পুরুষ দলের চেয়ে এই নারীরা অনেক বেশি সম্মান এনে দেবে

পুরুষ দলের চেয়ে এই নারীরা অনেক বেশি সম্মান এনে দেবে

Other

দিনটা ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি। সালটা ২০১৬। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারি সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার দেশে ফিরেছেন কিন্তু কেউ তাকে একটা ফুল দিয়েও স্বাগত জানাতে যায়নি। সেই মাবিয়া যে কী না সাফ গেমসে ভারউত্তোলনে বাংলাদেশে স্বর্ণ এনে দিয়েছিলেন।

 

এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সময় যার কান্না ছুয়েছিল পুরো বাংলাদেশকে। ইউটিউবে গিয়ে ভিডিওটা দেখতে পারেন। এখনো দেখলে আমার কান্না পায়। আর সেই মাবিয়াকে এমন অবহেলা! 

ভীষণ আফসোস ও কষ্ট লেগেছিল।

যে মেয়েটি আমাদের দেশের জন্য এতো সম্মান এনে দিল, জাতীয় সঙ্গীতের সুরে যে মেয়েটি কেঁদে পুরো দেশকে কাঁদালো, আমরা তাকে এটুকু সম্মান জানাতে পারবো না? 

সেদিন জেদ চেপে গিয়েছিল। ঠিক করে রেখেছিলাম আর কেউ না হোক আমি একাই ওকে সম্মান জানাব। মেয়েটার নম্বর জোগাড় করে তাকে প্রথম আলো অফিসে নিয়ে এসেছিলাম। সম্পাদক মতি ভাই থেকে শুরু করে বার্তাকক্ষে সবাই সেদিন তাকে করতালি দিয়ে সম্মান জানিয়েছে। আমরা ফুল দিয়ে পুরস্কার দিয়ে নানাভাবে মেয়েটা পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।  

এর কয়েকদিন পর আমি মাবিয়াদের বাড়িতে যাই। ঢাকার আরেক প্রান্ত খিলগাঁয়ের সিপাহীবাগের ঝিলপাড়ের বস্তির কাছের একটি টিনের বাসায় থাকে মাবিয়ারা। একেবারে আক্ষেরিক অর্থেই বস্তি।  

মাবিয়ার বাবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। তাদের সংসার চলছিল কোনও মতে। সেখান থেকে মাবিয়া জীবনের লড়াই জিতে এতোদূর এসেছে। কারণ মাবিয়াদের মধ্যে আছে অদম্য শক্তি।  

আজকের দিনে কথাগুলো আবার বলিছ কারণ, বাংলাদেশের মেয়েরা টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে আইসিসি। বাংলাদেশের যে মেয়েরা জাতীয় ক্রিকেট বা ফুটবল দলে খেলে তাদের জীবনের গল্পগুলো মাবিয়ার মতোই। নানা সংগ্রাম প্রতিকূলতার মধ্যেই তারা এগিয়েছে। রুমানা, সালমা, আয়েশা, জাহানারা, খাদিজা প্রত্যেকের গল্পগুলো সাহসের। লড়াইয়ের। আমি মনে করি বাংলাদেশের পুরুষ দলের চেয়ে এই নারীরা অনেক বেশি সম্মান এনে দেবে।  

শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশের কিশোরি মেয়েরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে গেছে ফুটবলেও। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের মেয়েরা হংকংকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক যুব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতেছে ৬-০ গোলে। অথচ এই মেয়েদের লড়াইয়ের গল্পগুলো ‍শুনলে বোঝা যায় কী অদম্য লড়াইটা তারা করেছে।  


হেফাজতের বিক্ষোভ, পুলিশের রাবার বুলেট-লাঠিচার্জ, আহত ১৫

নৌ পথে আগের মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন, অথচ ভাড়া বৃদ্ধি

ভ্যানে চাকায় ওড়না পেচিয়ে স্কুলছাত্রীর করুণ মৃত্যু

দেশে করোনা শনাক্তে ফের রেকর্ড


ময়মনসিংহের কলসন্দিুররে ফুটবলার সাবিনা তো জ্বরেই মারা গেল। কৃষ্ণা, সানজিদা, তহুরা, মারিয়া, অনুচিং, আনাই, শামসুন নাহারসহ সবার গল্পই কম বেশি এমন।  

আজ সকাল থেকে মন খারাপ এয়ারপোর্টের আট মাসের মেয়ে শিশুটার জন্য। কতোটা অসহায় হলে বাংলাদেশের একটা মেয়ে বিদেশে যায়, কতোটা অসহায় হলে আট মাসের সন্তানকে এয়ারপোর্টে ফেলে যায়। দেশে ফেরার পর এই মেয়েগুলোর টিকে থাকার লড়াই যে কী ভয়ঙ্কর!

শুধু বিদেশ ফেরত বলছি কেন, দেশেই তো নিয়মিতভাবে নারী নিপীড়ন বা ধর্ষনের ঘটনা নিয়মিত ঘটে। এই যে দারিদ্র, ধর্মীয়-সামাজিক অবস্থা এতো কিছুর মধ্যেও  আমাদের মেয়েরা যেভাবে লড়াই করে সেটা অসাধারণ! 

আমি সবসময় বলি আমাদের মেয়েদের সহযোগিতা করার দরকার নেই, শুধু যদি আমরা প্রতিবন্ধকতা না তৈরি করতাম, তাহলেই মেয়েরা বিশ্বজয় করতো। শুভ কামনা নারী ক্রিকেট দলের জন্য। শুভ কামনা সব মেয়েদের জন্য। সব মায়েদের জন্য। ভালো থাকুক প্রতিটা মেয়ে। প্রতিটা মানুষ। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।

শরিফুল হাসান, উন্নয়ন কর্মী

news24bd.tv / কামরুল