আমরা যখন ভুল সিদ্ধান্ত নেই, আল্লাহ বিভিন্ন সিগনাল দিয়ে বোঝান

রাখী নাহিদ

আমরা যখন ভুল সিদ্ধান্ত নেই, আল্লাহ বিভিন্ন সিগনাল দিয়ে বোঝান

Other

নিউ ইয়র্কে আসার পর যখন কাজ পাচ্ছি না, চোখে অন্ধকার দেখছি, তখন আমার এক বড়ভাই একজন এর নাম্বার দিয়ে বললেন, - এই ভাইকে কল দে। আমি তোর কথা উনাকে বলেছি। বলেছেন হেল্প করবেন।  

আমি কল দিলাম।

সাথে সাথে চাকরী না হলেও বেশ কিছুদিন পরে উনি আমাকে ডাকলেন।

আমি উনার অফিসে দেখা করতে গেলাম। কাজ দিলেন তার পিজ্জা স্টোরে, সপ্তাহে দুইদিন।  

উনি আমাকে পার আওয়ার যে বেতন দিবেন বললেন সেটা শোনার পর আমার অনেকক্ষণ বিশ্বাস হল না।

 

মনে হলো আমি কি কানে কম শুনলাম ? কারণ প্রথম কাজ করার অভিজ্ঞতা সবার খুব খারাপ হয় শুনেছি। নতুন কেউ এলে বাঙ্গালী চাকরীদাতারা খুব কম টাকায় কাজ করিয়ে নেন। ট্রেনিং এর নামে দিনের পর দিন ফ্রি কাজ করান।  

আমার শ্রদ্ধাভাজন চাকরীদাতা ঠিক তার উল্টা। তিন দিন ট্রেনিং করবার কথা থাকলেও উনি আমাকে দুইদিন পরে বললেন 

- আমি শুনেছি যে আপনি অনেক ভালো শিখে গেছেন দুই দিনেই। তাই আমি কাল থেকেই আপনাকে pay করবো।  

এইবারো আমার নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না। একদিন ফ্রি কাজ করানোর সুযোগ উনি ছেঁড়ে দিলেন ? চোখে পানি চলে আসলো আমার। মনে হলো পৃথিবীটা এত কঠিনও না। মানুষের মনে এখনো দয়া মায়া নামক জিনিসটা আছে।  

যাই হোক প্রথম উইক কাজ করার পর আমি স্যালারি নিতে গেলাম। উনি খামে ভরে আমার টাকা দিলেন।  

আমি বাসায় এনে খাম খুলে দেখি তিন অঙ্কের একটা এমাউন্ট যার শেষ দুই অঙ্ক হলো 59 অর্থাৎ ঊনষাট ডলার।


কেক কেটে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের সূচনা

মোদিবিরোধী মিছিল হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা: মনিরুল

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ইসলামী ব্যাংক

ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যের আশ্বাস স্পেনের রাষ্ট্রদূতের


 

আমি ভাবলাম গোনায় ভুল হয়েছে। আবার গুনলাম দেখি না ঊনষাটই। এইবার আমার বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগলো। I mean seriously? 

এক ডলার বাড়িয়ে রাউন্ড ফিগার করেও দেন নাই উনি ? 

আমরা বাঙ্গালীরা রাউন্ড ফিগার করার ওস্তাদ। কম হোক বেশী হোক রাউন্ড হতে হবে। শোনার, দেখারও তো একটা সৌন্দর্য আছে।  

একটা ডলার। দেন নাই উনি ? 

আমি বুঝলাম This is another reality. Not a single penny is free here. এমনকি 999 কেউ রাউন্ড করে 1000 করে না কেউ এখানে। মিনিট হিসাব করে পয়সা। কমও না বেশীও না।

এখন আমি ওখানে চারদিন কাজ করি। যথারীতি এইরকম ফিগারই চলছে। যেমন গতকাল বেতন পেয়েছি তিন অঙ্কের শেষ দুই অঙ্ক ৯৪। যথারীতি আমার মনের মধ্যে খচখচ

আমার বস এখন বাংলাদেশে। বেতন দিয়েছে রামান। ওকে বললাম 

- রামান, আগলি বার আমার স্যালারি আগার রাউন্ড ফিগার না আয়ে তো মুঝছে এক্সট্রা কাম কারা লেনা। পার স্যালারি রাউন্ড জারুর দেনা। it hurts. 

অর্থাৎ দরকার পড়লে পরেরবার আমারে এক টাকার কাজ বেশী করাইস, তাও রাউন্ড বানায়ে দিস। আমার বুকে ব্যথা হয় এক ডলার কম দেখলে।  

বস আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আমার এই স্ট্যাটাস উনি পড়বেন সম্ভবত।  

যদি পরের স্যালারি রাউন্ড হয় বুঝতে হবে উনি পুরুষ না। সাক্ষাত মহাপুরুষ।  

জোকস এপারট,

এই লেখাটার দুইটা উদ্দেশ্যের একটা হলো, আমার বস এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। উনি এমন এক সময়ে আমাকে হেল্প করেছিলেন when I needed it most. উনি হয়ত বুঝবেন না উপকারটা কিরকম। উনি বুঝবেন না যে, নতুন বলে না ঠকিয়ে উনি আমার কি উপকারটা করেছেন। আমার কনফিডেন্স কত বাড়িয়ে দিয়েছেন।  

কিন্তু আমার জীবনের উপন্যাসে উনি খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে থাকলেন।  

এখন লেখার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে আসি।  

আমি সব সময় একটা কথা বলি।  

আমরা যখন কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেই তখন আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সিগনাল দিয়ে বোঝান যে সিদ্ধান্তটা ভুল হয়েছে। তিনি তখন রাস্তা কঠিন করে দেন। কেউ চাইলেও সেই রাস্তায় বেশীদূর এগোতে পারে না।  

আর যখন সিদ্ধান্ত সঠিক হয় তখন সব কিছু উনি সহজ করে দেন।  

আমি যখন নিউ ইয়র্কে পা দেই তখন আমি গভীর অন্ধকারে। টিকেট কেটে চলে আসা ছাড়া আর কোন কিছু ঠিক ছিল না। I was in the middle of nowhere. 

আস্তে আস্তে আমার পথ সহজ থেকে সহজতরো হচ্ছে। এতই সহজ, যে মনে হয় এই পথ হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত চলে গেলেও যেতে পারে ভবিষ্যতে।  

আল্লাহ তায়ালা প্রতি মুহূর্তে বোঝান, আমার নিজেকে পরখ করে দেখার সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি। বোঝান I deserve the freedom to flow. 

And I deserve the chance to grow ...

রাখী নাহিদ, নিউইয়র্ক (ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv নাজিম