অমুসলিমদের ওপর আক্রমণ প্রকারান্তরে ইসলামের ওপর আঘাত

অমুসলিমদের ওপর আক্রমণ প্রকারান্তরে ইসলামের ওপর আঘাত

Other

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা মামুনুল হককে নিয়ে এক হিন্দু যুবকের স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে কয়েক হাজার মানুষ নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালায়।

এসময় তারা ৮৮টি ঘরবাড়ি ও সাত-আটটি পারিবারিক মন্দিরে ভাংচুর করে এবং লুটতরাজ চালায়। আক্রমণ চলাকালে আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীরা।

পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর ফিরে আসে গ্রামবাসীরা।

১৫মার্চ হেফাজত নেতা মামুনুল হক দিরাইয়ে এক সমাবেশে সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমনদাস আপন মামুনুলের বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্ট দেন ফেসবুকে।

এরপরই তার অনুসারীরা তাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। গ্রামবাসী আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পেরে নিজেরাই পুলিশ ডেকে ঝুমন দাস আপনকে ধরিয়ে দেয়। তারপরও সোমবার রাতেই নাচনী, চণ্ডিপুর, সন্তোষপুর, কাশিপুর, সরমঙ্গলসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মামুনুল অনুসারী বিক্ষোভ করেন।

পুলিশ ও প্রশাসন তাদের নিবৃত্ত করলেও সকালে আবার নাচনি মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে 'হুজুরের সম্মান রক্ষায় হিন্দু গ্রামে' হামলার আহ্বান জানানো হয়। মসজিদের মাইকে এই আহ্বান শুনে বিভিন্ন বয়সের হাজারো পুরুষ লাঠিসোঁটা, দা, রামদা কিরিচসহ নানা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছুটে আসে। তারা দাড়াইন নদী পেরিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে আসতে থাকে।

news24bd.tv

বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে গ্রামের নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ফেলে বাইরে পালিয়ে যান। অনেকে ঘর তালাবদ্ধ করে ঘরেই বসে থাকেন। হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতারা হামলার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এর সাথে হেফাজতকে জড়িত করা তিনি ভালো মনে করেন না। তিনি বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার পরিকল্পনা হেফাজতের কখনো ছিল না এবং নেই।

এ ঘটনায় কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে –

এক. কোন সংগঠনের ব্যানারে সংঘবদ্ধ না থাকলে মুহুর্তে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হওয়া কী স্বাভাবিক ঘটনা?

দুই. সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পক্ষে মাইকে ঘোষণা দিয়ে হিন্দু গ্রাম আক্রমণের আহ্বান কী স্বাভাবিক ঘটনা?

তিন. ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তথা কারো বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার কারণে ইসলাম কী আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অনুমতি দেয়?

চার. একজনের অপরাধের কারণে গ্রামের শত শত মানুষের ওপর আক্রমণ কী ইসলাম অনুমোদন করে? পাঁচ. হুজুরের সম্মান রক্ষার নামে নির্বিচার আক্রমণ, সম্পদ লুন্ঠন, নারীদের নির্যাতন, কোন ধর্মের উপাসনালয় ভাংচুর করাকে ইসলাম কী অনুমতি দেয়?


আরও পড়ুনঃ


দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নিহত

মওদুদ আহমদ আমাদের একজন অভিভাবক ছিলেন: ফখরুল

সুনামগঞ্জে আবারও মহাসমাবেশ ডেকেছে হেফাজত

পত্রিকার সাংবাদিকগুলো বিসিএস ক্যাডার চাকরিটাকে বিশাল কিছু বানিয়ে ফেলেছেন


আল্লাহর পথে নিয়োজিত নবী-রাসুলদের যুগে যুগে অপমান, ঠাট্টা ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। অবিশ্বাসীরা নবী-রাসুলদের বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাঁদেরকে দৈহিক ও মানসিক কষ্ট দিয়েছে। কোনো কোনো নবীকে তাঁর উম্মতের হাতে জীবনও দিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও নবী-রাসূলগণ মানবসমাজের হিদায়েতের জন্য ধৈর্যের সাথে, বিনয় ও নম্রতার সাথে কাজ করে গিয়েছেন। রাসূল(স.) ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কাফির, ইহুদী ও মুনাফিকদের নির্যাতনে রক্তাক্ত হয়েও ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা রাসূল (সা.) এর সাথে উপহাস করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুঁড়ে মেরেছে।

news24bd.tv

তারা বলেছে- তিনি যাদুকর, পাগল, নিন্দিত ব্যক্তি। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলেছে যে, তিনি কবি বা গণক। পবিত্র কুরআনে এবিষয়ে আল্লাহ বলেন, “দেখুন ওরা আপনার জন্য কেমন সব উপমা দেয়। ওরা পথ ভ্রষ্ট হয়েছে। অতএব ওরা পথ পেতে পারে না। ” (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৪৮)।

এত কিছুর পরও রাসূল (সা.) ধৈর্য হারাননি। রাসুল (সা.) কারো ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন, যদিও মজলুম অমুসলিম হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা মজলুমের বদ দোয়া থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফির হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই (অর্থাৎ তার বদ দোয়া দ্রুত কবুল হয়ে যায়)। ’(মুসনাদে আহমদ, ১২৫৭৭)

কোন মুসলিম যদি কোন অমুসলিম নাগরিকের প্রতি অন্যায় করে, তবে কিয়ামতের দিন রাসূল (সা.) নিজে সে মুসলিমের বিপক্ষে লড়বেন।

news24bd.tv

একাধিক সাহাবা থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন-‘সাবধান! যদি কোন মুসলিম কোন অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব। ’ (সুনানে আবু দাউদ, ৩০৫২)

ইসলাম মূলত: সার্বজনীন মানবীয় ভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাসী। ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির নীতির প্রবক্তা। সুতরাং ধর্মীয় অসহনশীলতার কোন স্থান নেই ইসলামে। ইসলাম চায় কেউ কারো ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয়ের উপর আঘাত না করুক। ভিন্নধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উপাসনালয় ও ধর্মযাজকদের নিরাপত্তাও ইসলামই নিশ্চিত করেছে। অতএব একজন অমুসলিম তার ধর্ম পালন করতে পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা পাবে, কোন মুসলিম কোন অবস্থায়ই তাদের ধর্মপালনে, আনুষ্ঠানিকতায় বাধা দিতে পারবে না ও তাদের উপাস্যদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য বা গালি দিতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাদের আরাধনা করে, তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না। ... অতপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। ” (সুরা আনআম: ১০৮)

news24bd.tv

অনুরূপভাবে কোন বিধর্মী উপাসনালয়ে সাধারণ অবস্থা তো দূরের কথা যুদ্ধাবস্থায়ও হামলা করা যাবে না। কোন পুরোহিত বা পাদ্রীর প্রতি অস্ত্র তাক করা যাবে না। কোন উপাসনালয় ধ্বংস করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গেই হাবীব ইবনু অলীদ হতে বর্ণিত: রাসূল (সা.) সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন: ‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি: (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের ) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোন শিশুকে হত্যা করবে না, কোন গির্জা জ্বালিয়ে দিবে না এবং কোন বৃক্ষও উৎপাটন করবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৯৪৩০)।

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা কোন নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোন শিশুকেও না, আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোন গাছ উপড়াবে না, কোন খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোন গৃহও ধ্বংস করবে না। ’ (সহীহ মুসলিম, ১৭৩১ )।

অন্য হাদীসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) নিজের কোন বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না। ’ (মুসান্নাফে ইবনু আবী শায়বা, ৩৩৮০৪)।

মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। রাসূল (সা.) এর জীবনী পর্যালোচনা করলে এই চিত্রই আমরা দেখতে পাই। তাই অমুসলিমদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা, তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা এবং তাদের উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলাম কোনোভাবে সমর্থন করে না।

দুবাই ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমসের বরাতে প্রকাশ মিসরের সিনাই উপত্যকার পাদদেশে অবস্থিত সেন্টক্যাথরিন গির্জার একজন প্রতিনিধি ৬২৮খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুরক্ষা প্রদানের অনুরোধ করেন। মহানবী (সা.) ওই প্রতিনিধিকে তার সম্প্রদায়ের বিশেষাধিকারের সংবলিত একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন।

ঐতিহাসিক সেই অঙ্গীকারনামায় বলা হয়- ‘এটি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা তাদের প্রতি, যারা চুক্তির অংশ হিসেবে খ্রিস্টবাদ ধারণ করে; তারা কাছের হোক বা দূরের আমরা তাদের সঙ্গে আছি। প্রকৃতপক্ষে আমি, দাসরা, সাহায্যকারী ও আমার অনুসারীরা তাদের রক্ষা করবে। কেননা খ্রিস্টানরা আমার নাগরিক। আল্লাহর কসম! আমি এমন সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যা তারা অপছন্দ করে। তাদের ওপর বিশেষ কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না। তাদের বিচারকদের চাকরিচ্যুত করা হবে না এবং তাদের সন্ন্যাসীদের গির্জাগুলো থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না। কেউ তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করবে না, ক্ষতিগ্রস্ত করবে না অথবা মুসলিমদের জন্য তা থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে আনবে না। কেউ এমনটি করলে সে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করল এবং তার নবীর অবাধ্য হলো। নিশ্চয়ই তারা আমার মিত্র এবং তারা যেসব বিষয় ঘৃণা করে আমি তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সনদ দিচ্ছি। কেউ তাদের ভ্রমণে বা যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করবে না; বরং মুসলিমরা তাদের জন্য যুদ্ধ করবে। কোনো খ্রিস্টান নারীর অনুমতি ছাড়া কোনো মুসলিম তাকে বিয়ে করতে পারবে না। (বিয়ের পর) প্রার্থনার জন্য তাকে চার্চে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। খ্রিস্টানদের চার্চের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। কেউ চার্চ সংস্কার বা তার পবিত্রতা রক্ষায় বাধা দেবে না। কোনো মুসলিম কিয়ামত পর্যন্ত এই অঙ্গীকারনামার অবাধ্য হবে না। ’

news24bd.tv

রাসূল (সা.) এরপর খলিফা আবু বকর(রা.) ও একই রীতি অবলম্বন করেন। সেনাপতি উসামা ইবনু যায়েদ (রা.) কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন: ‘হে লোক সকল দাঁড়াও,  আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দিব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোন খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের ) অনুরূপ করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা জ্বালিয়েও দিবে না। কোন ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোন ছাগল, গরু, উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়েছে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে। ’ (মুখতাসারু তারিখি দিমাশক,১/৫২)।

মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-কে অনুসরণ করা। তাঁর আদর্শে পথ চলা। আল্লাহ বলেন, “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। ” (সূরা আল ইমরান: আয়াত ৩১)

আল্লাহ বলেন “অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ, ...। ” (সূরা আহযাব: ২১)

যারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে হিন্দুদের গ্রাম আক্রমণ করলো, শত শত বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভাংচুর করলো, মারধোর-নিপীড়ণ করলো, সম্পদ লুটতরাজ করলো তারা কী কুরআনের বিধান এবং রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের আদর্শ, আদেশ-নির্দেশ অমান্য করলো না?

আরও পড়ুনঃ


শখের সেই ‘হোয়াইট হাউজে’ দাফন করা হবে মওদুদকে

মুম্বাই থেকে ফিরে মার্সিডিজ কিনলো নুসরাত ফারিয়া, দাম কত জানেন?

বিশ্ব ঘুম দিবস আজ

দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নিহত


আল্লাহর বিধান অনুযায়ি কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের পালনকর্তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি সেসব বিষয়ে বলে দেবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে। ”(সুরা আনআম: ১৬৪)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আর নারী-পুরুষের মধ্য থেকে যারাই সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অণু পরিমাণও তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। ” (সুরা : নিসা, ১২৩-১২৪)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে একজনের অপরাধে অপরকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না ও তাকে কোন শাস্তি দেয়া যাবে না। আমর ইবন আহওয়াস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বিদায় হজের দিন বলতে শুনেছি: ‘সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়বদ্ধ করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। ’(ইবনে মাযাহ, ২৬৬৯; তিরমিযি ২১৫৯, ৩০৮৭; সাহীহাহ ১৯৭৪; ইরওয়া ৭/৩৩৩-৩৩৪) তারিক আল-মুহারিবী (রা.) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে তাঁর হস্তদ্বয় এতো উপরে তুলে বলতে শুনেছি যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি বলেছেন: ‘সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। ’(ইবন মাযাহ ২৬৭০; নাসায়ী ৪৮৩৯; ইরওয়া ৭/৩৩৫)

আল-খাশখাশ আল-আম্বারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক পুত্রসহ রাসূল (সা.)-এর কাছে এলাম। তিনি বললেন: ‘তোমার অপরাধের প্রতিশোধ তাঁর কাছ থেকে নেয়া যাবে না এবং তার প্রতিশোধ তোমার কাছ থেকে নেয়া যাবে না। ’(ইবনে মাযাহ ২৬৭১; আহমাদ ২০২৪৫)

উসামাহ বিন শারীক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘একজনের অপরাধের জন্য অপরজনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। ’(ইবনে মাযাহ ২৬৭২; সাহীহাহ ৯৮৮)

ইসলাম অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্যায় পদ্ধতিতে করতে অনুমতি দেয় না। ইসলাম একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি প্রদানের অনুমতি দেয় না। সর্বোপরি ইসলাম কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীকে বিচার বা শাস্তির দায়িত্ব নিজে গ্রহণের অনুমতি দেয় না। তাহলে ঝুমন দাসের অপরাধে নোয়াগাঁও গ্রামের শত শত হিন্দু পরিবারকে যে শাস্তি দেয়া হলো, তা ইসলামের কোন বিধান অনুযায়ি?

ইসলাম শত্রুদের সাথেও ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা অবলম্বনের সবক ও শিক্ষা দেয়। ক্ষমা ও ক্রোধ দমন সৎকর্মশীল তথা মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে।

কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন। ” (সুরা আল ইমরান, ১৩৩-১৩৪)।

রাসূল (সা.)বলেছেন, “আল্লাহর কাছে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ক্রোধ সম্বরণ করার চেয়ে বড় কোন সম্বরণ বেশী সওয়াবের নেই। ’ (ইবনে মাজাহ,৪১৮৯) রাসূল (সা.)বলেছেনঃ ঘায়েল বা পরাভূত করতে পারাটাই বীর হওয়ার লক্ষণ নয়, বীর হল ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে ক্রোধের সময় সম্বরণ করতে পেরেছে। ’ (বুখারী, ৬১১৪; মুসলিম,২৬০৯)

অন্য হাদীসে রাসূল (সা.)বলেছেনঃ ‘আল্লাহতা'আলা কোন বান্দাকে ক্ষমার বিনিময়ে কেবল সম্মানই বৃদ্ধি করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন। ’ (তিরমিযী,২৩২৫, মুসনাদে আহমাদ,৪৩১) হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে ডেকে যে কোন হুর পছন্দ করে নেয়ার অধিকার দিবেন। ’ (ইবনেমাজাহ,৪১৮৬)

সব মানুষ একই উপাদানে তৈরি, সবাই এক আল্লাহর বান্দা। ইসলামের বিধান অনুযায়ি সব মানুষ একই আদিপিতা-মাতার সন্তান; সব মানুষ একই রক্ত-মাংসে গড়া। একজন হুজুরের সম্মান রক্ষার নামে নির্বিচার আক্রমণ করে যেভাবে অনেক নিরপরাধ মানুষের সম্মান হানি করা হলো, সম্পদ লুটতরাজ করা হলো, বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় ভাংচুর করা হলো তা কী ইসলাম সম্মত?

৬ষ্ঠ হিজরীতে মুশরিকরা মুসলামানদের কা’বা মসজিদেহারামে যেতে বাধা প্রদান করেছিল। কিন্তু তাদের বাধা দানের কারণে মুসলমানরা মুশরিকদের সাথে যাতে সীমালংঘনমূলক ও অন্যায় আচরণ না করে সেজন্য মহান রব মুসলমানদের সাবধান করে দিয়েছেন।

শত্রুদের সাথেও ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা অবলম্বনের সবক ও শিক্ষা দিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (হকের উপর) দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত (এবং) ন্যায়পরায়ণতার সাথে সাক্ষ্যদাতা হও। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার না করাতে প্ররোচিত না করে। সুবিচার কর, এটা আত্মসংযমের নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন। ” (সুরা মায়েদা: ৮)

নির্বিচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করা কী কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ও তাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার নয়? রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত। ’

সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে তো আমরা সাহায্য করে থাকি। কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব? রাসূল বললেন, তার দু'হাতে ধরে রাখবে। ’ (বুখারী, ২৪৪৪) যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করলে রাসূল (সা.) এর নির্দেশ মতো আমরা কী অত্যাচারীদের হাতগুলো ধরে রাখেতে পারতাম না?

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: zhossain1965@gmail.com

news24bd.tv / নকিব