এইগুলান মাওলানা মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয়,  আসেন হেফাজতের ১৩ দফায় নজর বুলাই

আজম খান

এইগুলান মাওলানা মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয়, আসেন হেফাজতের ১৩ দফায় নজর বুলাই

অনলাইন ডেস্ক

সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টকাণ্ডে রিসোর্টকাণ্ডে বিতর্কিত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এটিকে তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছেন সংগঠনটির আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। আজ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি বৈঠকের পর এ সব কথা বলেন তিনি।

আল্লামা বাবুনগরীর এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ লেখালেখি চলছে।

মাওলানা মামুনুলের রিসোর্ট কাণ্ড, তার দ্বিতীয় বিয়ে ও হেফাজত ইসলামের ১৩ দফা নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক আজম খান।  

তার স্ট্যাটাসটি নিউজ টোয়েন্টিফোর বিডি ডট টিভির পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:-

‘হেফাজত অফিশিয়াল বক্তব্য দিছে রিসোর্ট কাণ্ড, মামুনুলের দুনিয়াতেই জান্নাতুল ঝর্না, জান্নাতুল ফেরদৌস ভোগের ব্যাপার নিয়ে। তারা বলেছে এইগুলান মামুনুল হকের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু অন্যদের যা ব্যক্তিগত ব্যাপার তা আবার তাদের ব্যাপার।

এইটা হেফাজতের ১৩ দফার দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়। আসেন একে একে নজর বুলাই।  

১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।

 এই সংবিধান তো হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-নাস্তিকদের জন্যও। মানে হইলো আপনাকে তাই বিশ্বাস করতে হবে যা তারা বিশ্বাস করে এবং রাষ্ট্রীয় সংবিধান তাদের মত করে হতে হবে।   বাদবাকিরা এখানে ধইঞ্চা।  

২. আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।

মানে হইলো আপনি ততটুকুই কথা বলতে পারবেন যতটা তারা আপনাকে বলতে দিবে।  

৩. কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।

মানে হইলো তাদের বিশ্বাস, মতের বিপরীতে যায় এমন সবাইকে ঝুলায়ে দেও। ফ্যাসিজম এবং ফ্যাসিস্ট কাকে বলে এইটা বুঝার জন্য তাদের এই তিন নাম্বার ধারাটা কোন এক সময়ে খোদ বাংলাদেশেই একাডেমিক টেক্সট বইগুলাতে পড়ানো হবে। যদি আরো কয়েক দশক বেঁচে থাকেন তবে আশা করি দেখতে পারবেন।  

৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।

এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি ব্যাক্তিগত জীবনে-আচারে মোমবাতি জ্বালাবেন নাকি হারিকেন জ্বালাবেন সেই সিদ্ধান্তও তাদের থেকে নিতে হবে। কার সাথে ঘুরবেন, কেমনে ঘুরবেন সেইটার অনুমোদনও তাদের থেকে নিতে হবে। মানুষ হিসাবে আপনার এখানে কোন ভুমিকা নাই। আপনি লেসার হিউম্যান তাদের তুলনায়।  

৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।

আপনি কি পড়বেন না পড়বেন সেইটাও তারা ঠিক করে দিবে। যদিও বাস্তব দুনিয়ার জটিলতা সম্পর্কে তাদের দুরতম ধারনাও নাই।   আধুনিক অর্থনীতির অনেকগুলো বেসিক কনসেপ্টের একটা হচ্ছে, যেসব দেশের নারীরা অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয় সেসব দেশ দ্রুত উন্নতি করে। এই ছাড়া সরকারের নারীনীতি গুলো আন্তর্জাতিক নানা দেশ, প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত। যেমন, বানিজ্য সুবিধা, নানা আন্তর্জাতিক ইকোনমিক ফোরামে যোগদানের পূর্ব শর্ত হিসাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাষ্ট্রীয় নারীনীতিসহ নানা খুঁটিনাটি বিষয় যুক্ত থাকে। এই বিষয়গুলোতে তাদের ধারনা নেই বললেই চলে।

৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।

কে মুসলমান হইতে পারবে আর কে পারবে না এই সার্টিফিকেটও তাদের কাছ থেকে নিতে হবে।  

৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।

আপনের শিল্প রুচি, আকাঙ্ক্ষা এসবও তারাই ঠিক করে দিবে। আজকে ক্ষমতা নাই বলে ভাস্কর্যের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা পাইলে যাবে আপনার টিভির উপর দিয়ে।  

৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।

মানে হইলো তাদের ইনডেমিনিটি দিতে হবে। তারা ছাড়া বাকিরা রাষ্ট্রীয় আইন মানতে বাধ্য। তারা এসবের ধার ধারে না।  

৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।

নাট্যকার কেমন নাটক লিখবে, নাটক কেমন হবে সবই তারা ঠিক করে দিবে। আপনি সাক্ষী গোপালের মতন টিভির সামনে বসে দেখে যাবেন।  


মাওলানা মামুনুল হকের বিষয়কে ব্যক্তিগত বললেন বাবুনগরী

মাওলানা রফিকুল মাদানীর নামে আরেকটি মামলা, আনা হলো যেসব অভিযোগ

দেশে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত ৫ হাজার ৮১৯ জন


১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।

তারা একলাই ধর্ম প্রচারের অধিকার রাখে। বাকিরা রাখে না। সোজা কথায় এই ধারার মানে এইটাই দাঁড়ায়।  

বাকি ৩টা ধারা এতটাই সিলি যে সেইগুলান আলোচনা করতে রুচিতে আসলো না।  

যাই হোক, সব ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা হেফাজতের ইসলামের লোকজনের জন্য। আপনার জন্য আছে আইট্রা কলা। যেহেতু তারা কোরান-হাদিসের স্কলার তাই তারা যা বলবে অনুগত দাসের মতন আপনাকে তাই করতে হবে। স্বাধীন মানুষ হিসাবে গর্ব করার মতন কোন লিবার্টি তারা আপনাকে দিবে না। এই জন্যই এইগুলারে টাইম নাই বলে দিছি। আই এম নোবডিজ স্লেভ। ’

news24bd.tv নাজিম