ফুটবলের শৈশব কেটে গেছে ক্রিকেটের প্রতাপে

ফুটবলের শৈশব কেটে গেছে ক্রিকেটের প্রতাপে

Other

এখনকার অনেক বাচ্চাদের মতো আমাদের শৈশব কেবলি ক্রিকেটময় ছিলো না। আমরা ফুটবলের রেশটুকু পেয়েছি। তখনকার তারুণ্য ছিলো আবাহনী মোহামেডানের নীল আর সাদাকালোয় মোড়া। একেকটা খেলা মানে হাজার হাজার গজ কাপড়ের পিন্ডি চটকানো, পাড়া মহল্লা রঙিন হয়ে ওঠা।

মানে পতাকার বিরুদ্ধে পতাকার লড়াই।  

আর খেলায় কোনো না কোনো পর্যায়ে মারামারি একটা প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে ওঠতো। সে সবও দারুন উত্তেজনা ছিলো। আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল একটা মাঠ ছিলো।

তা পেরিয়ে ধান ক্ষেত, সে গিয়ে মিশেছে নদীতে। দিগন্ত আমাদের অনেক পরিচিত কিন্তু রহস্যে ঘেরা হাতছানির অপর নাম ছিলো।  

আমাদের সন্তানরা এখন খোলা মাঠে গেলে ওপরে তাকিয়ে বলে, দেখো বাবা, আকাশ বাঁকা, তার মানে পৃথিবী গোল। আজন্ম আকাশ দেখা চোখে আলাদা কোনো মানে আমাদের মনে তৈরি হতো না।  


তুমি হয়তো ক্ষতি দেখছো না

করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এখন যা জানা দরকার

শিশুকে বেধড়ক পেটানো বন্ধ করুন  

বাঁচতে চাইলে মেনে চলুন


আমরা ফুটবল খেলতাম মাঠে, দেখতাম মাঠে, শুনতাম রেডিও-তে আর বিশ্বকাপ দেখতাম টিভিতে। এখন বাচ্চারা খেলা দেখে টিভিতে বা কম্পিউটারে বা মোবাইলে। খেলেও কম্পিউটারে বা মোবাইলে। মাঠসংকটের এই পৃথিবী আমরাই তৈরি করেছি। আমরা মানে আমি আপনি আর আমাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা।  

যাহোক, সেটা আমার আলোচনার বিষয় না। আমার আজকের আলোচনার বিষয় খেলোয়াড়। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান।

আজ সাকিব আল হাসানের জন্মদিন। যেকোনো জন্মদিনকে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। এটা আমার কাছে একটা রহস্যময় মহাজাগতিক ঘটনা মনে হয়। এর মানে এই পৃথিবীতে একজনের পথচলা শুরু হলো। এই মহাজগত, এই মহাজগতের অফুরন্ত  সময়ের অল্প একটু নিয়ে এই যে আমাদের পথচলা, তার শুরুটা আমি দারুনভাবে উপভোগ করি।

এই যে বলছি, অফুরন্ত সময়ের অল্প একটু সময় আমরা পাই, আমাদের মাঝে কেউ কেউ সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে মহাসময়কে জয় করে নেয়। ব্যক্তি মানুষটা হয়তো থাকে না, কিন্তু কাজের মাধ্যমে কেউ কেউ তার উপস্থিতির জানান দিয়ে যায়। একই সময়ে তারা সমসাময়িক অনেকের অনেক ভালোবাসা নিয়ে পথ চলাকে সহজ করে এগিয়ে যায়।  


পরিচিত অনেকে মরে যাচ্ছে

নোয়াখালীর ঘটনা পশুদেরও লজ্জা দেবে

ছাত্রীর দুঃখজনক মৃত্যু, দিহান ও ভরসার প্রেম


সাকিব আল হাসান এমন একজন ক্রিকেটার যিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ হয়তো পেয়েছেন। হয়তো পেয়েছেন বলছি, কেননা কিছু চেষ্টা নিজের থাকতে হয়, কিছুটা রাষ্ট্রকে বা সমাজকে বা সম্ভাবনাময় মানুষদের আশপাশে যারা থাকে তাদের ত্যাগ ও সমর্থন দরকার পরে। সাকিব তা পেয়েছেন কী না আমি জানি না। গণমাধ্যম কর্মী হিসাবে আমি তার বিতর্কে জড়িয়ে পরা দেখি, মাঠে তাকে নানাভাবে দেখি।  

যাহোক, সবকিছু ছাপিয়ে আপাতত তাকে শুভেচ্ছা জানাই। খেলার কথা বলতে গিয়ে আরো একজন ক্রিকেটারকে আমার মনে পড়ে। তিনি আশরাফুল। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ আশার ফুল উপাধি দেয় নাই। তারপরো আশরাফুল মানে আশার ফুল হয়ে ওঠা সমর্থন করেছেন এদেশের মানুষ, তাই না ? যেমনি করে আমরা বলি সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের মান। দু:খের বিষয় দুই ক্রিকেটারেরই বিতর্কে জড়িয়ে পরার, সাজা পাওয়ার নজির রয়েছে।  

যাহোক, আমাদের শৈশবে গ্রামে গঞ্জে খুব কমই ক্রিকেট খেলা হতো। ধান ক্ষেত সমান করে লোকে ফুটবলই খেলতো। ফুটবল কেনার পয়সা না থাকলে জাম্বুরা দিয়ে খেলা হতো। একটা ভালো ফুটবল কেনা কিশোরদের স্বপ্ন ছিলো।  

সেই স্বপ্নে তাড়িত হয়ে আমি একজোড়া বুট জুতা বানিয়েছিলাম। ফুটবল খেলার জন্য। নানা সময়ে সালামি পাওয়া জমানো টাকায় বুট জুতা বানানোর খরচ হাতে না আসায় বাসার কিছু পুরনো বই বিক্রি করে দিয়েছিলাম।  


আপনি কী শেখ হাসিনার ফোন পেয়েছেন?

যুক্তরাষ্ট্রে মারামারি কী হবেই?


মনে পড়ে, তখন আমি সেভেন কী এইটে পড়ি। সেই পুরনো বইয়ের মাঝে আমার বড় ভাইয়ের একটা ইংরেজি গ্রামার বইও ছিলো। মোটা বইয়ে ওজন বেশি হয় বলে টাকা একটু বেশি পাওয়া যেতো। সন্ধ্যায় বড় ভাইয়ের বই খোঁজার আন্তরিকতা দেখে একই সঙ্গে অনেক খানি ভয় পেয়ে, দোকান থেকে আবারো সেই গ্রামার বই ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু বইটির প্রথম কয়েক পৃষ্টা উদ্ধার করতে পারিনি। হয়তো কারো হাতে মুড়ালি বা বিস্কুটের সঙ্গে চলে গেছে বিদেশি ভাষার নিয়মনীতিগুলো।   

এসবই খেলার প্রতি, খেলোয়াড়দের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। সব বিতর্ক কাটিয়ে সাকিব আল হাসান বিশ্ববরেণ্য হয়ে ওঠুন, জন্মদিনে তার জন্য এই শুভকামনা রাখলাম।   

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv নাজিম