সিনেমার গল্পকেও হার মানায় তাদের ভালোবাসার গল্প!

সিনেমার গল্পকেও হার মানায় তাদের ভালোবাসার গল্প!

Other

ভাগ্যর নির্মম পরিহাস কখন যে কাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। তবুও জীবন চলে যায় বহমান নদীর মতো। ভাসতেই মানুষ কোনো না কোনো গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আর এই গন্তব্য কারো জন্য হয় সুখের, আবার কারো জন্য দুঃখের।

যে কোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে রাসেল আহম্মেদ ওরফে কাটা রাসেল দম্পতির বাস্তব জীবনের গল্প!

পুরো নাম রাসেল আহম্মেদ (২৬)। কিশোর বয়স থেকে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানো এবং পুরো শরীরে অসংখ্য কাটা দাগের কারণে নাটোর শহরবাসীর কাছে সে কাটা রাসেল বলে পরিচিত। এক সময় এমন কোনো অপরাধ নেই যে সে জড়িত থাকতো না। এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কাটা রাসেল বছরের বেশির ভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।

ছিল ১৪ টির মতো মামলা। এতেই কি একজনের জীবন হারিয়ে যাবে অন্ধকার চোরাগলিতে! উত্তর আসবে, না । প্রচণ্ড বিপর্যয়ের পরেও কেবল তার ইচ্ছাশক্তি দিয়েছে সুন্দর ও স্বাভাবিক একটি জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। যার নেপথ্যে ছিল লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী নামের এক তরুণীর অকৃত্রিম ভালোবাসা। অপরাধ জগতের স্থায়ী বাসিন্দা কাটা রাসেলের সব কিছু জেনেই বিয়ে প্রেম করে বিয়ে করে সাথী । বছর না ঘুরতেই এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তানের। ইতিমধ্যে একটি মামলায় সাজা হয়ে কারাগারে যায় রাসেল। স্বামী জেলে যাওয়ার সময় একটি টাকাও রেখে যায়নি।

সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। কীভাবে আগামী দিনগুলো চলবে তা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। সাথীর জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। প্রতিবেশী এক খালার পরামর্শে অসহায় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে সাথী নাটোর শহরের ফুটপাথে ভাপা পিঠা এবং কালাই রুটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। পাশাপাশি কিছু টাকা জমিয়ে উচ্চ আদালত থেকে স্বামীকে জামিনে বের করে নিয়ে আসে । একমাত্র সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে রাসেল শপথ করে আর কখনো অপরাধমূলক কাজে জড়াবে না । সেই থেকে রাসেল সাথী নিজ মহল্লা মীরপাড়া ছেড়ে শহরের চক বৈদ্যনাথ এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজ শুরু করে । স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বছর তিনেকের মাথায় সংসারে স্বচ্ছলতা আনে ।


কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন তুরস্কের, ভারতের ক্ষোভ

আবারও ইকো ট্রেন চলবে ইরান-তুরস্ক-পাকিস্তানে

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বিজিবির অভিযান, বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার

দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না?


ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটে কাঠের আবাবপত্র বেঁচে ভালোই চলছিল রাসেল দম্পতির জীবন । ইতিমধ্যে রাসেলের কারখানার দিকে নজর পরে শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী বলে পরিচিত মৃত তসলিম উদ্দীনের ছেলে বুদু মিয়া ওরফে কুত্তা বুদু এবং নিরাপত্তা আলমের ছেলে ন্যাড়া সোহেলের । তারা বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে রাসেলের কাছে চাঁদা এবং বাঁকিতে ফার্নিচার দাবি করে আসছিল । রাসেল দম্পতি দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৭ শে মার্চ দুপুরে কুত্তা বুদু এবং ন্যাড়া সোহেলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে রাসেলকে এলোপাতাড়ি মারপিট করা শুরু করে। এ সময় রাসেলকে রক্ষা করতে সাথী এগিয়ে আসলে তাকে সন্ত্রাসীরা শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং বেধড়ক মারপিট করে । পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে ।

এ ব্যাপারে সাথী বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ সোমবার সন্ত্রাসী কুত্তা বুদুকে আটক করে ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইমন আলী নামে এক তরুণ জানান, রাসেল গত ৩/৪ বছর ধরে রাসেল কারো সাথে চলে না । বাড়ি আর কারখানা ছাড়া সে কোথাও যায় না । কাটা রাসেল এবং তাঁর স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করা হলেও তারা টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি । যখন কাটা রাসেল ভালো পথে চলছে ঠিক সে সময় সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটানো ঘটালো ।

রাসেল বলেন, সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে কথা দিয়েছি তাই নিরবে মার খাওয়া করা ছাড়া উপায় ছিল না । মানুষ আসলে আমাকে ভালো হতে দেবে না । আজকে আগের মতো কাটা রাসেল থাকলে এই চুনোপুটিরা টু শব্দ করার সাহস পেত না । তারপরও আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । পুলিশ মামলা নিয়ে প্রধান আসামি কুত্তা বুদুকে আটক করেছে । বাঁকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে ।

নাটোর সদর থানার ওসি(তদন্ত) আব্দুল মতিন জানান, অভিযোগ পেয়েই প্রধান আসামিকে আটক করা হয়েছে । বাঁকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে ।

news24bd.tv তৌহিদ