ধর্ষক রাম রহিম সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

ধর্ষক রাম রহিম সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

বাবা গুরমিত রাম রহিম সিং। ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভারতের এ আধ্যাত্মিক গুরুকে সোমবার ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আসুন এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু, সিনেমা অভিনেতা, গায়ক, লেখক, সিনেমা পরিচালক, সমাজ সংস্কারক এর অজানা কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

পরিবার:

রাম রহিমের জন্ম হয়েছে ১৯৬৭ সালের ১৫ আগস্ট, রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে।

নাসিব কৌর  এবং মাঘার সিং এর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি।

তার স্ত্রীর নাম হারজিত কৌর। তাদের দুজনের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তার সন্তানদের প্রত্যেকের নামের শেষে ‘ইনসান’ শব্দটি আছে।

তিনি অনেক খেলায় পারদর্শী:

তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে তিনি ভলিবল, কাবাডি, লন টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, বিলিয়ার্ডস, টেবিল টেনিস, স্নুকার, শুটিং বল, বাস্কেট বল, ওয়াটার পোলো এবং অন্যান্য খেলায় পারদর্শী।

আরও পড়ুন- ধর্ষণের দায়ে ভারতের সেই 'ধর্মগুরু' গুরমিতের ১০ বছরের কারাদণ্ড

তাকে নিয়ে বিতর্ক...


২০০২ সালে এক সাধ্বী বেনামে লেখা একটি চিঠিতে ভারতের সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির কাছে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

ওই সাধবী চিঠিতে বলেন, লোকে আমাদেরকে ধর্মপ্রাণ বলে জানলেও আশ্রমে আমরা মূলত বেশ্যার জীবন যাপন করি। আমার পরিবার আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গ করে। আমার মতো আরো কয়েকশ মেয়ে আছে গুরমিতের ডেরায় যারা প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা করে সেবামূলক কাজ করে। আমাদেরকে শোষণ করা হচ্ছে সেখানে।

আমি সাধ্বী হওয়ার দুই  বছর পর একদিন রাত দশটায় গুরমিত আমাকে তার ঘর ‘গুফা’-তে ডেকে নেন। তার সবচেয়ে কাছের শিষ্যা গুরজত আমাকে বলেন স্বয়ং ঈশ্বরই নাকি আজ আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন। ঘরে ঢুকে আমি দেখতে পাই গুরমিত একটি রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে বিছানায় বসে ব্লু ফিল্ম দেখছেন। তার বিছানার বালিশের নিচে একটি পিস্তল রাখা। এসব দেখে আমার মাথা ঘুরছিল।

এরপর তিনি আমাকে তার পাশে বসিয়ে আমাকে পানি পান করান। এবং আমার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে চান। তিনি আমাকে ভালোবাসার কথা বলেন। তিনি বলেন যেদিন আমি সাধ্বী হতে রাজি হয়েছি সেদিনই আমি আমার সম্পদ, দেহ এবং আত্মা তার জন্য উৎসর্গ করেছি। আর তিনি তা গ্রহণ করেছেন। আর এ কারণেই আমি এখন তার। কিন্তু আমি রাজি না হতে চাইলে তিনি বলেন, “এতে কোনো সন্দেহ নেই আমি নিজেই ইশ্বর। ” সুতরাং আমাকে তার ইচ্ছাপূরণ করতে হবে। এরপর আমি যখন বলি ঈশ্বর নিজেও কি এই ধরনের কাজে সায় দেবেন!

আরও পড়ুন- মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল বাবা রাম রহিমের!

তিনি আরও বলেন-

১. শ্রী কৃষ্ণও ইশ্বর ছিলেন। যার ছিল ৩৬০ জন গোপী। যাদের সঙ্গে তিনি প্রেমলীলা করতেন। এরপরও লোকে তাকে ঈশ্বর মানতেন। আমি যা চাইছি তা নতুন কিছু নয়।

২. আমি চাইলে তোমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারি। কারণ তোমার পরিবার আমার ভক্ত দাস। তুমি খুব ভালো করেই জানো যে তোমার পরিবার আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে না।

৩. সরকারের ওপরও আমার প্রভাব আছে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মূখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আমাবে পা ছুয়ে সালাম করে। রাজনীতিবিদরা আমার সহায়তা চায় এবং আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। আর টাকা দিয়ে আমি রাজনীতিবিদ, পুলিশ এবং বিচারকদেরকেও কিনে ফেলতে পারব।

এরপর তিনি আমাকে ধর্ষণ করেন। এভাবে টানা তিন মাস আমাকে ধর্ষণ করা হয়। প্রতি ২৫ থেকে ৩০ দিন পরপর আমাকে ধর্ষণ করা হত। ডেরায় আরো ৩৫-৪০ জন নারী আছেন উচ্চ শিক্ষিতা। কিন্তু তারাও পরিবারের কারণে তার নির্যাতন মেনে নিয়েছেন। আমরা সাদা কাপড় পরে থাকি, ওড়নায় আমাদের মাথা ঢাকা থাকে। আর কোনো পুরুষের দিকে তাকানোও নিষেধ এবং অন্য কোনো পুরুষের কাছ থেকে ৫-১০ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হয় আমাদের।

লোকে আমাদের দেখে সতী-সাধ্বী ভাবলেও আমরা আসলে  বেশ্যা এবং যৌন দাসীর মতো বাঁচি।

এ বিষয়ে আদালত তাকে সমন করলে গুরমিত রাম রহিম পাঁচকুলা আদালতকে বলেন যে যৌন সঙ্গমের মতো কাজ করার জন্য তার মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা নেই। এরপর তিনি নিজের সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রচার করেন। যেখানে তিনি নিজেকে যৌন সঙ্গমের মতো কাজের জন্য অক্ষম বলে বর্ণনা করেন।

গণ খোজাকরণ:

তার বিরুদ্ধে ৪০০ পুরুষকে খোজা করে প্রজনন শক্তি নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদেরকে নিজের দাস বানানোর জন্যই তিনি এই কাজ করেন। ২০১২ সালে তার এমন এক শিষ্য পাঞ্জাবের উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে। মামলাকারী ওই ব্যক্তি ১৪ বছর ধরে রাম রহিমের শিষ্য ছিল।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এও তার নাম আছে


গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ তার ১৬টি কীর্তির উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিঙ্গার পেইন্টিং, সবচেয়ে বড় ভেজিটেবল মোজাইক, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে হাত ধোয়ানো, সবচেয়ে বড় মানব ড্রপলেট প্রভৃতি।

তিনি একজন ভিভিআইপি:

ভারতে মাত্র ৩৬ জন মানুষ ভিভিআইপি মর্যাদা এবং জেড স্তরের নিরাপত্তা পান। রাম রহিমও তাদের একজন। কারণ হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পাঞ্জাবের রাজনীতিবিদদের ওপর তার বিশাল প্র্রভাব রয়েছে।

সামাজিক গণমাধ্যমে তার বেশ জনপ্রিয়তা আছে:

টুইটারে তার একাগ্র ফলোয়ার ২ লাখ। আর সাধারণ ফলোয়ার আছে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার। শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর (২২ লাখ ৬০ হাজার) এবং যোগগুরু রামদেবের (৯ লাখ ৩৮ হাজার) চেয়েও তার জনপ্রিয়তা বেশি টুইটারে। ফেসবুকে তার ফলোয়ার ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৯২ জন আর তার পেজে লাইক দিয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৭৮ জন।

তার আশ্রমে একটি উন্নত মানের গাড়ি মেরামত কারখানা আছে:

তার আশ্রমে একটি উচ্চ ক্ষমতা-সম্পন্ন গাড়ি মেরামত কারখানা আছে। এমনকি দুর্ঘটনার পরও কোনো আগের মতোই নতুন করে ফেলা যায়। তার একটি দুটি নয় কয়েক ডজন বিলাসবহুল গাড়ি আছে। এই ধরনের গাড়ি ভারতে খুব কমই দেখা যায়। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত খবর