শিশুকে বেধড়ক পেটানো বন্ধ করুন

আনোয়ার সাদী

শিশুকে বেধড়ক পেটানো বন্ধ করুন

Other

শেষ পর্যন্ত ভিডিওটি আমিও ফেইসবুকে দেখেছি। তাগড়া এক লোক একটা শিশুকে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পোশাক থেকে পরিচয় স্পষ্ট হলো। তিনি মদ্রাসার শিক্ষক আর শিশুটা হলো ছাত্র।

এরপর বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় নিউজটা এলো।  

শিশুকে বেদম পেটানোর কিছু স্টিল ছবি প্রচার হলো। এবার আমি ঘটনার গভীরতা বোঝার জন্য ভিডিওটি দেখলাম। যা দেখা গেলো তার বর্ণনা করা কঠিন।

এতো ক্রোধ শিশুর সঙ্গে দেখা যায় না।  

পত্রিকা পড়ে যা জানলাম তা হলো, মঙ্গলবার শিশুটির সঙ্গে তার বাবা মা দেখা করে। অভিভাবকরা চলে যাওয়ার পর আট বছরের ছাত্রটি বাইরে যায়। সেখান থেকে তাকে ধরে আনা হয়। বেধড়ক পেটানো হয়।  

গতকাল শিশুটির জন্মদিন ছিলো। ধারনা করি তার বাবা মা হয়তো এই দিনে সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলো। এতো কম বয়সের শিশু বাবা মা কে আরো অনেক সময় ধরে কাছে রাখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। এটা বোঝার মতো পরিপক্কতা না এলে একজন মানুষ শিক্ষক হিসাবে কীভাবে পরিপক্ব হবেন, তা বুঝা মুশকিল।  


বাঁচতে চাইলে মেনে চলুন

পরিচিত অনেকে মরে যাচ্ছে

নোয়াখালীর ঘটনা পশুদেরও লজ্জা দেবে

ছাত্রীর দুঃখজনক মৃত্যু, দিহান ও ভরসার প্রেম


শাসন করা আর রাগ মেটানো এক কথা নয়। নিয়ম মানতে বাধ্য করা আর বেধড়ক পেটানো এক কথা নয়। অনুভূতির এই পাঠগুলো অনুধাবন করা দরকার। একবার যুদ্ধের সময় হজরত আলী (রাঃ) বিপক্ষের এক যোদ্ধাকে প্রায় কাবু করে ফেলেন। যে কোনো মুহূর্তে তাকে তিনি গলা কেটে দিতে পারেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো।  

তখন সেই বিপক্ষের লোকটি হজরত আলী (রাঃ) মুখে থু থু মারেন। হজরত আলী (রাঃ) তখন সেই যোদ্ধাকে ছেড়ে দেন। তাকে আর আঘাত করেননি।  

পরে হজরতের কাছে এই বিষয়ের একটি ব্যাখ্যা চাইলে তিনি সমসাময়িকদের জানান, যেই মুহুর্তে যোদ্ধা থু থু ছুঁড়ে মারেন, তখন তাঁর ভেতরে ক্রোধ জেগে ওঠে। তিনি যদি তখন যোদ্ধাকে হত্যা করেন তাহলে, জগতে যে যা জানুক, মনে মনে হজরত আলী জানতেন, তিনি ক্রোধ চরিতার্থ করছেন।  

ফলে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজের ক্রোধ মেটানোর জন্য যুদ্ধ করছেন না, তা নিশ্চিত করতেই সেই বিপক্ষের যোদ্ধাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাহাবাদের এই কাহিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারির মারকাযুল ইসলামি একাডেমির মাওলানা ইয়াহিয়া না ই জানতে পারেন। তার তো এটা জানা থাকা দরকার ছিলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের এভাবে বেধড়ক পেটানো দেশের প্রচলিত আইনের লংঙ্ঘন।
 
এই ঘটনায় শিক্ষকের নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলো না। আবার দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাও দেখা গেলো না। আরো অনেক ঘটনার মতো এটাও প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, পরে মূল ধারার গণমাধ্যমে এসেছে।  প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিতে হয়, ইউএনও রাতেই সেই মাদ্রসায় গেছেন। সেই শিক্ষককে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিশুটির পিতা মাতা প্রথমে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করতে অনীহা জানিয়েছিলেন। পরে শিশুর পিতা মামলা করেছেন।   

ফলে, ঘটনাটি এখন বিচারের আওতায় এসেছে বলা যায়।  যারা এই নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন তাদের মনের কতো ক্ষতি হলো, তার কোনো পরিমাপ বা হিসাব করার কেউ এদেশে নেই।  


আপনি কী শেখ হাসিনার ফোন পেয়েছেন?

যুক্তরাষ্ট্রে মারামারি কী হবেই?


শিশুটির পিতামাতার মনোভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। শিক্ষকের মর্যাদা কবিতার মতো তারাও হয়তো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে চাননি। কিংবা একজন মাওলানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা হয়তো গুনাহের ভাগিদার হতে চাননি। আমি ঠিক জানি না, কী চিন্তা তাদের মাথায় কাজ করছে। আমি মনে করি মাদ্রসায় নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে আলেমদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে তাদেরকে কথাও বলতে হবে। যারা দুজাহানের অশেষ নেকির বিষয়ে মানুষকে শিক্ষা দেয়, মাদ্রাসায় শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে তাদেরও কথা বলা দরকার।  

শিশু মানে শিশু। সে মায়ের কোলে থাকুক, স্কুলে যাক, মাদ্রাসায় যাক। সবার আগে শিশু হিসাবে প্রাপ্য নিরাপত্তা, আদর, সুযোগ তাদের দিতে হবে। শিশুর প্রতি সব ধরনের অবমাননা ও সহিংসতার প্রতিবাদ জারি রাখলাম।     

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর।

#  ৮ বছরের শিশুর উপর পাশবিক নির্যাতন মাদ্রাসা শিক্ষকের (ভিডিও)

news24bd.tv নাজিম