এখনও পুরুষশূন্য সালথার কয়েক গ্রাম

এখনও পুরুষশূন্য সালথার কয়েক গ্রাম

অনলাইন ডেস্ক

লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে ৫ মামলায় পুলিশি অভিযানের কারণে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম এখনও পুরুষশূন্য হয়ে আছে। গত তিন ওই সব এলাকার বাড়ি-ঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া কোনো সদস্য দেখা যায়নি। বাড়ির নারী ও শিশুদের চোখে মুখে এখনও ভয়ের ছাপ। এখনও এলাকার পরিস্থিতি থমথমে।

বাইরের কোনও মানুষ দেখলেই তারা ভয়ে দৌড়ে সরে যাচ্ছেন। সেই হামলার ঘটনায় জড়িত অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই, কিন্তু পুলিশের হয়রানির শিকার হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় অনেকে পালিয়ে আছেন।

ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম জানান, সব সময় ভয়ে থাকি।

আমাদের এখন পুলিশ দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোন পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে পালিয়ে রয়েছে।

সালথা উপজেলার ভাওয়াল, সোনাপুর,ও রামকান্তুপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের চিত্রই এখন এমন। সব গ্রামই গ্রেফতার আতঙ্কে কার্যত পুরুষশূন্য।

ভাওয়াল, সোনাপুর,ও রামকান্তুপুর  এসব গ্রামের অনেককে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় আসমি করা হয়েছে। আসামি গ্রেফতার প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ওই সব গ্রামের হাটবাজার, মাঠ, বাড়িঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

এলাকার কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। নারীরা বাড়িতে আছেন, তারাই বাজার করছেন। সব মিলিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।

নুরজাহান নামে একজন জানান, ওইদিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করছে। আমাদের গ্রামের কোনো লোক ওই দিনের হামলায় ছিল না। এখন তো কোনও পুরুষই এলাকায় নেই ভয়ে।

মনির নামে একজন জানান, বালিয়া গট্রি এলাকা ও উপজেলা কেন্দ্রীক এলাকার বাড়িগুলোতেও কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক অবস্থায় রয়েছে। কখন কি হয় কেও বলতে পারে না। তাই সবাই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

সোনাপুর ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বলেন, এই ইউনিয়নের গ্রামগুলো এখন পুরুষশূন্য।   অনেকেই ফোন করে জানতে চাই গ্রামে আসবে কিনা। আমি এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে এর কোনও উওর দিতে পারি না। কারণ আমি  গ্রামে আসতে বলার পর যদি পুলিশ আটক বা গ্রেফতার করে তাহলে তো বলবে আমিই পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।

৫ এপ্রিলের সালথার সেই তাণ্ডবের পর এই পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ২৬১ জনকে ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে যে কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেন বলে আতঙ্কে আছে।

নগরকান্দা সালথা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমিনুর রহমান বলেন, সে দিনের সেই সহিংসতায় যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পুলিশ চায় না কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হোক। পুলিশ চাইছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এখানে যে ভয়াবহ ঘটনা সে দিন ঘটছে তা স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকেলে সালথার ফুকরা বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এসিল্যান্ডের গাড়িতে থাকা সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের। এরপরই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ সালথা উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।

news24bd.tv/আলী