অবৈধ সমিতির আড়ালে সুদের রমরমা কারবার, সর্বশান্ত সাধারণ মানুষ

অবৈধ সমিতির আড়ালে সুদের রমরমা কারবার, সর্বশান্ত সাধারণ মানুষ

Other

নওগাঁ ও তার পার্শ্ববর্তি সান্তাহারে অনুমোদনহীন ব্যবসায়িক সমিতির আড়ালে চলছে উচ্চহারে সুদের রমরমা ব্যবসা। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে শুধুমাত্র পৌরসভার ট্রেড সনদপত্র নিয়ে প্রতারণা করে চালানো হচ্ছে সুদের কারবার। এতে ছোটখাটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায়ের দিনমজুরদের গুনতে হচ্ছে বড় অংকের সুদ। আর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাতারাতি কলা গাছে পরিণত হয়েছে নাজমুল হোসেন নামে একজন দাদন ব্যবসায়ী।

জানা যায়, সান্তাহার পৌর শহরের নিচ পোঁওতা গ্রামের নাজমুল হোসেন এক সময় এনজিওতে কাজ করতেন। পরে তিনি সান্তাহার পৌরসভা থেকে তামিম সঞ্চয় ও ঋণদান প্রতিষ্ঠান নামে একটি ট্রেড সনদপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর বই ছাপিয়ে ট্রেড সনদের নাম ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সমিতি নাম দিয়ে শুরু করেন উচ্চহারের সুদের কারবার। যা প্রতিদিন সদস্যদের কাছে থেকে চড়াহারে সুদের টাকা আদায় করছেন।

news24bd.tv

যে নামটি পৌরসভা ট্রেড সনদপত্রে ব্যবহার করা হয়েছে আসলে এ নামে পৌর শহরের কোথায়ও কোন প্রতিষ্ঠান নেই। একদিকে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি অপরদিকে ট্রেড সনদের নাম ব্যবহার না করে অন্য নামে নিজ বাড়ি থেকে সুদের কারবার পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এ যেন প্রতারণার উপর প্রতারণা এমনটাই বলছেন অনেকে।

নিয়ম অনুসারে সনদপত্র অনুযায়ী ওই পৌরসভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনার কথা থাকলেও নাজমুল নওগাঁ সদর থানার পশ্চিম ঢাকা রোড, কাঁঠালতলীর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অনাধিকার প্রবেশ করে এই রমরমা সুদের ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়াও শূন্য সংখ্যা দিয়ে কোন হিসাব নম্বর শুরু করার নিয়ম না থাকলেও সদস্যের কাছে তার সরবরাহকৃত বইয়ে শূন্য দিয়ে হিসাব নম্বর শুরু করা হয়েছে।

ওই বই থেকে আরো জানা যায়, সান্তাহার শহরের মাসুদ নামের ওই গ্রাহক নাজমুলের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ঋণগ্রহণ করেছিলেন। মোট কিস্তির পরিমাণ ছিল ৩৯টি। সার্ভিস চার্জসহ তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ মাসুদের কাছ থেকে শতকরা ৩০ টাকা হারে সুদ আদায় করেছে নাজমুল। শুধু তাই নয় রফিক, জুয়েল, তারেকসহ প্রত্যকের কাছ থেকে নাজমুল শতকরা ৩০ টাকা হারে সুদের টাকা আদায় করেন। কিন্তু সরকার যে কোন ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার নির্ধারণ করে দিয়েছে।

news24bd.tv

এক্ষেত্রে নাজমুল তার অবৈধ দাদন ব্যবসাকে বইয়ের মোড়কে সুদের ব্যবসাকে বৈধ দেখিয়ে সান্তাহার ও নওগাঁর সাধারণ মানুষদের ঠকিয়ে দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন। কিছু করার থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকায় রয়েছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, নাজমুলের কাছে ঋণ চাইলে প্রথমে সে আমাকে শূন্য অক্ষর দিয়ে একটি হিসাব খুলে দেয়। এরপর সে আমাকে ৩ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিল। সুদসহ আমাকে ৩ হাজার ৯০০ টাকায় ১০০ দিনে পরিশোধ করতে হয়। সে অনেক টাকা সুদ নেয় কিন্তু করার কিছু নেই। আমার মতো অনেকে তার কাছে থেকে টাকা নেয়। তারা বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা চালিয়ে আজ লাখপতি হয়ে গেছে।

দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন গণমাধ্যম কর্মীকে উচ্চস্বরে বলেন, আমি পরিচিত ভাইদের বিপদ-আপদে টাকা দেই। আপনারা যা পারেন করেন। আমি আপনাদের তোয়াক্কা করি না। সমবায় অধিদপ্তর কিংবা অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র নাই। আর এ বিষয়ে কিছু বলবো না।

আরও পড়ুন


মুন্সিগঞ্জে ইভটিজিং নিয়ে সালিশি বৈঠকে সংঘের্ষে নিহত ২

হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে যে কৌশলে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল

আল্লাহ তাআলাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা কি বৈধ?

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুরের করোনা শনাক্ত


সান্তাহার শহরের সচেতন নাগরিক দাউদুল হক বলেন, এসব দাদন ব্যবসায়ীরা অসহায় মানুষদের সুযোগে সৎ ব্যবহার করে। যা ঝোপ বুঝে কোপ মারা অবস্থা। কেউ হচ্ছেন ঘর ছাড়া আবার কেউবা হচ্ছেন লাপাত্তা। এদের অত্যাচারে নষ্ট হচ্ছে সমাজ।

আদমদীঘি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, যেখানে সমবায় নাম নেই সেক্ষেত্রে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। যেহেতু বিষয়টি দাদন ব্যবসা সম্পর্কিত তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেখবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন, এ ধরনের ফাঁদে যাতে সাধারণ মানুষ না পরে সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন। অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নওগাঁ জেলা সমবায় কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া পৌরসভাসহ কোন প্রতিষ্ঠান সনদপত্র দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আর সমবায় আইন অনুসারে কেউ ট্রেড সনদপত্র নিয়ে উচ্চহারে সুদের ব্যবসা করতে পারেন না। এটি সম্পন্ন আইন বর্হিভূত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তারা কঠোর প্রদক্ষেপ নিতে বাধ্য।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর