মাত্র এক দশকে এভাবে মহানায়ক হয়ে ওঠার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল

মাত্র এক দশকে এভাবে মহানায়ক হয়ে ওঠার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭০ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে সবাইকে ছাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন এই বাংলার একমাত্র মহানেতা। অথচ ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ২৭ বছরের তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান যখন পূর্ব বাংলায় ফিরলেন তখন তিনি উল্লেখ করার মতো কোন রাজনীতিবিদই নন।  

বঙ্গবন্ধু একটা জাতিকে শুধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাননি, আজীবন সংগ্রাম আর লড়াই করে সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অথচ ১৯৪৭ সালে কলকাতা থেকে এই বাংলায় ফেরার সময় মুজিব শুধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য হিসে‌বেই প‌রি‌চিত।

এই বাংলায় তখনও তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয়নি। ‌

উল্টোদিকে তখন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, খাজা নাজিমউদ্দিন, লিয়াকত আলী খান, নুরুল আমিন, এমনকি ফকা চোধুরীর মতো মুসলিম লীগ নেতারাও তখন এই দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুকে সেই তুলনায় তখনও বাংলার মানুষ চেনেনি।  

আরও দুই বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় বঙ্গবন্ধু তখন সেই দলের যুগ্ম সম্পাদক মানে ছয় নম্বর নেতা।

  প্রবীণ রাজনীতিবিদদের সাথে তুলনা করলে বঙ্গবন্ধু তখন সবেমাত্র এই বাংলার রাজনীতির মঞ্চে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে এক দশকের মধ্যে তিনিই হয়ে উঠলেন এই বাংলার মূল নায়ক।  

মাত্র এক দশকে এভাবে মহানায়ক হয়ে ওঠার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়দফা, ৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, এরপর বঙ্গবন্ধু না‌মে তি‌নিই এই বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা। এরপর তো ইতিহাস। ৭০ এর নির্বাচন, তাঁর নাম জপে কোটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া, স্বাধীন বাংলা‌দেশ।  

বাঙালির এই স্বাধীনতার জন্য আজীবন লড়াই ক‌রেছেন বঙ্গবন্ধু। মা‌সের পর মাস, বছ‌রের পর বছর কে‌টে‌ছে তাঁর জেলে। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আপস করেননি। বরং মাথা উচুঁ করে তীব্র প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। এমন সাহসী নেতা এই বাংলায় আর কবে ছিল! 

অথচ কী নির্মম যে জা‌তি‌কে স্বাধীন কর‌লেন স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় সেই দে‌শে ক‌তোগু‌লো কুলাঙ্গার তা‌কে হত্যা করলো। এখানেই লুকিয়ে আছে বাঙালি জাতির চরিত্র। সারা জীবন যে মানুষটা অন্যের জন্য জীবন দেবে তার গীবত করতে আমাদের এক মুহুর্তও লাগে না। হুজুগে পড়ে আমরা ভুলে যাই কে আমাদের সত্যিকারের নায়ক আর কারা ভিলেন।

আমি বিশ্বাস করি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যদি বঙ্গবন্ধুকে হায়েনারা হত্যা করতে না পারতো, আর মাত্র ১০ টা বছর যদি বঙ্গবন্ধু এই রাষ্ট্র চালাতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশ হতো বিশ্বের উন্নত এক রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু হতেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু সেটি হয়ে উঠতে দেয়নি দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা।  

আমি মনে করি দলীয় রাজনীতি কিংবা রাষ্ট্র সবখানেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চা হওয়া জরুরী।
আফসোস, টানা ১২ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। দেশে গত ১২ বছরে মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলা লোকের সংখ্যা হুহু করে বাড়লেও বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে আমাদের চেনার জন্য দরকার ছিল, জানার দরকার ছিল, তাঁর আদর্শের যেভাবে চর্চা করা দরকার ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে সেগুলো এখনও হয়নি।   

আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে সততা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে অবস্থান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে দেশপ্রেম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে মানুষ। এই যে মুখে বঙ্গবন্ধুর স্লোগান কিন্তু বাস্তবে বঙ্গবন্ধুর চর্চা কম। অথচ আদর্শের চর্চা ভীষন জরুরী।  


ঢাকায় ছুটির আমেজ, রাস্তা ফাঁকা

বিশ্বের দূষিত রাজধানীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা

ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে আগুন, নিহত ৩জন

নিভৃত পল্লী টুঙ্গীপাড়াতেই কেটেছে জাতির জনকের শৈশব আর কৈশোর


তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও বলতে হয় এই যে জন্মশতবার্ষিকীতে আজ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা আয়োজন, চারপাশে আজ রাজনৈতিক নেতা, আমলা কিংবা পেশাজীবী, অনেকেই আজ ক্ষমতা বা পদের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম স্মরণ করছেন, কিন্তু বুকের মধ্যে কতজনের বঙ্গবন্ধু আছেন? 

অবশ্য লোক দেখানো এই ভালোবাসা থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ শত প্রতিকুলতার মধ্যেও এদেশের একদল মানুষ বুকের মধ্যে সযত্নে বঙ্গবন্ধুকে লালন করেছে। আজীবন করবেন। আর সে কারণেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে আজ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের সকালে বলি সেই কথাটাই-যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরি, যমুনা বহমান... ততদিন রবে কীর্তি তোমার... শেখ মুজিবর রহমান।  

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

শরিফুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম