কিছু অসমাপ্ত উপসংহারও থাকতে হয়

কিছু অসমাপ্ত উপসংহারও থাকতে হয়

Other

সব কিছুর শেষ থাকতে নেই। সব কিছুর শেষ দেখতে নেই। কিছু অসমাপ্ত উপসংহারও থাকতে হয়। অধরাকে ধরতে না পারার দহন জ্বালা থাকতে হয়।

পৃথিবীতে সবকিছুর যাত্রা শুরু হয় কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সিনেমার মতো সে ঘটনার পর সুখে শান্তিতে বসবাস করার মতো আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার মতো সমাপ্তি নাও থাকতে পারে। কারণ সিনেমা আর বাস্তবতা এক নয়। নাটক আর জীবন এক নয়।

মানুষের লেখা গল্প-উপন্যাসের চরিত্র আর পৃথিবীর মানুষের চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট এক নয়। অবশ্য সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ শিল্প ও সাহিত্যের এই উপাদানগুলোতে থ্রিলার বা রোমাঞ্চকে  টেনে এনেছে। মানুষকে সিনেমা, নাটক, উপন্যাস ও গল্পে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে শিল্প সাহিত্যও তার পথ বদলেছে। এগুলোর এখন এমনভাবে পরিসমাপ্তি টানা হয় যে মানুষ বুঝতেই পারেনা শেষটা আসলে কি হবে, কি ছিল। যে যার মতো করে শেষটা ভেবে নেয়। তবে অতৃপ্তিটা থেকে যায়।

একসময়ের মিলনাত্মক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে অসমাপ্ত উপসংহারের অভিজ্ঞতাটা মানুষ জীবনের কঠিন বাস্তবতা থেকে খুব শক্তভাবে শিখেছে। কারণ জীবনের বাস্তবতা এতটাই কঠিন সেটা মানুষকে টেনে কোথায় নিয়ে যাবে তা কেউ জানেনা। সবটাই যে অনিশ্চিত গন্তব্য। সবকিছুই যে অসমাপ্ত উপসংহার। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে। সবাই মানুষ হতে পারে কিনা জানিনা তবে মানুষের মতো একটা মাথা, মুখ দেহ, হাত, পা সহ বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ সবার থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী তাদের চিন্তা ও জীবন যাপনেরও  পার্থক্য থাকে। তবে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ কিংবা অমানুষের জীবনে একটা কাহিনী থাকে। সেটা দেখার মতো চোখ সবার থাকেনা।  

যে মানুষটা সে জীবনের কাহিনীর একটা অংশ সেও অনেক সময় তার জীবনের কাহিনীটা বুঝতে পারেনা। মানুষের জীবনের সেই কাহিনীর শেষ বলে কিছু নেই। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে মানুষ একদিন মরে যায় কিন্তু অসমাপ্ত উপসংহারটা থেকে যায়। সারাজীবন মানুষ মানুষকে দেখে, যা দেখা দরকার তা দেখা হয়ে উঠেনা কখনো বরং তা অদেখাই থেকে যায়। মানুষ খুব সন্নিকটে দাঁড়িয়ে মানুষের হাসি দেখে, হাসির পিছনে মানুষের অসমাপ্ত কষ্টটা দেখেনা, মানুষের ভিতরের মানুষটাকে দেখেনা।  

মানুষ মানুষের ধনসম্পদ, আভিজাত্য-জৌলুস দেখে ভাবে মানুষটা কত সুখী। কিন্তু সে মানুষের সুখ যে ধন সম্পদ আর আভিজাত্যের মিথ্যা ঝলকানিতে চাপা পড়ে আর্তনাদ করছে সেটা কেউ কখনো দেখে উঠতে পারেনা। মানুষ যে মানুষটাকে খুব ক্ষমতাবান ভাবছে সে মানুষটা যে ক্ষমতার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে উঠেছে, সেই অসমাপ্ত সত্তার অনুভুতিটা চার দেওয়ালে বন্দি থাকে হয়তো আমৃত্যু।  


আইপিএলের ছাড়পত্র পেলেন মুস্তাফিজও

২১১ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে হেফাজতের রাস্তা অবরোধ


একটা ঘুষখোর মানুষের যেটা থাকে সেটা তার জীবন নয় বরং সেটা দিনে দিনে হয়ে উঠে তার পাপের বোঝা, দাসত্বের শৃঙ্খল। এই পাপের শাস্তি কখন, কিভাবে নেমে আসবে তা অসমাপ্ত উপসংহারে হয়তো লেখা আছে। তবে তা সেটা দেখার চেয়ে না দেখায় ভালো। সত্যের মুখ বানিয়ে যে মানুষ মিথ্যা বিক্রি করে। সে মানুষের রক্তকে ভিতরে ভিতরে মিথ্যার ছাড়পোকারা প্রতিদিন ঢাকঢোল  পিটিয়ে যেভাবে খায় তা আর কেউ দেখতে না পেলেও সেই দুমুখো মানুষটা হয়তো দেখতে পায়। অস্থিরতা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়  তবে সেটার শেষটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা অসমাপ্ত উপসংহারেই জানুক তার মতো করে। যেখানে মানুষটা  একটা বুলেট বিদ্ধ পাখি হবে হয়তোবা। যে পাখিটা  জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও জানবেনা এর পরে কি ঘটতে পারে।  

মানুষ এখন মন্দকে ভালো বলে আর ভালোকে বলে মন্দ। মানুষের ভালো মন্দ চেনার মতো চোখ নেই, মন নেই, কিছু নেই। তবে অসমাপ্ত উপসংহারে কিছু একটা হয়তো আছে। সেটা যেহেতু অসমাপ্ত, সেটা সময় বিচার করুক। কারণ প্রকৃতি আর সময় কাউকে ছাড় দেয়না। যার যা প্রাপ্য সে সেটাই পায়। হোক সেটা ভালো কিংবা মন্দ। পৃথিবীকে আমরা রঙ্গমঞ্চ বলি। মানুষকে আমরা খেলার পুতুল বলি। আবছা আবছা কুয়াশা ঠেলে রঙ্গমঞ্চের মানুষদের অন্যদের বোকা বানানোর খেলাটা সবাই হয়তো বুঝে। একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কের যে ঝুলন্ত সিঁড়িটা অদৃশ্যমান মন্দ শক্তির উপর ভর করে সুতো দিয়ে গাঁথা হয় সেটাও হয়তো সবাই বুঝে। তবে মৌচাকে কেউ ঢিল ছুড়তে চায়না। কারণ সে ঢিল ছোড়ার মতো মানুষ আর পৃথিবীতে হয়তো অবশিষ্ট নেই।  

মানুষ যে আর এখন মানুষ নেই। স্বার্থপরতা মানুষকে অমানুষ করেছে। মানুষের ভিতরের মানুষকে রাক্ষসের মতো গিলে খেয়েছে। একটা ফাঁপা বেলুনের মতো ফুলতে ফুলতে মানুষ ক্রমাগত মানুষ থেকে মানুষের কেনা দাসে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন দাস প্রথা হয়তো আর নেই। কিন্তু আধুনিক দাস প্রথা তার থেকেও আরও কঠিন। কঠিনের থেকেও কঠিন। সে বহুমাত্রিক দাসত্ব মানুষকে বাণিজ্যিক পৃথিবীতে কাপুরুষ বানিয়েছে। মানুষের আত্মবিশ্বাস, আত্মশক্তি, বিশ্বাস আর সাহসে চিড় ধরিয়েছে। কারণ মানুষের অবচেতন মন বলছে সবটা দেখোনা, সবটার শেষ চেওনা। কারণ যবনিকাপাতের পর্দাটা সরালে মানুষ এমন কিছু দেখবে যা হয়তো সে কখনো ভাবতেও পারেনি।

অসমাপ্ত উপসংহার যদি একটা আয়না হয় তবে সব কঠিনত্বের প্রাচীর ভেঙে মানুষ সে আয়নার কাছে পৌঁছে যাকে দেখবে সে আর কেউ নয়, সে মানুষটা নিজেই। তখন হয়তোবা লজ্জা হার মানবে লজ্জার কাছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর জীবন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থমকে দাঁড়াবে আচমকা। আবেগের একটা অসমাপ্ত অনুভূতি থাকে। যেমন মনে পড়া কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন "মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে একটা কী সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে, মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে। মা বুঝি গান গাইত, আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে; মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে"।  

কিছু কিছু মানুষের চলে যাওয়া একটা অসমাপ্ত উপসংহার হিসেবে থেকে যায়। কারণ যে সন্তান শৈশবে কিছু বোঝার আগে তার মাকে হারিয়েছে সে বুঝে মা না থাকার যন্ত্রনা কতটা গভীর। যাদের মা থাকে তারা সেটা সময় থাকতে বুঝেনা। এখানে মা একটা উপমামাত্র। এমন অনেক কিছুর মূল্য মানুষ সময় থাকতে বুঝেনা। যখন সে অমূল্য সম্পদগুলো জীবন থেকে হারিয়ে যায় তখন হয়তো মানুষ বুঝে সে যা হারিয়েছে সেটা আর চাইলেও ফিরে পাওয়া সম্ভব না। তবে সে বোঝাটা তখন অর্থহীন একটা অতৃপ্তির রোগে মানুষকে ভোগায়। যে রোগের কোনো ওষুধ থাকেনা। চিকিৎসা থাকেনা।

news24bd.tv আয়শা