আমি মারা গেলে স্যার লাশটা বাড়িতে পাঠায় দিয়েন

আমি মারা গেলে স্যার লাশটা বাড়িতে পাঠায় দিয়েন

Other

আজ থেকে নয় বছর আগের ঘটনা। ১৩ মার্চ ২০১২। ভীষণ বিষন্ন ছিল সেদিনের সকাল। মেঘনায় শরীয়তপুর-১ লঞ্চ ডুবেছে, শত শত মানুষ নিখোঁজ।

এমন খবরে ঢাকা থেকে দ্রুত ছুটে যাই মুন্সিগঞ্জের মেঘনায়। উদ্ধারকারী জাহা‌জ রুস্তমে বসে মানুষের আহাজারি দেখছিলাম। সেখান থেকে নিউজ লিখে পাঠাচ্ছিলাম ঢাকায়। লঞ্চ ডুবির ২৪ ঘন্টা পর স্বজনেরা আর জী‌বিত নয়, লাশের জন্য আহাজারি শুরু করলেন।
কিন্তু এতো লাশ কীভাবে পানি থেকে উঠানো হবে? 

জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনীসহ আরও অনেক সংস্থার লোকজন আসছে। তাদের অনেকের কাছে আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, আছে দে‌শি-বিদেশি ট্রে‌নিং পাওয়া লোকজন। কিন্তু তারা লাশ তুলতে পারছে না। আধুনিক প্রশিক্ষণ পাওয়া ডুবুরিরা পানিতে নামে কিন্তু লাশ পায় না। লোকজনের আহজারি তখন বাড়ছে। এই সময়ে সেখানে রুগ্ন লিক‌লিকে  শরীরে হা‌জির হলেন ফায়ার সার্ভিসের এক ডুবু‌রি। তাকে জরুরী খবর দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে।  

এসেই পানিতে নামলো লোকটা। সব বা‌হিনীর সদস্যরা তখন বিস্ময় নিয়ে দেখছে- লিকলিকে সেই লোকটা একেকটা ডুব দেয়। দুইটা করে লাশ তুলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি একাই ৩০-৩৫ টা লাশ তুলে ফেললো।  

মেঘনার এই ঘটনায় যতোদূর মনে পড়ে ১১২ টা লাশ উদ্ধার হয়েছিল। যেসব স্বজনেরা লাশ পাচ্ছিলেন তাদের চোখে তখনো কান্না, শেষবারের মতো স্বজনকে দেখতে পাবার স্বস্তি। আর এই স্বস্তির নায়ক আবুল খায়ের। ফায়ার সার্ভিসের ডুবু‌রি।  


অভাব দুর হবে, বাড়বে ধন-সম্পদ যে আমলে

সূরা কাহাফ তিলাওয়াতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত

করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধা নেই ইসলামে

নামাজে মনোযোগী হওয়ার কৌশল


আমি মূল নিউজের সঙ্গে সেদিন আরেকটা নিউজ করেছিলাম খায়ের ভাইয়ের বীরত্ম নিয়ে। অসম্ভব সাহসী মানুষ। প্রচণ্ড স্রোত বা যতো প্র‌তিকূল প‌রি‌স্থি‌তি হোক, ডাক পড়ে এই আবুল খায়েরের।   উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন জানতে চায়, আবুল খায়ের, তুমি কি পানির নিচে যেতে পারবে?’ খায়েরের উত্তর, ‘পারব স্যার। কিন্তু ফিরে আসতে পারব, সে আশা নাই। আমি মারা গেলে স্যার লাশটা বাড়িতে পাঠায় দিয়েন। '

আবুল খায়েরের বীরত্মগাঁথা বলে শেষ করা যাবে না। গোটা দেশের সব বা‌হিনী মিলে একজন আবুল খায়ের বিরল। কিন্তু শুনে অবাক হবেন এই খায়েরের সংসার চলে অ‌তিকেষ্ট। আমাকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলেটা লেগুনা চালায়। স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তবে এতো কিছুর পরেও খায়ের তাঁর দায়িত্ব থেকে কখনো পিছয়ে থাকেন না।  

শুধু কী লঞ্চডু‌বি! ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে অসংখ্য লঞ্চডু‌বি, রানা প্লাজায় ভবন ধ্বস, তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন, নিমতলীতে আগুনহ বহু কিছু দেখতে হয়েছে। প্র‌তিটা ঘটনায় দেখেছি, আবুল খায়েরের মতোই ফায়ার সা‌র্ভিসের সদস্যরা জীবনের ঝুঁ‌কি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন।  

অনেক বা‌হিনীর মতো আধুনিক যন্ত্রাপা‌তি থেকে তারা হয়তো অনেক পিছিয়ে, কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার পরেও ফায়ার সা‌র্ভিসের প্র‌তিটা সদস্য তাদের মমত্ববোধ দিয়ে সব থেকে এগিয়ে থাকেন। গভীর রাত হোক কিংবা ভোর। একটা ইমার্জেন্সি কলেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাইরেন বা‌জিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। এমনভাবে কাজ করেন মনে হবে তাদেরই সন্তান বা স্বজন বিপদে পড়েছে। এমন মমত্ববোধ স‌ত্যিই বিরল।

মাঝে মধ্যে মনে হয়, বাংলাদেশে আনসাং হিরো শব্দটা বোধহয় তাদের জন্যই। দুর্যোগের এই দেশে তারাই আসল নায়ক। এই বাংলাদেশটা টিকে আছে তাদের জন্যই।  

মেঘনায় লঞ্চডুবির ওই ঘটনায় আজ নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করছি। আর স্যালুট জানাচ্ছি আবুল খায়েরকে। আপনাদের মতো মানুষের কারণেই এই বাংলাদেশ নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। আপনাদের কারণেই আমি রোজ বলি শুভ সকাল বাংলাদেশ।

news24bd.tv আয়শা