নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে ভেসে ছিলেন সেই লঞ্চের কিছু যাত্রী

নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে ভেসে ছিলেন সেই লঞ্চের কিছু যাত্রী

অনলাইন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (০৪ এপ্রিল) রাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা মো. রায়হান।

তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ও নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যেয়, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।


দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ

বাগেরহাটে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে আহত ছাত্র হাসপাতালে

সৌদি যুবরাজের খেজুর খাওয়ার মতো গরীব বাংলাদেশে নেই

শেরপুরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইনে প্রাণ গেল কিশোরের


রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে আসা এমভি রাবিত আল হাসান নামের ছোট দোতলা লঞ্চটিতে ওঠা যাত্রীদের বেশির ভাগই মুন্সিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। নির্মিতব্য তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু কাছে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে মানুষ জড়ো হন মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে।

লঞ্চডুবির পর প্রাণে বেঁচে ফেরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শায়ের আহমেদ (২৫) বলেন, রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ চলছে তাঁর। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ শহরের খালইস্ট এলাকায়।

প্রতিদিনই হাসপাতালের ডিউটি শেষে বাসে নারায়ণগঞ্জে, সেখান থেকে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ আসেন। লঞ্চে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। রোববার সন্ধ্যায় তিনি রাবিত আল হাসান নামের ছোট লঞ্চটিতে ওঠেন। নৌযানটি মুক্তারপুর সেতুর কাছে এলে পেছন থেকে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি কাত হয়ে যায়। চিকিৎসক শায়ের আহমেদ ত্বরিত সিদ্ধান্তে প্যান্ট, জামা, জুতা খুলে নদীতে ঝাঁপ দেন। এরপর সেখানে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে কিছুক্ষণ ভেসে ছিলেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

বেঁচে ফেরা শায়ের আহমেদ বলেন, অন্য দিন লঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী থাকে। তবে রোববার সন্ধ্যার ওই লঞ্চে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। লকডাউনের কারণে অনেকে মুন্সিগঞ্জের গ্রামে ফিরছিলেন।

বেঁচে ফেরা যাত্রী মো. মারুফ (১৭) শোনালেন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ব্যাপারে, সে জানায়, সে নারায়ণগঞ্জের মাছের আড়তে কাজ করে। লকডাউনের কারণে বরিশালের স্বরূপকাঠিতে গ্রামের বাড়ি ফেরার জন্য বড় লঞ্চ ধরতে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল সে। সন্ধ্যা ছয়টার কিছু আগে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ছাড়ে রাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি। সোয়া ছয়টার দিকে লঞ্চটি নির্মিতব্য তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে পৌঁছায়। এ সময় পেছন থেকে বড় একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। দোতলা লঞ্চটির নিচতলায় ছিল মারুফ। বাল্কহেডের ধাক্কায় লঞ্চটি কাত হয়ে গেলে মারুফ জানালা দিয়ে বের হয়। ধাক্কার পর নৌযানটি আধা মিনিটের মতো ভেসে ছিল, ততক্ষণ সে লঞ্চের ওপরই দাঁড়িয়েছিল। তখন লঞ্চের ভেতর থেকে অনেকেই তার পা জড়িয়ে ধরেন। কোনো রকমে পা ছাড়িয়ে সে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার ধরে ভেসে থাকে। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। চোখের সামনে বহু মানুষকে তলিয়ে যেতে দেখে আক্ষেপ করছিল এই কিশোর।

স্বজন দের খোঁজে নদীর তীরে বসে আহাজারি করছিলেন মিনু বেগম (৬০)। তিনি বলেন, তাঁর পুত্রবধূ বিথি আক্তার (২৫), নাতনি আরিফা (১ বছর) ও বিথির মা ওয়াকিদা বেগম (৫০) ওই লঞ্চে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁদের সবার ফোন বন্ধ। শিশু আরিফাকে ডাক্তার দেখাতে নারায়ণগঞ্জের পপুলারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে সবাই নিখোঁজ।

স্বামী লোকনাথ দাসকে (৩৮) খুঁজতে আসা বিপাশা আহাজরি করতে করতে বলেন, লোকনাথ মুন্সিগঞ্জের একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করেন। দুপুরের দিকে কাজে নারায়ণগঞ্জে যান লোকনাথ। পাঁচটার পর জানান তিনি লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ ফিরছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে লোকনাথের ফোন বন্ধ। এরপর কেবলই আহাজারি করছিলেন বিপাশা।

news24bd.tv তৌহিদ