বৈঠক নয়, দেখা করতে এসেছিলেন হেফাজত নেতারা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
যারা আল্লাহর দিদার পাবেন
অনলাইন ডেস্ক
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনিই বরকতময় সত্তা, যার হাতে রাজত্ব। তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিতে কোনো তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফেরাও; কোনো ফাটল দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার তাকিয়ে দেখ তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য জলন্ত অগ্নির শাস্তি। যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। যখন তারা সেখানে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে।.... অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামিরা দূর হোক। নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১-১২)
ঈমানদার নারী-পুরুষের পরম চাওয়া মহান আল্লাহর দিদার। যুগে যুগে খোদাপ্রেমিক বান্দারা আল্লাহর দিদার ও সাক্ষাৎ লাভের অভিলাষে অকাতরে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। আল্লাহর প্রেমে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর দিদার পেতে তুর পাহাড়ে গিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর দিদার লাভ করা কি সম্ভব? সম্ভব কি তাকে দেখা? মানুষ কি চর্মচোখে দেখতে পারে তার স্রষ্টাকে? হ্যাঁ, মানুষ আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাৎ লাভ করবে। নিজ চোখেই দেখবে আল্লাহর মহান সত্তা। তবে দুনিয়ার জমিনে নয়; দেখবে পরকালে। জান্নাতবাসীরা প্রাণ খুলে দেখবেন মহান আল্লাহকে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে তাকে দেখার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, তোমাদের আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২৩)
মুমিন হৃদয়ে আল্লাহর দিদার ও দর্শনের কামনা প্রবলভাবে বিদ্যমান। মুমিনের প্রকৃত বন্ধু ও সাহায্যকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তাই তো মুমিন-মুসলমানের হৃদয় লালায়িত থাকে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫)। হাদিসেও এ বিষয়টি সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত ওবাদা ইবনে সামেত (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যেই ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালোবাসে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ ভালোবাসেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।
অভাব দুর হবে, বাড়বে ধন-সম্পদ যে আমলে
সূরা কাহাফ তিলাওয়াতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত
করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধা নেই ইসলামে
হজরত আয়েশা (রা.) বা নবীজির অন্য কোনো স্ত্রী বললেন, আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। নবীজি বললেন, এটা উদ্দেশ্য নয়। মুমিন বান্দার নিকট যখন মৃত্যু হাজির হয়, তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্মানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার সামনের বস্তু থেকে প্রিয় আর কিছু থাকে না। সে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে। আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর কাফেরের যখন মৃত্যু হাজির হয়, তাকে জাহান্নামের আজাব ও শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার সামনের বস্তু তার কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বস্তু হয়। সে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করে।’ (বুখারি : ৬৫০৭)
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার বা সাক্ষাৎ এক মহা নেয়ামত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে যত নেয়ামত দান করেছেন এবং আখেরাতে যত অচিন্ত্যনীয় নেয়ামত ও হুর গেলমান দান করবেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হবে আল্লাহর দিদার। আল্লাহর দিদারের সামনে অন্য সব নেয়ামত একেবারেই তুচ্ছ মনে হবে। আল্লাহর দিদার লাভ করার পরে অন্যান্য নেয়ামতকে বেমালুম ভুলেই যাবে। কেমন হবে সেই বহু প্রত্যাশিত প্রবল আকাক্সিক্ষত শুভমুহূর্ত; যখন মুমিনরা দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালাকে? হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘জান্নাতিরা নেয়ামতের মধ্যে দিন কাটাতে থাকবে। হঠাৎ ওপরের দিক থেকে তাদের ওপর একটি নূর উদ্ভাসিত হবে। তারা ওপরের দিকে মাথা তুলে তাকাবে। দেখবে, মহান আল্লাহ তাদের ওপর থেকে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছেন।
আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের বলবেন, হে জান্নাতবাসী! আসসালামু আলাইকুম। নবীজি (সা.) বলেন, এরপর আল্লাহ জান্নাতিদের দিকে তাকাবেন জান্নাতিগণও আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে। অতঃপর তারা অন্যান্য নেয়ামতের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না। তারা অপলক তাকিয়ে থাকবে যতক্ষণ না আল্লাহর সত্তা পর্দার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং তার নূর ও বরকত তাদের ওপর তাদের ঘরসমূহে অবশিষ্ট থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৪)
কেয়ামতের দিন হাশরের মাঠে ঈমানদার নেককার বান্দারা আল্লাহ তায়ালাকে সরাসরি দেখবে। আল্লাহকে দেখে তাদের চোখ শীতল হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তার পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।’ (সুরা কিয়ামাহ : ২২-২৩)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একবার কিছু মানুষ জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রভুকে দেখব? নবীজি (সা.) বললেন, মেঘমুক্ত পূর্ণিমার ভরা চাঁদ দেখতে তোমাদের কষ্ট হয়? তারা বলল, না। নবীজি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়? তারা বলল, না।
নবীজি বললেন, তোমরা কেয়ামতের দিন তাকে এভাবেই দেখবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭৪)। রাতের আকাশে ভেসে থাকা পূর্ণিমা চাঁদের স্নিগ্ধতা পৃথিবীর সব মানুষ নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে, কেয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দারাও আল্লাহ তায়ালাকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবে।
তবে কাফের ও অবিশ্বাসীরা আল্লাহ তায়ালাকে দেখতে পাবে না। তারা দুনিয়াতেও যেমন আল্লাহকে দিব্য চোখে দেখার সুযোগ পায়নি, তেমনি আখেরাতে সে সুযোগ মানবজাতির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরও তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। দুনিয়ার নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা মুসলমান-কাফের, মুমিন-মুশরিক নির্বিশেষে সবাইকে দান করেন। বরং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী নেয়ামত কাফেরদের বেশি দান করেন। কিন্তু পরকালের চিরস্থায়ী নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। কোনো বেঈমান ও কাফের পরকালের নেয়ামতের একটি ফোটাও পাবে না। আল্লাহ তাদের প্রতি এতটাই রাগান্বিত থাকবেন যে, তাদের সাক্ষাৎও দেবেন না। আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, ‘কখনও নয়, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে। অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুতাফফিফীন, আয়াত : ১৫-১৬)।
আল্লাহ হলো সেই মহান সত্ত্বার মূল নাম যিনি সমস্ত মাখলুকাতের রব। ‘ইলাহ’ মূল শব্দ হতে এসছে তার দুটি অর্থ আছে। প্রথমটি হলো প্রেমের আকর্ষণে কারো প্রতি ঝুঁকে যাওয়া, অগ্রসর হওয়া। দ্বিতীয়টি হলো, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবার আশায় কারো কাছে আশ্রয় লওয়া ও আত্মসর্মপণ করা। সুতরাং আল্লাহ আমাদের ইলাহ, তাঁর প্রেমেই অন্তর পরিপূর্ণ থাকবে। তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যই আমাদের লক্ষ্য। আমিন।
news24bd.tv/আলী
পরবর্তী খবর
মন্তব্য