অমুসলিমদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন বিশ্বনবী

অমুসলিমদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন বিশ্বনবী

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবীকে অনুসরণ করলে কাউকেই কখনও প্রশ্নের সম্মুক্ষিণ হতে হবে না। তিনি অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতেন সেটিও সবার জানা দরকার।

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যেসব গুণ ও মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন, তাহলো-

‘আর আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি।

’ (সূরা আলাম নাশরাহ: আয়াত ৪)
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি। ’ (সূরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)
‘আপনিই সেই মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যাকে আমি বিশ্বমানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না। ’ (সূরা সাবা: আয়াত ২৮)

এসব কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উত্তম চরিত্র দিয়ে মানবতার মুক্তির দূত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন।

আর ঘোষণা করেছেন- ‘আর (হে নবি!) নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। ’

যিনি স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে এতগুণ ও মর্যাদার সনদ পেয়েছেন, মানুষের প্রতি তাঁর আচরণ কেমন হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের প্রতি ছিলেন উদার। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী বিচারে তিনি করো প্রতি জুলুম করেননি। কারো প্রতি অবিচার করেননি। এমনকি তাঁর উম্মতের সবার উদ্দেশ্যে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন কেউ কারো প্রতি জুলুম না করে; যেন সবার সঙ্গে উত্তম সদাচরণ করে।

রাসুলে আরাবি অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা করেছেন, কোনো মুসলিম যদি অমুসলিমের প্রতি অবিচার করে তবে বিচারের দিন অমুসলিমের পক্ষে অবস্থান নেবেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রেখ! কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, কোনো অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনো জিনিস বা সহায়-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করব। ’ (আবু দাউদ)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায়ভাবে অমুসলিমের জান ও মালের ওপর হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এর পরিণতি হবে জাহান্নাম। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ)

উল্লেখিত হাদিসে থেকে বুঝা যায়, কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্যায়ভাবে অত্যাচার-নির্যাতন এমনকি খারাপ আচরণও করা যাবে না। কেননা দুনিয়া বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। আর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব হলো সবার সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করা। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্মে সতর্ক করেছেন যে-
‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেক, যদিও সে কাফির হয়। কেননা কোনো মাজলুমের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে পর্দা থাকে না। ’ (মুনাদে আহামদ)

অমুসলিমদের প্রতি আচরণ

অমুসলিমদের প্রতি আচরণ কেমন হবে, তার বর্ণনা ওঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুসলিমদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন, উত্তম আচরণ করেছেন। তারঁ উম্মতের প্রতি ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাইলাম- আমি কি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’। (বুখারি)

আরও পড়ুন


৭ ঘণ্টা পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুড়ল সাড়ে ৯ হাজার ঘর

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুনের ঘটনায় নিহত ৫

ঢাকা-কাঠমান্ডু চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি, আরও ৫ হাসপাতাল প্রস্তুতের নির্দেশ


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সম্মান করেছেন। হোক সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম, কাফির, ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান। হাদিসে এসেছে-

একবার বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দিয়ে একবার এক ইয়াহুদির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর এতে ওই লাশের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি তো ইয়াহুদির লাশ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, সে কি মানুষ নয়?’ (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি কারো প্রতি কোনো ধরণের পক্ষপাত মূলক আচরণ করেননি। কারো সঙ্গে আপোষ করেননি। অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের পক্ষ অবলম্বন করেনি।

মানুষ হিসেবে তিনি সবার প্রতি ছিলেন উদার ও উত্তম আচরণকারী। প্রতিবেশি যে-ই হোক অর্থাৎ মুসলিম কিংবা অমুসলিম তার অধিকারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সজাগ দৃষ্টিসম্পন্ন।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উদার নীতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। ইসলামের সুমহান আদর্শগুলো গ্রহণ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরা। আর তাতে মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বিশ্বনবীর সুমহান আদর্শ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অমুসলিমদের সঙ্গে আচার-আচরণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv আহমেদ

এই রকম আরও টপিক