আমি তখন সবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ জয়েন করেছি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এর এ নিউজ প্রেজেন্টার। ইন্টারন্যাশনাল পিস কনফারেন্স এর দুটো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার দায়িত্ব আবেদ ভাই (সম্পাদক আবেদ খান) দিয়েছেন আমাকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাপনী অনুষ্ঠান কোন একটা পাচতারা হোটেলে। প্রধান অতিথি সে সময়ের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে রথি-মহারথীদের সমাগম। আমি নিরীহ গোবেচারার, কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হোটেল লবিতে একা বসা।
মরুভূমির বুকে যেন হঠাৎ মহাসাগর আবিষ্কার করলাম। প্রায় ছুটে গিয়ে ঘিরে থাকা লোকজনের মাঝেই সালাম দিয়ে আমার পরিচয় ( আব্বা আম্মার নাম ) বললাম। ওনার প্রতিক্রিয়া ছিল অভাবনীয়। মনে হল মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাতিজিকে খুজে পেলেন। তাড়াহুড়ো করে সবাইকে বিদায় করে আমাকে নিয়ে এক কোনায় বসলেন। আব্বা আম্মা, বাসার সবার খোজ খবর নিলেন। অনেক কথা বললেন সেদিন। ওনার ছোট সন্তান ওয়াসিফ তখন বিয়ে করেছে, বড় সন্তান মুনমুন তখনও বিয়ে করেনি। এটাই ছিল দীর্ঘ আলাপের মূল বিষয়। আমি পড়েছি বেকায়দায়। কোন ভাবেই চাচার হ্যা তে হ্যাঁ মিলাতে পারছিলাম না। মুনমুনের একাডেমিক ইয়ারে এক বছরের সিনিয়র আমি। আমি নিজেই তখনও বিয়ে শাদি করিনি!
এক পর্জায়ে অনেকটা পুলিশের সামনে চোরের মতো চেহারা করে বললাম-চাচা আমি এখনো বিয়ে করিনি । চাচার মুখটা তখন দেখার মতো হয়েছিল। এতক্ষণ উলু বনে মুক্ত ছড়িয়েছেন তা বেশ ভালোই বুজেছিলেন। বিদায় নেবার সময় বারবার বাসায় যেতে বলেছেন। বলেছেন যোগাযোগ রেখ, তাড়াতাড়ি বিয়েটা করো।
কী অসাধারণ স্নেহপরায়ণ মানুষ ছিলেন!
কী অসাধারণ প্রজ্ঞা। গত কদিন ধরেই তার শারিরীক অবস্থা আশংকামুক্ত ছিল না। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনায় তার নাম বলেছি বারবার।
সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে আজ চলে গেলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মতিন খসরু। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। ওপারে ভালো থাকবেন, চাচা।
আপনার অসাধারণ কর্মমুখর বর্ণাঢ্য জীবন আর ঈর্ষণীয় সফল দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।
মুনমুন,ওয়াসিফকে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। এই শোক সইবার ক্ষমতা মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যেন দেন। আমীন।