেখতে পাবো। অনেক আগে গোধুলী আপার তোলা একটা ছবির কথা আমার মনে পড়বে।

পেছনে লাক্স এর নারী দিবস পালনের বিরাট বিলবোর্ড এর সামনে গোলাপের বালতি মাথায় ফুল বিক্রেতা নারীর গর্বিত দাঁড়িয়ে থাকা। ছবিটা বার্তা দিচ্ছিল, "সংগ্রাম নেবেন না সৌন্দর্য্য?" বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হবে। সারাবছর মেয়েদের ঊনচোখে দেখা কিছু মিডিয়া হাউজ “আজ হাউজ চলবে নারীর নেতৃত্বে” মার্কা ফাইজলামী করবে। তবু তো উদযাপন! 

জানিনা বায়োলজিকালি নারী না হলে নারীর অধ:স্থনতার বেদনা বুঝতাম কি না।

জীবনের মোটামুটি বড় একটা পথ হেঁটে এসে, নারীবাদকে এক ভিন্নতর চেহারায় চাক্ষুষ  করার অভিজ্ঞতা হলো। প্রচুর শাড়ি পরা পুরুষ দেখলাম। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ দেখলাম, নারীবাদকে ব্যবহৃত হতে দেখলাম। রাজনীতি নিয়ে উচ্চকিত লিজেন্ডদের দেখলাম নারীর অধিকার নিয়ে টুঁ শব্দটিও না করতে।  

গতবছর একটা বুক ক্লাব এর আমন্ত্রণে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে লেখক হয়ে ওঠার গল্প বলতে বলতে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দেয়া। একজন অল্পবয়সী তরুণ, নাম জুয়েল-খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন-পুরুষ নির্যাতন কি পরিমাণ হয় আপনার ধারনা আছে? বেকার আমাকে কি একটা চাকরীজীবী মেয়ে বিয়ে করে দায়িত্ব নেবে? 

আমাকে কিন্তু ঠিকই বউ পালতে হবে। জানেন আমার এক বন্ধু রাতে ঘরে থাকতে পারে না বউ এর নির্যাতনে? বউ ঘ্যানঘ্যান করে, সহ্য হয় না ওর। আরেকজন বললেন, পুরুষেরাও বউ এর হাতে মার খায়, একটা বউ মার খেলে যেমন সহজে বলতে পারে, একটা পুরুষ কিন্তু মার খেলে তা বলতে পারে না…”

অনেকগুলো পয়েন্ট। জানিনা অন্যরা কি বলবেন, আমি কিন্তু সত্যিই মনে করি, এবার কাজ করা দরকার পুরুষের উপরে। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন অনেক হয়েছে, এইবার নজর দেয়া উচিত পুরুষের বেদনার দিকে। এটা খুবই অপমানজনক যে একজন পুরুষকে সফল হবার মাপকাঠি হিসেবে সবসময় প্রমান করতে হয় যে সে অর্থনৈতিকভাবে সফল।  


বিশ্ব নারী দিবস আজ

নারীর কর্মসংস্থান হলেও বেড়েছে নির্যাতন নিপীড়ন

অস্তিত্ব রক্ষায় এখনো সংগ্রামী নারী, তবে আজো ন্যয্যতা আর নিরাপত্তা বঞ্চিত

সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারীরা


তাকে ব্রেড আর্নার হতেই হয়। নো অল্টারনেটিভ। এই ভার যতদিন না নামছে পুরুষের কাঁধ থেকে পারিবারিক নির্যাতন কমবে না বোধহয়। যে আপনাকে খাওয়াবে পরাবে সে নির্যাতনও করবে এই সেদিনও এক জরিপে এই ভয়ংকর ভাবনা উঠে আসছে।  

কাজ করা দরকার শাড়ি বা মেয়েদের পোশাক পরা শরীরে নারী কিন্তু মননে ব্যাটাগুলো নিয়েও। যারা শুধুই দমন করতে চান, দমনে খোঁজেন নিজের স্বাধীনতা।  

আমার প্রতিদিনের যুদ্ধ, আমার প্রতিদিনের বেদনা আমাকে একটা নারী দিবসের সামনে আর দাঁড়াতে দ্যায় না। গণ পরিবহনে ৯৪ ভাগ নারী হয়রানী হন, পরিবারে ৮৪ ভাগ নারী নির্যাতনের শিকার হন, ধর্ষনের হিসাব ভীতিকর, ধর্ষণের মামলার বিচার হয় না ৯৩ ভাগ- সারাদেশ তোলপাড় করা পাঁচ বছরের শিশু পূজার ধর্ষনের বিচার হয়নি।

তার শরীর থেকেও আসে পেশাবের তীব্র গন্ধ, নারী বান্ধব প্রশাসন নেই, কর্মক্ষেত্রে হয়রানীর শিকার অসংখ্য নারী, স্কুলে যাবার পথে নিজেকে হিজাবে বোরখায় মুড়িয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না ৯০ ভাগ ছাত্রী, যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন, ওয়াজ মাহফিল আর জুম্মা নামাজের খুতবায় প্রায় শতভাগ জুড়ে নারী অবমাননা-এগুলো কোনটাই বায়বীয় হিসাব নয়, সব পরিসংখ্যান, রিসার্চ। আমার কাছে প্রতিটা দিনই নারী দিবসের কথাগুলো বলার মতো জরুরী।

আসেন সাইবার বুলিং এ। অন্যপক্ষের প্রতিটা ভিডিও লিংকের নিচে অতিথিদের সহ আমার কপালে সবচেয়ে কমন যে মন্তব্যটি জোটে, তা হলো- বেশ্যা। অতিথি সে রোকেয়া কবীরের মতো বর্ষীয়ান কেউ হোন, জিনাত আরা হকের মতো প্রায় মাঝবয়সী অথবা তরুনী কোনও নারী- যেই হোন- গালি বাঁধা। আমি এইসব মনে রাখি। কোন সমাজটাকে আমরা নারীর বাসযোগ্য করতে চাইছি, কোন অন্ধের দেশে বেঁচতেছি আয়না- তা আমি মনে রাখি।  

ভয়ংকর এক নারী বিদ্বেষী সমাজে বাস করে আমরা যেভাবে সিমপ্যাথাইজড হই পুরুষের প্রতি, পুরুষের দায়িত্বের বোঝার প্রতি, পুরুষ কি এ্যামপ্যাথাইজড হয় সেরকমই? না কি নারীকে ঊন চোখে দেখে দয়া করে মাত্র? ধর্ম কেন চিরকাল পুরুষের পক্ষে থাকে? রাষ্ট্র কেন কেবলই সংবিধানে সকল নারীই সমান বলে খালাস পায়?

কেন আইন আর বিচার নারীর পক্ষে থাকে না? বাপের সম্পত্তি মেয়ে সন্তান কেন পায় না নিয়ম অনুযায়ী? সন্তানের কাস্টডি কেন হয় বাবার? এইসব অতি পুরোন, ক্লিশে অথচ অমিমাংসিত প্রশ্নের জবাব এখন রাষ্ট্র, সমাজ, সমাজপতি, আইনপ্রণেতাদের কলজের ভেতর থেকে টেনে বের করার সময় আসছে।  

লং ওয়ে টু গো। এখনই যেন ক্লান্ত হোসনে আমার মন! সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা। প্রতিবছর পাশে থাকা পুরুষদেরও আমি নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু ক্রমশ তারা বিরল প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছেন।   তাদের আর দেখা যায় না বিশেষ। তবু। তবু শুভেচ্ছা।

ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাংবাদিক
news24bd.tv/আয়শা