বায়তুল মোকাররম ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা

বায়তুল মোকাররম ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে প্রতিবাদে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদ ত্যাগ করেছেন।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে এ সংঘর্ষ হয়।

সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করার পর তারা মসজিদ এলাকা ত্যাগ করে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সংঘর্ষের সময় রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ইটপাটকেল সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন।

আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও রাস্তাগুলোতে পানি ছিটিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে।

এর আগে ভেতরে আটকে পড়া মুসল্লি ও আন্দোলনকারীদের বের করতে সমঝোতা শুরু করে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে অবস্থান নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সন্ধ্যার পর মুসল্লিরা স্থান ত্যাগ করেন।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুসলিম ও মুসলমানদের পবিত্র জায়গা হচ্ছে মসজিদ। পুলিশ মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে ভেতর প্রবেশ করেনি। যদি এটা মসজিদ না হতো তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারতাম। আজকে যে পরিমাণ ইটপাটকেল পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা কয়েক ট্রাক হবে। মসজিদের ভেতরে এতো ইট কীভাবে আসলো সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসেছেন এটি আমাদের জন্য মর্যাদার। সেই মর্যাদাকে নষ্ট করতে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সত্যিকার অর্থেই তারা রাষ্ট্রের মযার্দা চায় কি-না, সে বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের মযার্দা তারা চায় না। বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলছে, এটাও তারা চায় না। তারা চায় তালেবান ধরনের একটি রাষ্ট্র। ’

পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন বায়তুল মোকাররমে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তারা নানা ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক আচরণ করা হয়। এখান থেকে জুতা-স্যান্ডেল দেখানো হয়, কালো পতাকা, ঝাড়ু দেখানো হয়। যেহেতু আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি। সুতরাং আজকে যেন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিত সৃষ্টি না হয় সে কারণে আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনি ছিল। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরে যখন মুসল্লিরা নামাজ পড়ছিল, তখন কিছু মুসল্লি মিছিল শুরু করে। তারা জুতা-স্যান্ডেল দেখাচ্ছিল। এতে অন্য মুসল্লিরা বাধা দেয়। এতে দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একটা পর্যায়ে যারা জুতা স্যান্ডেল দেখাচ্ছিল, তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেয় এবং ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। অন্য মুসল্লিরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়। অনেকে আহত হয়ে চলে যায়। এমনকি পুলিশের ওপর তারা চড়াও হয়। ’

পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল, তারা এটা কীভাবে করল এমন প্রশ্নের জবাবে মতিঝিল জোনের ডিসি বলেন, ‘একদল মুসল্লি মসজিদের ভেতর থেকে স্লোগান দিচ্ছিল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জুতা, ঝাড়ু দেখাচ্ছিল। তাদের এমন কর্মকাণ্ডকে বিরোধিতা করছিল আরেকদল মুসল্লি। তারপর থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। যারা জুতা দেখিয়েছে তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেয়। আর যারা তাদের এগুলোর বিরোধিতা করছিল, তারা তাদের হাতে আক্রান্ত হয়ে রাস্তার বিভিন্ন যায়গায় অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলেছিলাম আপনারা যারা মসিজেদের ভেতরে আছেন তারা বের হয়ে যান। তখন অনেকে আমাদের কথা শুনেছেন। আর যারা অতিউৎসাহী তারা এখনও অবস্থান করছেন। ’