নিকৃষ্টতম সমাজেও “সেশন-জট” বলে কোন শব্দ নাই

রউফুল আলম

নিকৃষ্টতম সমাজেও “সেশন-জট” বলে কোন শব্দ নাই

Other

স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে যখন গবেষণা শুরু করলাম, আমার বয়স তখন উনত্রিশ। আমি লক্ষ করলাম, ল‍্যাবের অন‍্যান‍্যদের বয়স চব্বিশ-পঁচিশ। এই বিষয়টা আমাকে খুবই কষ্ট দিতো। আমার মাঝে মাঝে অসম্ভব খারাপ লাগতো।

ল‍্যাবের যে পোস্টডক স্টুডেন্ট আমাকে শুরুর দিকে গাইড করতো, তার বয়স ছিলো আমার সমান। তার নাম পিলারস্কি।  

এখন সে সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। কাজের আগ্রহ ও অগ্রগতি দেখে, এই ছেলেটা আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলো, আমি কেন দেরি করে কাজ শুরু করেছি।

আমি তাকে বহুবার সেশন-জট বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করে ব‍্যর্থ হয়েছি।  

আমার প্রফেসরও আমাকে একই কথা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলো। তাকেও বুঝাতে পারিনি। সেশন-জট আমার জীবন থেকে প্রায় চার বছর গায়েব করে দিয়েছে। সেই সময়গুলো খোয়া না গেলে হয়তো আরো এগুতে পারতাম। গর্ব করে বলছি না (ক্ষমা করবেন), প্রসঙ্গত বলছি, সেসময়ে আমার প্রফেসরের গ্রুপে বেস্ট কাজ এবং বেস্ট পাবলিকেশন করেছিলাম আমি। পিএইচডির দুই বছর যেতেই আমার থিসিস ডিফেন্স করার মতো পাঁচটা পাবলিকেশন ছিলো (JACS & ACIE সহ)।  

আমাদের দেশের অসংখ‍্য ছেলে-মেয়ের ভিতর একটা অফুরান আগ্রহ থাকে। সুপ্ত একটা জেদ থাকে। নেশা থাকে। লেগে থাকার শক্তি থাকে। এটা আমরা বের করে আনতে পারিনা। আমাদের ছেলে-মেয়েদরকে তো আমরা তেমন কোন সুবিধা দিতেই পারিন না, উপরন্তু জীবন থেকে সময় খেয়ে ফেলি। দুনিয়ার কোন নিকৃষ্টতম সমাজেও “সেশন-জট” বলে কোন শব্দ নাই। আমাদের দেশে এখনো আছে। জেলায় জেলায় ইউনিভার্সিটি খুলছি, আর ছেলে-মেয়েদের “সেশন-জট” উপহার দিচ্ছি। জাতীয় বিশ্ববিদ‍্যালয়ের কথা তো বলাই বাহুল‍্য!  


৮ দিনের লকডাউন শুরু, রাজধানীর সড়কে সুনসান নীরবতা

সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

করোনাবিধ্বস্ত জনপদে উৎসবহীন পহেলা বৈশাখ আজ

ফের বিয়ে করলেন কণ্ঠশিল্পী পুতুল


সেশন-জটের কারণে আমাদের অসংখ‍্য স্টুডেন্টদের স্পিরিট নষ্ট হয়ে যায়। পরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে যায়। মটিভেশনটাই ধূলোয় মিশে যায়। এটা বন্ধ করতে হবে, সব প্রতিষ্ঠান থেকে।    

স্টুডেন্টদেরকে বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখান। তাদেরকে দুনিয়ায় ছড়িয়ে যেতে বলুন। তারা যখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে তখনই বলুন, যাদের উচ্চতর গবেষণার আগ্রহ আছে, তারা যেনো মাস্টার্স করে সময় নষ্ট না করে। বিদেশে গিয়ে মাস্টার্স করতে বলুন। বহু স্টুডেন্ট এখন কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, জাপান, ইরান, তুরস্ক—এসব দেশে গিয়ে মাস্টার্স করে পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা ও পথ খুঁজে পায়। বহু ছেলে-মেয়ে এখন ব‍্যাচেলর শেষ হওয়ার আগেই জিআরই-টোফেল দিয়ে নর্থ আমেরিকায় চলে আসছে। স্টুডেন্টদের এই গতিস্রোতটাকে আরো জাগিয়ে দিন।  

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সমাজে গবেষণায় একটা রেভুল‍্যুশনের প্রস্তুতি পর্ব চলছে। এবং সেই প্রস্তুতি পর্বে অসংখ‍্য ছেলে-মেয়েকে দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই হবে। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। কারণ দেশে বসে তো ওরা কাটিং-এজ গবেষণার কিছুই শিখতে পারবে না। সুতরাং তাদের জীবনের সময়টুকু বাঁচিয়ে তাদেরকে বেড়িয়ে পড়তে সর্বাত্বক সহযোগিতা করুন। বিশ্বমানের তারুণ‍্য ছাড়া, বিশ্বমানের সমাজ কখনো গড়া যায় না। অসম্ভব! 

রউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।

news24bd.tv নাজিম